শনিবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২৩ ১৪৩২   ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাংলাদেশ সোসাইটির জমকালো সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৩৯ এএম, ৮ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার


 
জমকালো আয়োজনে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি বা সুবর্ণ জয়ন্তী উৎযাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাদার সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’। গত ২ নভেম্বর নিউইয়র্কে অভিজাত ‘টেরেস অন দ্য পার্ক’-এ অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে এক মঞ্চে হাজির হন ৫০ বছর ধরে সোসাইটিকে নেতৃত্ব সাবেক নেতৃবৃন্দ। পুরনো ও নতুন প্রজন্মের এক হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি অনুষ্ঠানস্থল প্রবাসীদের মিলনমেলায় পরিণত। 
৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানের অপরূপ সাজসজ্জা, সুন্দর ও তথ্যবহুল স্মরণিকা প্রকাশ, বিশিষ্টজনকে এওয়ার্ড প্রদান, নতুন প্রজন্মের অনুভূতি, মনোরম নৃত্য, শ্রুতিমধুরু দেশীয় সংগীত পরিবেশনাসহ নানা আয়োজনে বাংলাদেশিদের মনে দাগ কাটে এ মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়। পরে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়া এই সংগঠনের প্রয়াত সব নেতৃবৃন্দ ও  সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
‘আমি বাংলায় গান গাই’র সাথে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যায়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের আহবায়ক এবং বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন দেওয়ান।
এরপর প্রবাসে বাংলাদেশের ঐক্য, সংস্কৃতি ও কমিউনিটির উন্নয়নে অবদানের জন্য জন ৬ গুণী ব্যক্তি ও সংগঠনকে ‘সোসাইটির অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- সাংবাদিকতায় সৈয়দ মুহাম্মদ উল্লাহ, সমাজকর্মে জীবন উৎসর্গ করা কামাল আহমেদ (তার কন্যা রুমানা আহমেদ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন), ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সাইদুর রহমান ডন, সাংস্কৃতিক সংগঠক সেলিমা আশরাফ, শিক্ষা বিস্তারে মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী, সংগঠক কাজী আজহারুল হক মিলন এবং বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির সন্তানদের টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ২৫ বছর যাবত কর্মরত ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’।
এরপর নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার কমিউনিটি সার্ভিসে অবদানের জন্যে বাংলাদেশ সোসাইটি এবং এর শীর্ষ নেতৃত্বকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। কুইন্স বরো প্রেসিডেন্টের অফিস থেকেও সাইটেশন প্রদান করা হয়। এ সময় বিপুল করতালির মাধ্যমে সংগঠনের কাজের স্বীকৃতি উৎযাপন করেন সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ বলেন, অর্ধ শতাব্দীর পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ সোসাইটি অনন্য অবস্থানে পৌছেছে, যা সবার গর্ব এবং ভালোবাসার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। যা প্রবাসীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টর অংশ।
নতুন প্রজন্মের অনুভূতি প্রকাশ পর্ব ছিল অনন্য। অনুভূতি প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন হার্ভার্ড থেকে গ্র্যাজুয়েট নামিরা মেহেদি এবং ভিক্টর ঘোষ, সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা-প্রশাসনে উচ্চতর ডিগ্রি অ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন করা আনিকা জেবা। নিউইয়র্কের বাঙালিদের অবস্থান বিশেষভাবে সমাদৃত হয় বলে তারা সহকর্মী-বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলার সময় এক গৌরবে উজ্জীবিত হন বলে জানান।
সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি ডা. হামিদুজ্জামান বলেন, সোসাইটিতে বিশেষ করে কার্যকরী কমিটিতে নতুন প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তারাই মূলধারয় কমিউনিটিকে তুলে ধরতে পারবে।
সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি ডা. মইনুল ইসলাম মিয়া বলেন, আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গৌরবময় মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম বলেন, আসুন ঐক্য, ভালবাসা এবং দেশপ্রেমের শক্তিতে বাংলাদেশ সোসাইটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই আগামী প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল ও গর্বিত ভবিষ্যতের পথে।
সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন নতুন প্রজন্ম ঐতিহ্য ধারণ করে আরো আধুনিক ও কার্যকর বাংলাদেশ সোসাইটি গড়ে তুলবে, যা শুধু প্রবাসে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশি কমিউনিটির মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
শারমিনা সিরাজ সোনিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন সাবেক সভাপতি ডা. বিল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন উপস্থিত ছিলেন ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম. এম. শাহীন, ফোবানার চেয়ারপারসন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ, এটর্নি মঈন চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির আজীবন সদস্য ও মূলধারার রাজনীতিক আকতার হোসেন বাদল, বিএনপি নেতা মো. গিয়াস উদ্দিন, রিয়েলটর নুরুল আজিম, মিডোব্রুকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আকিব হোসেন, আবাসন ব্যবসায়ী মোর্শেদা জামান প্রমুখ।
এ উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বাদশা বুলবুল, প্রতীক হাসান, রানো নেওয়াজ, কালা মিয়া, শাহ মাহবুব, অনিক রাজ, হাসান নীলু প্রমুখ।
সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘অগ্রপথিক’ নামের স্মরণিকা সম্পাদনা করেন সাহিত্য সম্পাদক আখতার বাবুল। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ।
সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন- সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সহ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ভুইয়া, কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া রুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক ডিউক খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক আশ্রাব আলী খান লিটন, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান জিলানী, কার্যকরী সদস্য হারুন অর রশিদ, জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মোহাম্মদ সিদ্দিক পাটোয়ারী, আবুল কাশেম চৌধুরী, মুনসুর আহমদ ও হাছান খান প্রমুখ।