শনিবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২৩ ১৪৩২   ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

‘জগাখিচুরি’ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন অনিশ্চিত

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৩৮ এএম, ৮ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার



বাংলাদেশে এই মুহূর্তে রীতিমত ‘জগাখিচুরি’ অবস্থা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কার্যক্রম সমাপ্ত করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তথ্য মোতাবেক, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে কার্যক্রম শুরু করার পর ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করার পর ড. আলী রিয়াজ বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার বদলে আরও বিভক্ত করেছে। দৃশ্যত, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুরভিসন্ধিমূলক এই কারণে যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনের নামে কালক্ষেপন করার সুপ্ত বাসনা থাকলে থাকতেও পারে। সাংবিধানিক পথকে উপেক্ষা করে ‘স্বয়ংক্রিয়’ পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনার নামে জগাখিচুরিতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবার চেষ্টা চলছে। এমন প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত।
বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে। জামায়াতের ডেপুটি আমির আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে রীতিমত হুমকির সুরে বলেছেন, নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন করতে হবে। এই মাসে তা করতে ব্যর্থ হলে আঙুল বাঁকা করা হবে। আঙুল বাঁকা করা বলতে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার মতো বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন কিনা সেটা বিবেচ্য বিষয়। জুলাই সনদ নামের যে সনদ প্রস্তুত করেছে ঐকমত্য কমিশন সেটার চূড়ান্ত রুপ দিতে গিয়ে ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। অর্থাৎ অনেক প্রস্তাবে আপত্তি করা হয়েছে। এই সকল আপত্তিসহ জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের ব্যাপারে সবাই একমত হলেও আলী রিয়াজ সেখান থেকে আপত্তি মুছে দেন। দ্বিতীয়ত, তিনি স্পষ্ট করেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ একটা সময়সীমার মধ্যে জুলাই সনদ পাস করাতে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবিত জুলাই সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে। এই প্রস্তাবটি অভিনব। কেউ পরীক্ষায় ফেল করলে অটোপাস হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা !
সংবিধান সংশোধন কীভাবে করতে হয় সে কথা সংবিধানের মধ্যেই লেখা আছে। এই পদ্ধতির বাইরে গিয়ে তথাকথিত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সংবিধান সংশোধনের কিছু করা হলে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হলে তা বাতিল হয়ে যাবে। ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী একসঙ্গে লড়াই করলেও এখন দুই দল পরস্পরের বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বিপুল বিজয় লাভ করার পর পরই জামায়াত ক্ষমতায় যাওয়ার আশা করা শুরু করে।
বিএনপি এখন আর জামায়াতকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল। উগ্রপন্থী ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিছু বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জামায়াত ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি’র এই দেরীতে বোধোদয়ও অভিনব। কারণ বিএনপি-জামায়াত একত্রে বহুবছর সরকারে ও আন্দোলনের মাঠে ছিলো। ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি দৃশ্যত জামায়াতের সঙ্গে থাকবে। গণভোট আগে হলে তাতে জাতীয় নির্বাচনের জন্যে ঝুঁকি দেখছে বিএনপি।
সংস্কারে অগ্রগতি কম হওয়ার জন্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও দায়ী করছেন অনেকে। তারা মনে করেন, ইউনূস সংস্কার বোঝেন না। এনজিও চালানো এবং দেশ চালানো এক জিনিস নয় এটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন ইউনূস। গত বছর শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের আন্দোলন সমাপ্ত হতেই ইউনূস পর্দার আড়াল থেকে আর্বিভাব হন। যেন কোনও বিদেশী প্রভুর নির্দেশে তিনি তাদেরই পরামর্শে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। এই সকল উপদেষ্টা দেশে স্বাভাবিক পথে গণতন্ত্রে উত্তরণের বিপরীতে কাজ করছেন বলে অনুমিত হয়।