আদালতেই বিয়ানীবাজার সমিতির ভাগ্য নির্ধারণ
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:১১ এএম, ১ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার
বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ ইনকের নির্বাচন ভেস্তে গেল। কিন্তু ২৬ নভেম্বর নির্বাচনের শিডিউল থাকলেও আদালতের আদেশে আটকে গেছে। আদালত পরবর্তী শুনানি না করা পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত করেছেন। শুনানির দিন ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গত ২৩ অক্টোবর আদালত নির্বাচন স্থগিত করেন। আদালত দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিরসন করার সুযোগ দেয়। এখনো দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
উভয় পক্ষই সমঝোতার পথকে উন্মুক্ত রেখেছে। দুই পক্ষের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হয়, তাহলে অপেক্ষা করতে হবে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত। ঐতিহ্যবাহী বিয়ানীবাজার সমিতি মামলার বেড়াজালে পড়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। সূত্র জানায়, মূলত ভোটারসংখ্যা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে গত ৬ অক্টোবর মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হচ্ছেন বিয়ানীবাজার সমিতির সদস্য ও সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান সাবু ও বোরহান উদ্দিন কপিল, সাবেক সহসভাপতি ফয়েজুর মিয়া, সদস্য মঈনুজ্জামান চৌধুরী ও মোহাম্মদ এস উদ্দিন। মামলায় বিবাদী করা হয় বিয়ানীবাজার সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম অপু এবং নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আজিমুর রহমান পাখি, কমিশনের সদস্য শামীম আহমেদ, আমিনুল হোসেন, বজলুর রহমান ও আব্দুল জলিল চৌধুরীকে। মামলাটি প্রাথমিকভাবে আমলে নিয়ে নির্বাচন-সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করেন কুইন্স কোর্টের বিচারক।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম অপু (নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য অব্যাহতি নেওয়া) বলেন, যে অভিযোগ এনে এই মামলাটি করা হয়েছে, এভাবে বিগত দিনে প্রায় সব নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গত নির্বাচনে ১২০০ ডাবল ভোটার ছিল এবং বিগত দিনের নির্বাচনেও এক ফোন নাম্বারে একাধিক ভোটার রেজিস্ট্রেশনের অনেক নজির রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে সংগঠনকে এভাবে মামলা-মোকদ্দমার গ্যাঁড়াকলে ফেলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হয়েছে, সেটা বড় প্রশ্ন। অপু বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার প্রতি বিয়ানীবাজারবাসীর অফুরন্ত ভালোবাসা দেখে ভোটার লিস্ট সম্পাদনায় সমিতির সভাপতি এবং দপ্তর সম্পাদক যুক্ত থাকলেও কেবল আমাকে বিবাদী করা হয়েছে, যেটা নিঃসন্দেহে হিংসার বহিঃপ্রকাশ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আজিমুর রহমান পাখি বলেছেন, মামলা হওয়ার পর আমাদের জবাব দেওয়ার জন্য আদালত তারিখ দেয়। সেই অনুযায়ী আমাদের জবাব দেওয়ার কথা ছিল। আমাদের অ্যাটর্নি নির্ধারিত সময়ে জবাব দিয়েছেন। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই মামলা-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসীসহ সবার কাছে তুলে ধরব।
মামলার অন্যতম বাদী মঈনুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমরা ভোটার তালিকায় কয়েক শ ডাবল ভোট দেখেছি, এক ফোন নম্বরেও কয়েক শ ভোট দেখেছি। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে পরপর তিনটি চিঠি দিয়েছি কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চলতি সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদালতের আদেশ অনুযায়ী ২৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। আমরা সকল প্রার্থীর প্রতিও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি, কারণ আমরা জানি তারা এই নির্বাচনের জন্য কতটা সময়, শ্রম ও আন্তরিকতা উৎসর্গ করেছেন। তবে আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই এই নির্বাচন স্থগিত হওয়া কোনো শেষ নয়। এটি সাময়িক বিলম্ব মাত্র। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা এই পরিস্থিতির জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং সকল সদস্য, ভোটার ও প্রার্থীদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের আইনজীবী দল বর্তমানে মামলাটির ওপর কাজ করছে এবং আমরা আশাবাদী, শীঘ্রই একটি ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে ওজনপার্কে যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ানীবাজারবাসীর পক্ষ থেকে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বক্তারা বিয়ানীবাজার সমিতিতে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, ভোটার তালিকার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনটি আবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আবেদনগুলো আমলে না নিয়ে বিষয়টিকে জিইয়ে রাখে। তারা আবেদনগুলো পাওয়ার পর যদি সমস্যার সমাধান করতেন, তাহলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াত না। বক্তারা আরও বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মূল উপাদান হচ্ছে নির্ভুল ভোটার তালিকা। একজন ভোটারের একাধিকবার ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই। অতীতে হয়ে আসছে বলে এখনো এটি রাখার যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। ভোটার তালিকায় যেসব নাম একাধিকবার ওঠানো হয়েছে, তালিকা থেকে সেসব নাম বাদ দিতে হবে। প্রকৃত ভোটারদের নাম রেখে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। উপদেষ্টা তিনজনের বিষয়েও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন বক্তারা। তারা বলেন, সংগঠন বোঝেন ও পক্ষপাতহীন ব্যক্তিদের উপদেষ্টা পরিষদে নির্বাচিত করতে হবে।
