বৃহস্পতিবার   ৩০ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ১৪ ১৪৩২   ০৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

এত চেষ্টা করেও দিল্লির আকাশে মিলল না এক ফোঁটা পানি

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:২৯ এএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

রাজধানী দিল্লিতে ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ মোকাবিলায় কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে প্রতিবেশী ভারত। মঙ্গলবার ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে বৃষ্টি নামানোর প্রচেষ্টা করেছিল দেশটি।

 

ক্লাউড সিডিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সাধারণত সিলভার আয়োডাইড নামক ছোট কণিকা মেঘে ছোড়া হয়। কণাগুলো পরবর্তীতে বৃষ্টি সৃষ্টি করে। এই প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এটি দীর্ঘমেয়াদি বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদ্ধতি নয়।

 

ভারতের আইআইটি কানপুর এবং দিল্লি সরকার যৌথভাবে মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় এই পরীক্ষা চালায়। দূষণের ধোঁয়াশায় শহরটি ঢেকে গিয়েছিল।

 

তবে ৫৩ বছর পর এই প্রথম প্রচেষ্টা ‘সম্পূর্ণ সফল’ হয়নি, কারণ বাতাসে যথেষ্ট আর্দ্রতা ছিল না। গত দুই সপ্তাহ ধরে দিল্লির বায়ু মান সূচক (একিআই) ছিল গ্রহণযোগ্য সীমার প্রায় ২০ গুণ বেশি।

 

মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ একটি সেসনা বিমান ব্যবহার করে সিলভার আয়োডাইড ও সোডিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত ফায়ার ফ্লেয়ার বাতাসে ছাড়ে।

 

আইআইটি কানপুর এক বিবৃতিতে জানায়, বৃষ্টি না হলেও মঙ্গলবারের পরীক্ষার পর বাতাসে কণিকার মাত্রা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে সীমিত আর্দ্রতার অবস্থাতেও ক্লাউড সিডিং বায়ু মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।

 

তবে আইআইটি কানপুরের পরিচালক মনিন্দ্র আগরওয়াল বিবিসিকে বলেন, এটি দিল্লির স্থায়ী দূষণ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না। তিনি বলেন, সফলতার একটি মানদণ্ড হলো বৃষ্টিপাত ঘটানো যা স্পষ্টতই হয়নি। মঙ্গলবার মেঘে আর্দ্রতার পরিমাণ খুবই কম ছিল। আমরা শিগগিরই আবার চেষ্টা করব।

 

দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিরসা সাংবাদিকদের জানান, মেঘে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়লে আগামী সপ্তাহগুলোতে আবারও এই পরীক্ষা চালানো হবে।

 

দিল্লিতে প্রথম ক্লাউড সিডিং পরীক্ষা হয়েছিল ১৯৫৭ সালে, এরপর ১৯৭২ সালে দ্বিতীয়বার, জানায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি।

 

তবে আগের পরীক্ষাগুলো ছিল খরা মোকাবিলার জন্য; এবারই প্রথম দেশীয়ভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ক্লাউড সিডিং করা হলো, বলেন আগরওয়াল।

 

২০২৩ সালেও দিল্লি ক্লাউড সিডিংয়ের পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু আদালতের অনুমোদন না মেলায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। তখনও বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, এটি খরচবহুল এবং সফলতার হার কম একটি কৌশল।

 

ক্লাউড সিডিং আসলে মেঘের মধ্যে আর্দ্রতার ঘনীভবন ত্বরান্বিত করে বৃষ্টি ঘটায়। নিক্ষিপ্ত লবণের কণাগুলো বরফ স্ফটিক (আইস নিউক্লেই) তৈরিতে সহায়তা করে। এরপর মেঘের আর্দ্রতা এই বরফ স্ফটিকের সঙ্গে মিশে বৃষ্টি হিসেবে ঝরে পড়ে।

 

তবে প্রক্রিয়াটি সবসময় কার্যকর হয় না; এটি মেঘে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ও আর্দ্রতার অনুপাতের ওপর নির্ভর করে।

 

২০২৩ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অবিনাশ মোহান্তি বিবিসিকে বলেন, ‘ক্লাউড সিডিংয়ের ফলে একিউআই কতটা কমে আসে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। আমরা এটাও জানি না এর প্রকৃত প্রভাব কী, কারণ শেষ পর্যন্ত আপনি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন, যার স্বাভাবিকভাবেই সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’