মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো এজেন্সি নির্বাচনে নতুন মানদণ্ড
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:২২ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে এমন বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি তালিকা পাঠাতে, যারা নতুনভাবে নির্ধারিত কঠোর মানদণ্ড পূরণ করতে সক্ষম।
সোমবার মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ হাইকমিশনকে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এসব যোগ্য এজেন্সির নাম জমা দিতে হবে। এই তালিকা পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হবে।
চিঠিতে বলা হয়, নতুন এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে অনুমোদিত এজেন্সির সংখ্যা ‘যৌক্তিকীকরণ (rationalisation)’ করা। এ জন্য একটি ‘উদ্দেশ্যভিত্তিক ও যোগ্যতাভিত্তিক যাচাই প্রক্রিয়া’ চালুর মাধ্যমে নৈতিক ও গঠনমূলক শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে শ্রমিক অধিকারকর্মীরা এ উদ্যোগ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, ‘র্যাশনালাইজেশন’ নামে পুরনো ‘সিন্ডিকেট ব্যবস্থা’ আবারও নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে।
কুয়ালালামপুরভিত্তিক শ্রমিক অধিকার বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডি হল বলেন, যদি মানদণ্ডগুলো বাস্তবিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে খুব অল্প কিছু এজেন্সি টিকে থাকবে— এমনকি তাদের মধ্যেও কেউ কেউ শর্ত পূরণ করতে পারবে না। আমার মনে হচ্ছে এটি ‘র্যাশনালাইজেশন’ নয়, বরং ‘সিন্ডিকেশন।’
মালয়েশিয়া সরকার যেসব মানদণ্ডে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বাছাই করবে, সেগুলো হলো:
১. ন্যূনতম পাঁচ বছরের লাইসেন্সধারী হতে হবে।
২. গত তিন বছরে অন্তত ৩,০০০ শ্রমিক পাঠানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৩. অন্তত তিনটি দেশে শ্রমিক পাঠানোর রেকর্ড থাকতে হবে।
৪. ১০,০০০ বর্গফুট আয়তনের স্থায়ী অফিস থাকতে হবে, যা অন্তত তিন বছর ধরে কার্যক্রমে রয়েছে।
৫. সুশৃঙ্খল আচরণের সনদ, বৈধ লাইসেন্স ও আইনি কার্যক্রমের প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
৬. আন্তর্জাতিক নিয়োগদাতার কাছ থেকে অন্তত পাঁচটি লিখিত সুপারিশপত্র থাকতে হবে।
৭. নিজস্ব প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন কেন্দ্র থাকতে হবে, যেখানে আবাসনের সুবিধাও থাকবে।
বাংলাদেশ–মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে ‘সিন্ডিকেট ইস্যু’ দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের বিষয়। পূর্ববর্তী ব্যবস্থায় মাত্র ১০০টি বাংলাদেশি এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা একচেটিয়া ও শোষণমূলক হিসেবে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
অধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ ছিল, ওই সিন্ডিকেট শ্রম অভিবাসনের খরচ বাড়িয়ে দেয়, প্রতিযোগিতা সীমিত করে এবং হাজারো লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সিকে প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়।
যদিও মালয়েশিয়া সরকার বলছে নতুন কাঠামোটি স্বচ্ছতা ও নৈতিক নিয়োগ বাড়াবে, তবুও পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, কঠোর যোগ্যতার শর্ত শেষ পর্যন্ত অল্প কিছু প্রভাবশালী এজেন্সিকে সুবিধা দিতে পারে— অর্থাৎ পুরনো সিন্ডিকেট নতুন রূপে ফিরে আসার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, তারা যেহেতু সমঝোতা স্মারক (MoU) পরিবর্তনে আগ্রহী নয়, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি কিছুটা হলেও ভালো উদ্যোগ। তবে বাংলাদেশের শ্রম মন্ত্রণালয়ের উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, যাতে কোনো এজেন্সির মধ্যে ক্ষোভ না থাকে।
