ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা তারেক রহমানের
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:১০ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ মঙ্গলবার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ সামনে রেখে খুব শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে একক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে বিএনপি। একই সঙ্গে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা মিত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকেও বেশ কিছু আসনে ছাড় দেওয়া হবে। এ অবস্থায় প্রার্থী এবং যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি, উভয়ের মাঝেই সুসম্পর্ক গড়ে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে হবে। প্রার্থী ঘোষণার পর কোনো অবস্থায় এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রবিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা এ তথ্য জানান।
আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার আগে আসনভিত্তিক ঐক্য গড়তে চান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ লক্ষ্যে আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থী এবং জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার অংশ হিসেবে গতকাল সাংগঠনিক বিভাগ চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লার সম্ভাব্য প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট জেলা এবং মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করবেনতারেক রহমান।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক ধাপে মতবিনিময়সহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গতকালের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা জানান, বৈঠকে তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই ভোটের মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। একই সঙ্গে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি তাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়তে হবে। শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনার পর ঐক্যে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামার কথা জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে সব মনোনয়নপ্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করবে। নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে এখানে ব্যক্তির চেয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জানা যায়, গতকাল সাংগঠনিক বিভাগ চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, ফরিদুপর ও ময়মনসিংহের অন্তত চারশতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী অংশ নেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী কোনো নেতা বক্তব্য দেননি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। ভোটের মাঠে বিএনপির একক প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর জোর দেন তিনি। একই সঙ্গে যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের দল থেকে যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাস দেন তিনি। আর যারা দলের মনোনয়ন লাভ করবেন, তাদেরকে সামাজিক মাধ্যমে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ, আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ সময় সবার উদ্দেশ্যে একটি গল্প বলেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, এক সন্তানের দাবিদার দুই মা। কোনো অবস্থায় সমঝোতা না হওয়ায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে আদালত বলে যেহেতু সন্তানের দাবি থেকে দুজনের একজনও ছাড় দিচ্ছেন না, সেহেতু তাকে দ্বিখণ্ডিত করলে কেমন হয়। তখন আসল মা চিৎকার দিয়ে বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি সন্তান চাই না, আমার সন্তান যেখানে থাক বেঁচে থাক।’ আমি মনে করি আপনারাও আপনাদের প্রিয় দল বিএনপি ও ধানের শীষকে সন্তানের মতো ভালোবাসেন। এ সময় তিনি আবেগপ্রবণ ও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
উপস্থিত সবার উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আপনাদের ভূমিকা ছিল অসীম। আপনারা সবাই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমার কাছে আপনারা সবাই গুরুত্বপূর্ণ, আবার আমার কাছে একটির বেশি আসনও নেই। ফলে আমাকে আপনাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাকে দল মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ সময় তারেক রহমান বলেন, আমি এক বছর আগেও বলেছি, এবার নির্বাচন বিএনপির জন্য কঠিন একটি নির্বাচন।
বৈঠকে তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। দলের মনোনীত প্রার্থীকেও সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কেউ মনোনয়ন পেলে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ বা এমন কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না, যাতে অন্যরা (যারা মনোনয়ন পাবে না) মনে কষ্ট পায়। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে যারা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটাবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ২০০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে-সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই মাঠে কাজ করতে হবে।
রাতে রংপুর, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের অন্তত সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দেবে। যারা আগে ব্যক্তিগত প্রচারে সীমাবদ্ধ ছিলেন, তারাও এখন দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতিটি এলাকায় গণসংযোগ, উঠানবৈঠক ও ঘরে ঘরে ৩১ দফা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী তারিকুল আলম তেনজিং বলেন, এই আসন থেকে সাতজনকে গুলশান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই তার পক্ষে কাজ করব। আমাদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে থাকব।
আজ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন তারেক রহমান। তবে এই বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ যেন তাদের সমর্থকদের গুলশান কার্যালয় কিংবা আশপাশের এলাকায় না নিয়ে আসে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যুগপৎ আন্দোলনেরমিত্র রাজনৈতিক দলকে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
