উপদেষ্টার গোপনে ভারত সফরে তোলপাড়
হাসান মাহমুদ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৫১ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার
ড. মোহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ট একজন উপদেষ্টার গোপনে ভারত সফর নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে। ওই উপদেষ্টা এবং তার স্বামী যখন ভারত সফর করছিলেন ঠিক একই সময়ে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশনের অন্যতম সদস্য নূর খান লিটন ঢাকা থেকে বিমানযোগে দিল্লীতে যান ‘কিছু ব্যক্তিগত’ কাজের নাম করে। জানা গেছে, তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসবেন কোলকাতা হয়ে সড়ক পথে আগামী ২৭ অক্টোবর দুপুরে। নূর খান ২০ অক্টোবর দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। দিল্লীতে থাকা ঘনিষ্ঠরা তাকে রিসিভ করেন বলে সূত্রে জানা গেছে। সরকার ঘনিষ্ঠদের গোপনে ভারত সফরের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আর গোপন থাকেনি। দিল্লীতে আত্মগোপনে থাকা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতা এখন অবস্থান করছেন। যারা বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনে বিভিন্ন হত্যা মামলার আসামি।
একই সময়ে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার যিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ও তার স্বামী কবি, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ফরহাদ মজহার গোপনে ভারত সফর করেন। সম্মেলনে যাবার কথা থাকলেও তারা পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থান গিয়েছেন বলে জানা যায়। প্রথমে ভারতের হায়দরাবাদে একটি সম্মেলনে ফরহাদ মজহার ও ফরিদা আখতার অংশগ্রহণ করেন বলে সূত্রে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিসংঘের সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গত ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে তার সফর সঙ্গি হিসেবে আসেন এবং ৯ দিনের ওই সফরে ফরিদা আখতার নিউইয়র্কে তার আত্মীয়দের সাথে সময় কাটান বলে জানা যায়।
তাদের ভারত সফরের দুই সপ্তাহ আগে ৪ অক্টোবর ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের উদ্যোগে, ভারত সরকারের খরচে ২৩ জন সাংবাদিককে দিল্লী নিয়ে যাওয়া হয় ‘প্রশিক্ষণ’ দেওয়ার নাম করে। ঢাকার মিডিয়ায় অত্যন্ত পরিচিত এই সাংবাদিকরা ভারত সরকারের আপ্যায়ন গ্রহণ করে দিল্লী থেকে মোম্বাই হয়ে ঢাকা ফেরেন। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রী তাদের সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ভারত সরকারের ‘বাংলাদেশ সম্পর্কিত পলিসি’ তুলে ধরে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। তিনি বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়েও ভারত সরকারের মনোভাবের চিত্র জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই দ্রুত নির্বাচন দরকার। ভারত নির্বাচিতদের সাথেই কাজ করার প্রস্তুতি রেখে চলেছে। এছাড়া নিবিরভাবে বাংলাদেশ পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’ ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) -এর ২৩ সদস্যের অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের দিল্লীতে নিয়ে ওই প্রশিক্ষণ দেয়া একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কি-না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন জেগেছে।
২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট গঠিত গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশনের নূর খান লিটন বিমান বাংলাদেশ ফ্লাইটে (বিজি-৩৯৭) ২০শে অক্টোবর সপ্তাহব্যাপী সফরের জন্য ঢাকা থেকে নয়াদিল্লি গিয়েছেন বলে জানা যায়। নূর খান লিটন ২১ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতের রাজধানী দিল্লীতে অবস্থান করবেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত কাজ সম্পন্ন করবেন। এদিকে নূর খানের দিল্লী সফরকে ঘিরে ঢাকায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জোরপূর্বক গুম ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা তিনি পালন করেছেন। নূর খান ভারত থেকে স্থলপথে বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। ২৭ অক্টোবর বেলা ১১:৩০ মিনিটে বেনাপোল (বাংলাদেশ) ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
নূর খান লিটন ছাড়াও ওই কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন ফরিদ আহমেদ শিবলী, নাবিলা ইদ্রিস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন। ২০২৫ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশি নাগরিকদের নিখোঁজ ও গুম হওয়ার ঘটনায় ভারতীয়দের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
