সুপার ওভারে উইন্ডিজের কাছে হারল বাংলাদেশ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১২:৪১ এএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার

শেষ হইয়াও হইলো না শেষ! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০০ ওভার শেষে মনে হচ্ছিল তাই। খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। তবে মূল ম্যাচের শেষ অঙ্কে যা নিয়তি ছিল, যে নিয়তি সাইফ হাসান বদলে দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্য এক শেষ ওভারের বোলিংয়ে, সুপার ওভার শেষে সেই নিয়তিই ফিরে এল। বাংলাদেশ হারল তাদের ইতিহাসের প্রথম সুপার ওভারে।
মুস্তাফিজুর রহমানকে তুলে দেওয়া হয় সুপার ওভারটা। প্রথম বল থেকে এক রান নেয় উইন্ডিজ। দ্বিতীয় বলে শেরফান রাদারফোর্ড ডিপ এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন সাইফ হাসানকে। তৃতীয় বলে নতুন ব্যাটার ব্রেন্ডন কিং নেন ২ রান। চতুর্থ বলে কিং ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কভারে, তবে ক্যাচটা নিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ, ১ রান নিয়ে নেয় উইন্ডিজ। পঞ্চম বল থেকে এল ২ রান। শেষ বলে হোপের ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় বাউন্ডারিতে। উইন্ডিজ সুপার ওভার থেকে পায় ১০ রান, জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১ রানে।
স্বাগতিকদের হয়ে ব্যাট করতে নামেন সাইফ হাসান ও রিশাদ হোসেন। প্রতিপক্ষ বোলিংয়ের জন্য আনে আকিল হোসেইনকে। তিনি প্রথম বলই করে বসেন ওয়াইড। এরপরের বলে মিড উইকেটে উড়িয়ে মেরে ২ রান নেন সৌম্য সরকার। সে বলটা নো ডেকে বসেন আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। ফ্রি হিটে অবশ্য ১টি রানই নিতে পেরেছেন সৌম্য। তবে তাতে ক্ষতি খুব একটা তখনও হয়নি। ১ বল থেকেই যে ৫ রান এসে পড়েছে!
তবে সাইফ স্ট্রাইকে এসে প্রথম বলটা মিস করেন, প্রথম ডটটা দেয় বাংলাদেশ। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নেন সাইফ। ৩ বলে সমীকরণ নেমে আসে ৫ রানে। চতুর্থ বলে সৌম্য সরকার বিদায় নেন ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে। ২ বলে প্রয়োজন ছিল ৫ রানের। তখন নাজমুল হোসেন শান্ত নেমে নেন সিঙ্গেল। প্রয়োজন নেমে আসে ১ বলে ৪ এ। সেই মুহূর্তে আকিল হোসেইন দেন আরও এক ওয়াইড। শেষ বল থেকে আসে মোটে ১ রান। ফলে সুপার ওভার থেকে ৯ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। ম্যাচটা শেষ করে হার দিয়ে।
তার আগে উইন্ডিজকে অবিশ্বাস্য এক জয় উপহার দিয়েই দিচ্ছিলেন শেই হোপ, আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশের সব ‘আশা’ কেড়ে নিচ্ছিলেন। তার ব্যাটে চড়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আশা দেখছিল জয়ের। ঠিক সেই সময় পথ আগলে দাঁড়ালেন সাইফ হাসান। শেষ ওভারে ৫ রান প্রয়োজন ছিল। তিনি দিলেন ৪ রান। আর তাতেই খেলাটা গড়াল গিয়ে সুপার ওভারে।
প্রথম দুই বলে ডট দিয়ে পরিস্থিতিটা বাংলাদেশের অনুকূলে নিয়ে আসেন সাইফ হাসান। এরপর দুই বলে দুই সিঙ্গেলে আবারও লড়াইয়ে ফেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল তিন রান। তখনই আকিল হোসেইনকে বোল্ড করেন সাইফ।
শেষ বলে ৩ প্রয়োজন ছিল। নতুন ব্যাটার খারি পিয়েরে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বল তুলে দিয়েছিলেন আকাশে। সে ক্যাচটা নিতে পারেননি উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। ইতোমধ্যেই ২ রান নিয়ে নেয় উইন্ডিজ। ফলে ম্যাচটা হয় টাই।
এই ম্যাচে আগে থেকেই একগাদা রেকর্ড হয়ে গেছে। এতসব রেকর্ডের ম্যাচে বাংলাদেশ পেয়ে গেল ওয়ানডে ইতিহাসে তাদের প্রথম টাই ম্যাচের স্বাদ। নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হয় মেহেদী হাসান মিরাজের দল। তবে সেই প্রথমটা জয় দিয়ে রাঙাতে পারেনি। হেরে গিয়ে সিরিজ জয়ের অপেক্ষাটা বাড়িয়েছে বৈকি!
তার আগ পর্যন্ত প্রথম ম্যাচের চিত্রনাট্য মেনেই যেন এগোচ্ছিল ম্যাচটা। মন্থর ব্যাটিংয়ে ২০০ রান নিয়ে যখন শঙ্কা জেগেছিল, সে শঙ্কাটা দূর করলেন প্রথম ম্যাচের নায়ক রিশাদ হোসেন। রান তুললেন আগের ইনিংসের চেয়ে বেশি, বাংলাদেশের রানও হলো আগের দিনের চেয়ে বেশি। এরপর নানা রেকর্ড হলো বটে, তবে বাংলাদেশ ছিল আগের ম্যাচের মতোই জয়ের কক্ষপথে ছিল।
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের কাঙ্ক্ষিত ৫০ ওভার ব্যাট করাও হলো অবশেষে। ২০২৫ সালে দ্বিতীয় বারের মতো পুরো ওভার খেলতে পারল দল। ৭ উইকেট খুইয়ে ২১৩ রান তুলে ইনিংস শেষ করল বাংলাদেশ।
‘এই উইকেটে সফল হতে হলে আপনাকে টেস্ট ম্যাচ খেলতে হবে। ৫০-৬০ স্ট্রাইক রেটে ৭৫-৮০ রান হলেও সমস্যা নেই।’– কথাগুলো স্যামুয়েল বাদ্রির। ইনিংসের শুরুতে বলছিলেন। সেটাকেই যেন বেদবাক্য মেনে ব্যাট করতে শুরু করেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৫ এলো সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে। সেটা তিনি করলেন ৫০ এর আশেপাশে স্ট্রাইক রেটে।
তার আগে পরে যারাই এলেন, রান তুলতে লাগছিলেন ওই গতিতেই। সাইফ ১৬ বলে ৬, তাওহীদ হৃদয় ১৯ বলে ১২, নাজমুল হোসেন শান্ত ২১ বলে ১৫, মাহিদুল অঙ্কনের ৩৫ বলে ১৭ রানের ইনিংস দলকে রানের গতি বাড়াতে দেয়নি। ফলাফল, ৩০ ওভার শেষে ১০৩, আর ৪০ ওভার শেষে রানটা দাঁড়াল ১৩০। পরিস্থিতি জানান দিচ্ছিল, প্রথম ম্যাচে যে ২০০ হয়েছিল, আজ বুঝি সেটাও হচ্ছে না!
সঙ্গে যোগ করুন অলআউটের শঙ্কাকেও। ৩৯তম ওভারে ১২৯ রানে যখন ‘ফ্লোটার’ নাসুম আহমেদ বিদায় নিলেন, তখন ৬ ব্যাটার নেই হয়ে গেছে দলের। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে না সব হারিয়ে বসে, শঙ্কাটা তাই ছিলই।
তবে সে শেকলটা প্রথম ভাঙলেন সোহান, ২৪ বলে ২৩ রানের ইনিংসে দলের রানটা কক্ষপথে আনেন। এরপর রিশাদ কেড়ে নেন সব আলো। ৩ ছক্কা আর ৩ চারে ১৪ বলে খেললেন ৩৯ রানের ক্যামিও। আর তাতেই শেষ ২ ওভারে বাংলাদেশ তুলল ৩৪। বাংলাদেশের রানটা ২০০ পার করেও অনেক দূর এগোলো তার ব্যাটে চড়েই।
প্রথম ম্যাচে সেরা পারফর্মার ছিলেন রিশাদ। দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশ বোলিংয়ে সেরা পারফর্মার তিনিই। ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ছিলেন তিনি। নাসুম আর তানভীর ইসলাম ২টি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের আশাই দেখাচ্ছিলেন। কেসি কার্টি, আলিক এথানেজরা ভালো শুরু পেয়েও বড় কিছুতে রূপ দিতে পারেননি। আর তাতেই ১৩৭ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ দেখছিল এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়।
সেখান থেকে সবকিছু এলোমেলো করে দেন হোপ। খেললেন ৬৭ বলে ৫৩ রানের এক ইনিংস। সেই এক ইনিংস আর দুই জুটিই বাংলাদেশের আজই সিরিজ জেতার আশাটা শেষ করে দিচ্ছিল একটু একটু করে। তিনি সঙ্গী হিসেবে পান জাস্টিন গ্রিভসকে। দুজন মিলে অষ্টম উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। নিজেদের দোষেই এই জুটিটা ভাঙল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কভারে ঠেলে দিয়ে একটা রান চুরি করে নিতে চেয়েছিলেন হোপ। ওপাশ থেকে গ্রিভস ঠিক সময়েই দৌড় শুরু করেছিলেন। তবে মিরাজের অবিশ্বাস্য এক থ্রো কাজটা করে দিল বাংলাদেশের। কিপারের প্রান্তে তার এই থ্রোই গ্রিভসের ইতি টেনে দেয়। বাংলাদেশকে ফেরায় ম্যাচে।
কাজটা অবশ্য তখনও শেষ হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন জয় থেকে মাত্র ৩৭ রানের দূরত্বে। আর বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২ উইকেট। বাংলাদেশ সেই কাজটাই করতে করতেও পারেনি। সাইফ হাসানের ওই ওভার সমতা ফেরালেও শেষমেশ জয়ের মুখ আর দেখাতে পারেনি দলকে। সুপার ওভারে বাংলাদেশ জয়ের দেখা পেতে পেতেও পায়নি শেষমেশ।