চাঁদা না পেয়ে রিসোর্ট বন্ধ করে দিল বিএনপি নেতা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৫৮ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ রোববার

গাজীপুরে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে একটি রিসোর্ট বন্ধ হয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গাজীপুর মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের টেক কাথোরা এলাকার রিভেরি নামের একটি রিসোর্টের প্রধান ফটকের সামনে বালি ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। রিসোর্টে গেস্ট প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক এবং টেক কাথোরা এলাকার আবদুল ওয়াদুদ মোক্তারের ছেলে মো. রাসেল রানা।
রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়া এবং চাঁদার অভিযোগ এনে রিসোর্টের কর্তৃপক্ষ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ ও রিসোর্ট অপারেশান চালু রাখতে গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এহছানুল কাদীর নামের এক ব্যবসায়ী প্রায় ১০ বছর ধরে গাজীপুর মহানগরীর টেক কাথোরা এলাকায় রিভেরি নামের একটি রিসোর্টটি পরিচালনা করে আসছেন। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বিএনপি নেতা রাসেল রানা বিভিন্ন ভাবে রিসোর্টে অতিথিদের যাতয়াত, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। কয়েকমাস ধরে তিনি প্রতিমাসে ৬৫ হাজার করে চাঁদা দাবি করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে রিসোর্টে কর্মরত ২ ম্যানেজারকে ফোন করে চাঁদা না দিলে রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন এবং তাদের চাকরি ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
গত ৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে রিসোর্ট পরিচালনা বন্ধ করার জন্য বলে বিএনপি নেতা রাসেল রানা। অন্যথায়, তিনি এবং তার লোকজন রিসোর্টে আক্রমণ করে ভাঙচুর করবেন এবং রিসোর্টে কর্মরত ম্যানেজার ও স্টাফদের শারীরিকভাবে মারধরের হুমকি দেন।
বিএনপি নেতা রাসেল রানা রিসোর্টের এক ব্যবস্থাপককে ফোন করে। সেই ফোন রেকর্ডে তিনি বলেন, ‘তুই ম্যানেজার বেডা তোরে আমি বললাম, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমার পক্ষে না আসা পর্যন্ত চেয়ারম্যান রিসোর্টে প্রবেশ করতে পারবে না। আর মাহবুব, এখন থেকে গেষ্ট ডুকানো বন্ধ। একটা গেষ্টও যাতে না ডুকে। আমি সিকিউরিটি গার্টকে বলে দিতাছি। আজকে মনে হয় গেষ্ট ডুকসে তাই না। এখন থেকে আর একটা গেষ্টও ডুকবে না। এসময়ে ম্যানেজার মাহবুব বলেন, চেয়ারম্যান আসলে আমি কথা বলি। তখন রাসেল রানা ভয় দেখিয়ে বলেন, চেয়ারম্যান এখানে আসতে পারবে না। আসলে আমি এলাকার সবলোক নিয়ে ভিতরে ডুকমু। আবার ওয়াজ আছে, ওয়াজের সব লোক নিয়া ডুকতাছি খারা।
ম্যানেজার মাহবুব পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা খায়রুলকে ফোন ধরিয়ে দিলে বিএনপি নেতা রাসেল রানা তাকে বলেন, তুমিকি আমারে চিন? বাড়ি কই তোমার? শোন এই রিসোর্টে অবৈধ ব্যবসা হয়, খারাপ অপকর্ম হয় বুঝছ। এখন থেকে একটা গেস্টও ডুকবে না। রিসোর্টের চেয়ারম্যানকে ডুকতে দিবা না। সে যদি ডুকে তাইলে আমি কিন্তু তোমারে বাইর কইরা দিমু। ১১টার পরে যদি একটা লোক ডুকে তাইলে তোমার পিঠের চামড়া থাকবো না। বইলা দিলাম। গেইটে এখনই তালা দেও।
এ বিষয়ে রিসোর্টের চেয়ারম্যান এহছানুল কাদীর বলেন, এলাকার লোকজনের সঙ্গে রিসোর্টের কোনো সমস্যা নেই। রাসেল রানা তার দলবলকে নিয়ে অবৈধভাবে প্রতিমাসে ৬৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে আসছেন। তাছাড়া রিসোর্টের কাছে তাকে একটি অফিস করে দেওয়া এবং তার খবর বহন করার জন্য আমাদের চাপ দেন। আমরা তা দিতে অস্বীকার করলে তাদের লেলিয়ে দিয়ে ভয়ভীতি দেখান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রাসেল রানা বলেন, রিসোর্টে অসামাজিক কার্যক্রম হয়। এটি নিয়ে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। রিসোর্ট মালিকের কাছে কোনও চাঁদা দাবি করিনি। এটা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমি রিসোর্টে ইন্টারনেট ও ডিসের সংযোগ ফি বাবদ ৬৫ হাজার টাকা পাব। ওই টাকা চেয়েছি। রিসোর্টে অবৈধ কাজ হয় বলে এলাকার স্থানীয় লোকজন এটি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমার কোনো হাত নেই।
গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সিদ্দিক হোসেন বলেন, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটি সদর থানা পুলিশ তদন্ত করছে। অভিযোগে রিসোর্ট মালিকের কাছে চাঁদা দাবি, হুমকি এবং রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।