সরকার ও সেনাবাহিনীর দূরত্ব বাড়ছেই
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৫:০৬ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৫ শুক্রবার
বাংলাদেশে অর্ন্তবর্তি সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে। এই কাজে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের প্রসঙ্গ। হঠাৎ করেই গত ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-এর চীফ প্রসিকিউটর সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আইসিটি আগামী ২২ শে অক্টোবরের মধ্যে আসামীদের আদালতে হাজির করার নিদেৃশ দিয়েছে। বাংলাদেশে এত বেশি কর্মরত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগে কখনও এভাবে মামলা দায়েরের কথা শোনা যায়নি। ফলে খবরটা চাউর হওয়ার পর সবাই নড়েচড়ে উঠেছেন।
সেনাবাহিনী গত ১১ আগস্ট অভিযুক্ত ১৫ জন সেনাকর্মকর্তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। মেজর জেনারেল কবির আহমেদ পালিয়ে গেছেন। তিনি শেখ হাসিনার আমলে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এই নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আসামী গ্রেফতার হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে তাদের হাজির করতে হবে। এইক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়াকে গ্রেফতার হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে না। তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল পুলিশকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের একটি বাড়িকে অস্থায়ী কারাগার হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে স্পষ্ট যে, সেনা কর্মকর্তাদেরকে রাখার জন্যেই এই ভবনকে কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর যে সকল উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজন মেজর জেনারেল, ছয়জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বেশ কয়েকজন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এর্বং কর্ণেল রয়েছেন।
সেনাবাহিনীর এই সকল কর্মকর্তা শেখ হাসিনার আমলে র্যাব কিংবা ডিজিএফআইয়ে কর্মরত ছিলেন। ওই সময়ে তারা অনেককে গুম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠন তাদের বিচারের দাবিতে আইসিটি’র সামনে (মাজার গেট) বিক্ষোভ করেছে। শেখ হাসিনাল আমলে যত মানুষ গুম হয়েছেন; ওই সকল স্বজন হারাদের সংগঠনের নাম মায়ের ডাক। এদিকে, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা একটি সংবাদ সম্মেলন করে সেনা কর্মকর্তাদেরকে সামরিক আইনে বিচারের দাবি করেন। বেসামরিক আদালতে বিচার না করার দাবি করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে গুমের বিচার করার দাবি জানান। তবে তিনি বলেন যে, সেনা কর্মকর্তাদের বেসামরিক আদালতে হাজির করার আহ্বান জানান।
এইসব ঘটনা প্রবাহ বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেন। এখন বাইরের দেশে বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তারা কী বলে পরিচয় পাবেন! সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখনও প্রমাণিত হয়নি। কিন্ত দুনিয়ার মানুষ মনে করতে পারে যে, বাংলাদেশের সেনারা গুমের কাজে জড়িত।
এই ধরনের এক একটি কাজ করে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। এই নিয়ে অর্ন্তবর্তি সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিরোধ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদেও এক বক্তব্যে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে তাকে লক্ষ্য করে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আপনার সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক থাকুক’।
অন্তভর্তি সরকার এবং সেনাবাহিনী যে মুখোমুখি বিরোধে জাড়িয়েছে তা এখন ওপেন সিক্রেট। প্রশ্ন হলো, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে এই বিরোধ কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা। এটা স্পষ্ট যে, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা নিতে চায় না। কারণ তাদের সামনে অনেক সুযোগ গেছে। তখনও ক্ষমতা দখল করেনি। তবে বিরোধের জায়গাটা এমন হয়েছে যে, তার প্রভাব নির্বাচনে ফেলতে পারে। ভোটে একটা অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করতে পারে। এটাই হলো শঙ্কার বিষয়। ##
