দার্জিলিংয়ে ভয়াবহ ভূমিধসে নিহত অন্তত ২০
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:১৩ এএম, ৬ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে ভূমিধসে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হিমালয় সংলগ্ন রাজ্য সিকিমের সঙ্গে সংযোগও কেটে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
১২ ঘণ্টায় ২৬১ মিলিমিটার বর্ষণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। কেউ কেউ বলছেন, শেষবার এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখা গিয়েছিল ২৭ বছর আগে, ১৯৯৮ সালে।
গত রাতে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে মিরিক ও সুখিয়াপোখরির মতো এলাকায় ভূমিধস দেখা দেয়। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামীকাল দার্জিলিং সফরে যাচ্ছেন।
কোথাও সেতু ভেঙে পড়েছে, কোথাও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-রাস্তাঘাট। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিক এবং সুখিয়াপোখরিতে। মিরিকেই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধারকাজে নেমেছে জাতীয় এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সেনা এবং স্থানীয় পুলিশ। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় উদ্ধারকাজ মধ্যে মধ্যে ব্যাহতও হয়েছে।
সৌরেনির কাছে দারাগাঁওয়ে গভীর রাতে ধস নামে। একটি বাড়ি ধসে যায়। আপার দুধিয়া বা ডাম্ফেডার এলাকায় চার থেকে পাঁচটি বাড়ি ধসে গিয়ে জলের তলায় চলে গিয়েছে। বেশ কিছু হোমস্টে ছিল দার্জিলিঙের ওই অংশে। সেগুলিও ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুধিয়া নদীর একপাশে থাকা বিএসএফের ক্যাম্পও।
দার্জিলিংয়ে প্রাণহানিতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) লিখেছেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সকল ধরনের সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ভূমিধসের কারণে মূল সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম সংযোগকারী রাস্তা এবং দার্জিলিং-শিলিগুড়ি সংযোগকারী সড়ক।
প্রতি বছর দুর্গাপূজার পর কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক দার্জিলিং ভ্রমণে আসেন। তাই এ দুর্যোগে অনেক পর্যটক আটকা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোনো অঘটন এড়াতে গোরখাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) দার্জিলিংয়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো, যেমন টাইগার হিল ও রক গার্ডেন, বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খেলনা ট্রেন সার্ভিসও স্থগিত করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সতর্ক থাকতে এবং সড়ক ও আবহাওয়ার খবর নিয়মিত জানতে পরামর্শ দিয়েছে।
দার্জিলিংয়ের এমপি রাজু বিস্টা বলেছেন, প্রবল বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষতি এবং অবকাঠামোর ধ্বংস হয়েছে। আমি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ও কোচবিহারেও প্রবল বর্ষণে বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর আগেই উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে প্রবল বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছিল। সিকিমের জন্য দু’টি লাল সতর্কতাও দেওয়া হয়েছিল, যেখানে মাঝারি বজ্রঝড়সহ বিদ্যুৎ চমকানো, ভারি বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস ছিল।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। কর্মকর্তারা আরও সতর্ক করেছেন, এর ফলে উত্তরবঙ্গে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দৃশ্যে ভাঙা সেতু, ভেসে যাওয়া সড়ক ও উত্তাল নদী দেখা গেছে। একই আবহাওয়াজনিত দুর্যোগে নেপালেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, গত ৩৬ ঘণ্টায় সেখানে অন্তত ২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।