শনিবার   ০৪ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ১৮ ১৪৩২   ১১ রবিউস সানি ১৪৪৭

দুর্নীতির কারণে জিডিপি ২-৩ শতাংশ হ্রাস পাবে

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৫৮ এএম, ৪ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার

 

 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালিন সরকার প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূস যখন ১০৪ জনের বিশাল লটবহর নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে নিউইয়র্ক সফর করছিলেন ঠিক সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ৯ দিনের এই সরকারী  সফরে ৬ জন উপদেষ্টাসহ ড. ইউনূসের দুই মেয়েও ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ঘটমান দুর্নীতির কারণে আগামী অর্থ বছরে  দেশের জিডিপি ২ থেকে ৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। এতে নানা ধরনের সমস্যা অপেক্ষা করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র দফতরের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে একটি স্থায়ী ও গুরুতর বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর)  যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টে’ বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্নীতি মোকাবিলার মাঝে সরকারি ক্রয়, কর ও শুল্ক সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের মধ্যে এটি একটি বিষয়। অনুমান অনুযায়ী, সংস্থাগুলোর অফ-দ্য-রেকর্ড পেমেন্ট বাংলাদেশের জিডিপি দুই থেকে তিন শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের বিনিয়োগ জলবায়ু সংস্কারের প্রচেষ্টা এখনও বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ড. মোহাম্মদ ইউনূস ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিংঘের ৮০তম অধিবেশনে যোগদিতে নিউইয়র্কে ছিলেন।
বাংলাদেশ অংশে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কনভেনশনের (ইউএনসিএসি) একটি পক্ষ ঘুষ, আত্মসাৎ এবং অন্যান্য ধরনের দুর্নীতি মোকাবেলার জন্য আইন রয়েছে। কিন্তু  বাংলাদেশে প্রয়োগ ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার প্রকাশ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে বিরোধী দলগুলি দাবি করেছে যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (এসিসি) পরিবর্তে রাজনৈতিক বিরোধীদের হয়রানি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি ধীর এবং কথিত দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থা এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা চুক্তির সময়োপযোগী প্রয়োগ এবং ব্যবসায়িক বিরোধের ন্যায্য সমাধানে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।
নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ পরিষেবা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার মতো বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা কমাতে বাংলাদেশ গত এক দশকে ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো, সীমিত অর্থায়ন উপকরণ, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব, বিদেশী সংস্থাগুলির জন্য অন্যায্য করের বোঝা এবং দুর্নীতির মতো বিষয়গুলির কারণে বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 
মার্কিন সংস্থাগুলি পোশাক, ভোগ্যপণ্য, চলচ্চিত্র, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সফ্টওয়্যারে আইপিআর লঙ্ঘনের কথা জানিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির বিশেষ প্রতিবেদনের তালিকায় নেই। তবে এটি নকল পোশাকের শীর্ষ পাঁচটি উৎস’র মধ্যে একটি হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রপ্তানি-কেন্দ্রিক তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পে আগুন ও নিরাপত্তা মান উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ গত এক দশকে অগ্রগতি অর্জন করলেও শ্রমিকরা সংগঠিত ও সম্মিলিতভাবে দর কষাকষির অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আইনি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাসিনা যুগের দুটি প্রথা অপসারণের জন্য কাজ করছে যা বিদেশী বিনিয়োগকে বাধা দেয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের (এসওই) বকেয়া বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধে বিলম্ব এবং দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা। ব্যাংকিং কেলেঙ্কারির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষমতাসীন আ. লীগ পার্টির সদস্যদের সাথে মিলে প্রশ্নবিদ্ধ ঋণ দিয়েছিল যা পওে তারা ঋণ খেলাপি হয়েছিল।