দূতাবাসের গোপন মিশনে রাজনৈতিক তান্ডব!
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:১৪ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার
ড. ইউনূসের দুই মেয়েসহ ১০৪ জনের লটবহর
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস ও জাতিসংঘ স্থায়ি মিশনের গোপন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজনৈতিক তান্ডব ঘটিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সফরসঙ্গীদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘে ১০৪ জনের বিশাল লটবহরে ড. ইউনূসের ২ মেয়ে, আসিফ নজরুলসহ ৬ উপদেষ্টা, ২১ জন সামরিক কর্মকর্তা (নিরাপত্তা), চৌধুরী আশিক মাহমুদ, বিনিয়োগ বোর্ড বিডার নির্বাহি চেয়ারম্যান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, প্রেস উইংয়ের ৫ সদস্যের কোলাহল; সেই সাথে নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তান্ডব এখন তুঙ্গে। বিএনপি ও এনসিপির নেতাদের আওয়ামী কর্মীদের হাতের মুঠোয় তুলে দিয়ে আনন্দের ঢেকুর গিলেন দূতাবাসে কর্মরত বিশ্বাসঘাতকরা। নিউইয়র্কের কনস্যুলেটে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের আগমনে তার ওপর হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই এবারের নারকীয় ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সরকারী আমলাদের দ্বারা ড. ইউনূস সরকার কতটা অসহায় তার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে নিউইয়র্কে। সরকারের ভেতরে আরেকটি সরকারের বিভৎ চেহারা ধরা পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। দেশের জঞ্জাল বিদেশে আনার পরিকল্পকরা এখন সরকারের ভেতরেই। স্থায়ি মিশনের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, ‘বিগত স্বৈর সরকারের মতোই তাদের আচরণ, দাপটে কাজ করা কঠিন। তারা এখনো আগের মতোই সবকিছু করে যাচ্ছে।’ এবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের প্রধান শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গির, সি. এসিসটেন্ট সেক্রেটারি ফয়েজ আহাম্মদ, প্রধান উপদেষ্টার এসিসটেন্ট প্রেস সেক্রেটারি সুশমিতা তিথি ছাড়াও পিআইডির ৯ জন এসেছেন। ক্যান্সার আক্রান্ত একজন নারী উপদেষ্টা সিঙ্গাপুরে কিছুদিন আগে চিকিৎসাধিন থাকলেও এবার তিনি জাতিসংঘে সফরে এসেছেন। ড. ইউনূসের বিশাল এই টিমের অধিকাংশই ব্যাক্তিগত কাজে ব্যস্ত বলে জানা গেছে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন রাষ্ট্রদূত তারেক মো: আরিফুল ইসলাম এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ি প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরীর নিয়োগের পরই মিশনের গোপন পরিকল্পনা শুরু হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। তাদের পরিকল্পনায় সাজানো হয় ড. ইউনূস ও তাঁর সফরসঙ্গিদের জন্য ‘চৌকুস প্রটোকল টিম’। এই পরিকল্পনার সাথে আরও শীর্ষ প্রভাবশালীরা জড়িত থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এজন্য নেপাল বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে একজন কর্মকর্তা মো: শোয়েব আবদুল্লাহকে হায়ার করে নিউইয়র্কে নিয়ে আসা হয়। মিশনে তাদের কয়েকদিন মিটিংও হয়েছে। ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ ক্যাডার হিসেবে শোয়েবের নিয়োগ আর এবার ড. ইউনূস ও তাঁর সফরসঙ্গীদের হেনস্থা করতে তাকে নিউইয়র্কে আনা হয় বলে অভিযোগ। জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সফর সঙ্গীদের যে তালিকা রয়েছে তাতে দেখা যায় ‘৮৮ নম্বরে’ আছে শোয়েবের নাম। নেপাল বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েব সাইটে দেখা যায়, শোয়েব আবদুল্লাহ নেপাল বাংলাদেশ দূতাবাসের ‘ডেপুটি চিফ’ হিসেবে কর্মরত। আরেকটি সূত্র জানায়, তাকে নেপালে বদলি করা হলেও খুটির জোরে নিউইয়র্কেই তিনি অবস্থান করছেন। ফোন করে শোয়েব আবদুল্লাকে পাওয়া যায়নি। শোয়েব আবদুল্লাহ জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরীর রাজনৈতিক শিষ্য ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে হেনস্থার কাজে তাকে হায়ার করার অভিযোগ উঠেছে। দূতাবাস, স্থায়ি মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রটোকল টিম না সাজিয়ে নেপাল থেকে মো: শোয়েব আবদুল্লাহকে নিয়ে আসার পেছনের ঘটনা ফাঁস হতে শুরু করে। প্রথমে রাজনৈতিক নেতাদের চলে যাওয়ার একটা ভুল তথ্য ছড়ানো হয় বিমানবন্দরে। তাদের কথামতো বিএনপির সমর্থকরা ৪ নম্বর টার্মিনাল থেকে চলে যায়। তবে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সেখানে থাকার জন্য ভেতর থেকে বলা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটে শোয়েব আবদুল্লাহ ও তার সহকর্মীদের ন্যাক্কারজনক আসল ঘটনা। ২২ সেপ্টেম্বর জেএফকে বিমানবন্দর। ৪ নম্বর টার্মিনালে শোয়েবই প্রথম বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন। তাঁকে শোয়েব যেভাবে টানছিলেন তা ছিল সকল কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এক নোংরা দৃশ্য। বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম বারবার শোয়েবের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চান। তবে শোয়েব জোর করে তাঁকে আসামির মতো হাত ধরে টানতেই থাকেন। তার টানাটানির দৃশ্য মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। বিএনপি মহাসচিবকে টেনে বাইরে বের করার পথেই অপেক্ষমান ছিল যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পেছনে তাকে অনুসরণরত ছিলেন এনসিপির নেতা আখতার হোসেন ও ডা. তাসনিম জারা। জামাত নেতা আব্দুল্লাহ মো: তাহের পেছনে থেকে সব দেখে নিউইয়র্কের সমর্থকদের ফোন করেন। তারা এগিয়ে আসলে তিনি সবাইকে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে বের হয়ে যান। এদিকে ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আখতার এবং ডা. জারাকে অতি নিকটে এবং একা পেয়ে ভয়াবহ এক রাজনৈতিক তান্ডব চালিয়ে যেতে থাকে আওয়ামী সমর্থকরা। খুব কাছে গিয়ে মিজান নামের এক কর্মী আখতারকে ডিম মারতে থাকে। ডা. জারাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়েছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এই দৃশ্য সকালেই দুনিয়াব্যাপি ছড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষ রাতেই বিমানবন্দরে তান্ডবের এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়েছেন। অন্যদিকে ড. ইউনূস বিশেষ প্রটোকল নিয়ে ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে উঠে যাবার পর ঘটনা জানতে পারেন। তবে তাঁর মিশনের কোন কর্মকর্তারা সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা।
যুক্তরাষ্ট্রে দুই রাষ্ট্রদূতের নিয়োগের পেছনে জোড়ালো সমর্থন দেন ইউনূস সরকারের বিতর্কিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। জেএফকে বিমানবন্দরে অ্যামিরাত এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সব সময় ৪ নম্বর টার্মিনালেই ভিড়ে। তারপরও ২২ সেপ্টেম্বর প্রটোকল কর্মকর্তাদের চাতুরির কারণে ড. ইউনূসের সঙ্গে আসা অতিথিরা হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এর আগেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিষ্কার ভাষায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে হামলার আভাস দেয়া হয়েছিল। তার সফরসঙ্গীদেরও হামলার টার্গেট করা হয়। মিশন কর্মকর্তারা কোন পদক্ষেপ না নেয়ার হামলাকারীরা শক্তিশালি হয়ে উঠে বিদেশে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে আওয়ামী কর্মীদের দ্বারা হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। জানা গেছে, সেই হামলা চালানোর জন্য উস্কানি দিয়েছিলেন বর্তমান ওয়াশিংটনের নতুন রাষ্ট্রদূত তারেক মো: আরিফুল ইসলাম। এর আগে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ি মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। জানা যায়, তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে থাকাকালিন এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। বর্তমান মিশন প্রধান সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো: আরিফুল ইসলাম ১৯৯৮ সালে পররাষ্ট্র দফতরে যোগ দেন। তারা ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে পতিত সরকারের সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিউইয়র্কে এক সঙ্গে আনার পেছনে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে একটি বৈঠকের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের একটা রফা করতে চান বলে সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা ড. ইউনূসের হোটেলের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন প্রতিদিন। আজ শুক্রবার সকালে ড. ইউনূস জাতিসংঘে তাঁর ভাষণ প্রদান করবেন।
