বুধবার   ২৯ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ১৪ ১৪৩২   ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শেখ হাসিনার বিদায় পছন্দ করেনি ভারত: ড. ইউনূস

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৪ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শুক্রবার

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্য ঘিরে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, গত বছরের ছাত্র আন্দোলন—যার ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাটকীয় বিদায় ঘটে—সেটি ভারত পছন্দ করেনি। সেই কারণেই বর্তমানে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনডিটিভি।

 

বক্তব্যে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনর্জীবিত করার প্রস্তাবও দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সাগরপথে প্রবেশাধিকারের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে।

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এখন ভারতের সঙ্গে সমস্যা রয়েছে, কারণ তারা ছাত্রদের কর্মকাণ্ডকে ভালোভাবে নেয়নি।’ একই সঙ্গে অভিযোগ করেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে ছড়ানো ‘ভুয়া সংবাদ’ এই উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে অনেক ভুয়া খবর আসছে, প্রচার করা হচ্ছে যে এটা নাকি ইসলামপন্থী আন্দোলন।’

 

হাসিনা সমস্যা’

 

ইউনূস অভিযোগ করেন, ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। ভারত হাসিনাকে আতিথ্য দিচ্ছে, যিনি নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছেন…এটাই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়াচ্ছে।

 

গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে প্রতিবেশী দেশটিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দখলের হুমকি এবং ক্রমবর্ধমান ভারতবিরোধী বক্তব্য নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলা বেড়ে যাওয়ার বিষয়েও ভারত সতর্কতা জানিয়েছে। তবে ইউনূস প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানায়, ফলে দুই দেশের সম্পর্কে অবনতিই অব্যাহত রয়েছে।

 

সার্ক স্বপ্ন

 

সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব রাখতে গিয়েও ইউনূস ভারতের সমালোচনা করেন। তিনি ইঙ্গিত দেন, নয়াদিল্লির রাজনৈতিক অনীহাই আঞ্চলিক সহযোগিতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত এবং ভারতের নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সার্জিও গরের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

 

ড. ইউনূস বলেন, সার্ক কাজ করছে না, কারণ এটি একটি দেশের রাজনীতির সঙ্গে খাপ খায় না।, বাংলাদেশ আসিয়ানভুক্ত হতে আগ্রহী। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত হবে বলেও তিনি মনে করেন।

 

সার্কের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু উরি সন্ত্রাসী হামলার পর তা বাতিল হয়ে যায়। ভারত অভিযোগ করেছিল, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, ফলে সার্ক আর কার্যকর নয়।

 

যদিও ভারত এখনও সার্কের সদস্য, তবুও তারা আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য এখন বেশি জোর দিচ্ছে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) ওপর, যেখানে পাকিস্তান নেই। আসলে, বিমসটেক মঞ্চকেই ভারত ব্যবহার করেছে বাংলাদেশের প্রতি উদ্বেগ জানানোর জন্য।

 

এ বছরের শুরুর দিকে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংখ্যালঘু সুরক্ষার প্রসঙ্গ তোলেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশকে সতর্ক করেন যেন ‘পরিবেশকে বিষিয়ে তোলে এমন বক্তব্য’ থেকে বিরত থাকে। কারণ, ইউনূসের উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রসঙ্গ টেনে দেওয়া মন্তব্য নিয়ে ভারতীয় নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।

 

নির্বাচন আপডেট

 

নিউইয়র্কে ইউনূস আরও বলেন, তার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে ১৫ বছর পর বাংলাদেশের ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটার প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আশা দেখতে পাচ্ছেন।