রোববার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৫ ১৪৩২   ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুভসূচনা বাংলাদেশের

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৫৬ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রোববার

‘এখন থেকে ম্যাচটা একমাত্র বাংলাদেশেরই। জেতাটাই স্বাভাবিক, এখান থেকে হেরে বসলে নিজেদের দোষেই হারবে’ – কথাটা ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের। জয় থেকে তখনও ২৫ রানের দূরত্বে বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় রানটা এক অঙ্কে নেমে আসার ঠিক আগে যখন ফুলটস বলে আউট হলেন তাওহীদ হৃদয়, তখন মনটা কু ডাক ডেকে ওঠা খুব অসম্ভব কিছু কি?

 

শেষ ওভারের শুরুতেই চার মেরে কাজটা সেরে ফেলছিলেন জাকের আলী। তাতে মনে হচ্ছিল জয়টাও বুঝি সহজেই চলে আসবে। তবে তা এল না। স্কোর সমতায় রেখে জাকের বিদায় নিলেন ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে। এর এক বল পর শেখ মাহেদিও যখন বিদায় নিলেন, তখন মনে হচ্ছিল ৯ বছর আগের বেঙ্গালুরুর দুঃস্বপ্ন বুঝি ফিরে আসছে দুবাইয়ে। তবে নাসুম আহমেদ সেটা হতে দেননি। একটা রান নিয়ে নিলেন। আর তাতেই বাংলাদেশ তুলে নিল ৪ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস এক জয়। তাতে তাদের সুপার ফোরের শুরুটাও হলো দুর্দান্তভাবে।

 

খেলাটা দুবাইয়ে হচ্ছে, নাকি মিরপুর বা সিলেটে, গ্যালারিভরা বাংলাদেশের সমর্থকদের উল্লাসে তা ঠাহর করা যাচ্ছিল না। তবে সেই সমর্থকদের ম্যাচের প্রথম পাওয়ারপ্লেতে চুপই থাকতে হয়েছে। কারণ টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দুই লঙ্কান ওপেনার তুলে ফেলেছিলেন ৫৩ রান।

 

দুবাইয়ের গ্যালারি চুপ ছিল ম্যাচের আরও একটা অংশে। লঙ্কান ইনিংসের শেষ দিকে যখন দাসুন শানাকা ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন একের পর এক, তখন। ব্যাটিং অর্ডারে বাঁহাতিদের লম্বা তালিকাটাকে ছোট করতে তাকে ওপরে পাঠিয়েছিল দলটা। ৩৭ বলে তার ৬৮ রানের ইনিংসটা শেষমেশ লঙ্কান ইনিংসের মেরুদণ্ডই হয়ে বসেছিল। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়েও লঙ্কানদের থামানো যায়নি তার এই ইনিংসের সুবাদেই।

 

তাতে এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বুঝি হাত ফসকেই বেরিয়ে গেল! শ্রীলঙ্কা তুলে বসেছিল ৭ উইকেটে ১৬৮ রানের ‘পাহাড়’! হ্যাঁ, পাহাড়ই। শেষ ১৪ বার যখনই বাংলাদেশ ১৬৫ এর বেশি রান তাড়া করতে নেমেছে, তার ১৩ বারই হেরেছে। সেই একবারের পুনরাবৃত্তি যে এবার হবে, তার গ্যারান্টি কী ছিল?

 

এরপর বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুটাও গেছে লঙ্কানদের পক্ষে। রানের খাতা খোলার আগেই নুয়ান তুষারাকে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যখন ফিরলেন তানজিদ হাসান তামিম, তখন মনে হচ্ছিল আবুধাবির ওই দুঃস্বপ্নই বুঝি ফিরে ফিরে এলো!

 

আবুধাবিতে ধস ঠেকানো যায়নি, কারণ একাদশে একজন সাইফ হাসান ছিলেন না; আজ শুধু ঠেকানোই হলো না, লঙ্কানদের ওপর চড়ে বসা গেল, তার ব্যাটে চড়েই। আগের ম্যাচে দুঃস্বপ্ন উপহার দেওয়া তুষারাকে চার আর এক ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু, এরপর পাওয়ারপ্লেতেই আরও ২ ছক্কা হাঁকিয়ে জানান দিচ্ছিলেন, আজ দিনটা তার!

 

ভুল বলা হলো বোধ হয়! নিজের আগমনী বার্তাটা তো সাইফ জানান দিয়েছিলেন আরও আগে! বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে যে রাতে হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে ৩টি ক্যাচ, সে রাতে দুই ওপেনারের ক্যাচ তালুতে জমিয়ে জানান দিয়েছিলেন, আজকের রাতের রাজা আমিই! সেটা পাওয়ারপ্লেতে ধরে রাখলেন। পাওয়ারপ্লে শেষে লিটন যখন বিদায় নিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে মাঠের লম্বা দিকটাতে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে, তখন মোমেন্টামটা পড়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। তবে দুনিথ ভেল্লালাগেকে পরের ওভারেই ইনসাইড আউটে দারুণ একটা ছক্কা মেরে সে মোমেন্টামটা হারাতে দেননি তিনি।

 

সাইফকে কাজটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে হতো, তবে তিনি তা পারেননি। আউট হয়েছেন ৪৫ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে। তবে তার বিদায়ের আগেই আক্রমণের ব্যাটনটা নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন তাওহীদ হৃদয়। অনেক দিন ধরে ফর্মে ছিলেন না, তবে ছন্দে ফেরার জন্য মঞ্চটা এর চেয়ে ভালো আর হতেই পারত না।

 

ভেল্লালাগেকে ছক্কা হাঁকিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। সাইফের বিদায়ের পর নিজের বিধ্বংসী রূপটা চূড়ান্তভাবে দেখালেন লঙ্কানদের। কামিন্দু মেন্ডিসের এক ওভারে দুটো চার আর এক ছক্কা হাঁকিয়ে প্রয়োজনীয় রানটাকে হাতের অনেক কাছে নিয়ে আসেন। সে ওভারের শুরুতে দলের প্রয়োজন ছিল ওভারপ্রতি ৯ করে রান, কামিন্দু মেন্ডিসের ১৬ রানের ওই ওভারের পর সে আস্কিং রেটটা নেমে আসে ৮ এরও অনেক নীচে।

 

সঞ্জয় মাঞ্জরেকার যেমন বললেন, সেখান থেকে ম্যাচটা বাংলাদেশ হারতে পারত স্রেফ নিজেদের ভুলেই। প্রয়োজনীয় রানটা ঠিক এক অঙ্কে নামার আগে যেমন ভুলটা হলো! তাওহীদ হৃদয় দুশ্মন্থ চামিরার বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লেন।

 

তখন ম্যাচ শেষ করার গুরুদায়িত্বটা ছিল ১২ বলে ১৪ রান করা শামীম পাটোয়ারীর হাতে। তাকে সেটা করতেই দেননি জাকের। ২ চার আর এক সিঙ্গেলে বাংলাদেশকে নিয়ে যান শ্রীলঙ্কার সমান ১৬৮ রানে। চারিথ আসালঙ্কা সব ফিল্ডার ওপরে তুলে এনে একটা সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন, জাকের ছক্কা হাঁকাতে বোল্ড হলেন সে কারণেই, একটু পর শেখ মাহেদীও যখন আউট হলেন, তখন চাপটা উলটে চলে এসেছিল বাংলাদেশের ওপর।

 

নন স্ট্রাইকে থাকা শামীম দারুণ ম্যাচ অ্যাওয়ারনেসের পরিচয় দিলেন আগেভাগে দৌড় দিয়ে। নাসুমের ব্যাটে লেগে গালিতে বল গেল, তা থেকে চলে এল প্রয়োজনীয় রানটা। রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশ।

 

এশিয়া কাপে এর আগে বাংলাদেশ মোটে ৩ বার হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। দুবার ২০১২ আর ২০১৮ ওয়ানডে এশিয়া কাপে, আর অন্যটি ২০১৬ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের আসরে। তিন বারই ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। আজ চতুর্থ জয়টা এল। ফাইনালটা এখনই নিশ্চিত হয়ে যায়নি, তবে সেটা হোক, এমন কিছুই যে খুব ভালোভাবে চাইবেন লিটন দাসরা, সেটা বোধ করি আর মুখ ফুটে বলে দিতে হয় না!