শনিবার   ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ২৮ ১৪৩২   ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

নেপালের আগুনের স্ফুলিঙ্গ ভারতে ছড়াতে পারে!

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫১ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার


 
বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিবেশি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন দুর্নীতিবাজ প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। ৯  ও ১০ সেপ্টেম্বরের আন্দোলনে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, আমলা, সরকারের সুবিধাভোগিদের বাড়ি বাড়ি হামলা চালায় সাধারণ মানুষ। অর্থ মন্ত্রীকে ছাত্ররা পিটিয়ে দিগম্বর করে পানিতে ফেলে দেয়। এক ভিডিওতে দেখা যায়, নেপালের মন্ত্রী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের একটি সেনা হেলিকপ্টার থেকে ফেলা দড়ি আঁকড়ে থাকতে। পার্লামেন্ট ভবন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীদের বাড়ি লুট হয়েছে। নেপালের পাঁচতারকা হোটেলে হামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশি এক পরিবার এই হামলার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ ফুটবল দলের সদস্যদের সামরিক বিমানে করে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আন্দোলনে গুলিতে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশত মানুষ। পুলিশকে বেদম পিটুনি দেয়ার পর থানা লুট হয়েছে। নেপালের এই আগুনের স্ফুলিঙ্গ ভারতের মোদিকেও স্পর্শ করতে পারে। এর আগে যেমনটা জ্বলেছিল বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের ঘাঁটি। বাংলাদেশের পলাতক প্রধানমন্ত্রী ও দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের গত এক বছর ধরে ভারত সরকার আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিজয় থালাপাতেসহ অনেক নেতাই মোদিকে স্বৈরাচার ও ভোট চোর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ভারতের বর্তমান সেনাপ্রধান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বৈষম্য এভাবে বাড়তে থাকলে দেশ বিভক্ত হয়ে যেতে পারে!
জেন-জি বিপ্লবের সফল পরিণতি আবারও বিশ্ববাসির সামনে। শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশের পর এবারের মঞ্চ নেপাল। মাত্র দুইদিনের এক ঝড়ে ওলটপালট হয়ে গেল পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা। মন্ত্রী-এমপিদের বাসভবন, সরকারি বিভিন্ন স্থাপনাসহ সংসদ ভবন এলাকায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। অপরদিকে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন ছাত্র। ব্যাপক চাপের মুখে পদত্যাগপত্র লিখে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। গণপিটুনির শিকার হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়েছেন সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী-এমপিরা। ঠিক যেন বাংলাদেশে গত বছর হয়ে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থানের অবিকল কপি। প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটেছে আরও দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কায়। খুব সামান্য ইস্যুতে থেকে উদ্ভূত আন্দোলন পরিণত হয়েছে বিশাল ঝড়ে। অনেকেরই এখন প্রশ্ন, এরপর আর কোন দেশে আঘাত হানতে যাচ্ছে এই জেন-জি ঝড়। ইঙ্গিতটা এবার ভারতের দিকে। মোদির ধর্মভিত্তিক চরম বৈষম্যমূলক রাজনীতির শিকার হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। মানুষ এখন একজন বাঁশিওয়ালার ডাকের অপেক্ষায়। ভারতের পার্লামেন্টে মঙ্গলবার মোদিকে ভোট চোর হিসেবে ডাকা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এরই মধ্যে নেপালের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া জেন-জি গোষ্ঠীগুলো ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তারা দাবি করেন, আন্দোলনটি সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশকারীরা ছিনতাই করেছে। আরেকটি জেন-জি বিপ্লবের সফল পরিণতি দেখলো বিশ্ব। মাত্র দুইদিনের এক ঝড়ে ওলটপালট হয়ে গেল পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা। পদত্যাগপত্র লিখে হেলিকপ্টারে উড়ে পালিয়ে গেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। এরইমধ্যে নেপালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সেনাবাহিনী; জারি করা হয়েছে কারফিউ। আলোচনা চলছে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী নিয়ে। তবে, এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশা রয়ে গেছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির গন্তব্য নিয়ে। তিনি দুবাই গেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
নেপালের অফিশিয়াল সূত্রে জানা গেছে, পলাতক ওলি সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং দেশের ক্রমাবনত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান। এর জবাবে জেনারেল সিগদেল বলেন, সেনাবাহিনী কেবল তখনই হস্তক্ষেপ করে দেশকে স্থিতিশীল করতে পারবে, যদি প্রধানমন্ত্রী ওলি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেন। 
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়ার পর মানুষ ফুঁসে উঠে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হলেও একপর্যায়ে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। 
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির মিত্রশক্তি শিবসেনার নেতারা আশঙ্কা করছেন, গভীরভাবে এ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য। এখনই সতর্ক না হলে শেখ হাসিনা ও কেপি শর্মা ওলির মতো একইরকম পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে মোদিকেও।    
তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে এই জেন-জি ঝড়ের তাৎক্ষণিক এবং গভীর প্রভাব রয়েছে ভারতের জন্যও।  মূলত সরকার ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার পর যে বিক্ষোভ দেখিয়েছে নেপালের জেন-জি, তা সাধারণ অন্য কোনও আন্দোলনের মতো নয়। তরুণ নেপালিরা যে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে তা কেবল ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং এক্স-এর জন্য ছিল না। এই সংকটের শিকড় আরও গভীরে। শাসন ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্বই প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে এ আন্দোলনের পেছনে।  
ঠিক এ বিষয়টিই তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদিকে কঠিন এক সতর্কবার্তা দিয়েছেন শিবসেনার এমপি সঞ্জয় রউত। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি, স্বৈরাচারী শাসন, স্বজনপ্রীতি বিরুদ্ধে নেপালে যে ‘আগুনের সূত্রপাত’ হয়েছে, সেটি ভারতেও লাগতে পারে। তবে, ভারতে এখনো এমন কিছু হচ্ছে না; কারণ ভারতীয়রা মহাত্মা গান্ধার অহিংসা নীতি মেনে চলে।