মঙ্গলবার   ০৪ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২০ ১৪৩২   ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্দোলন ‌‘হাইজ্যাক’ হওয়ার অভিযোগ নেপালের জেন-জির

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৫১ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। কিন্তু এই প্রতিবাদ দ্রুতই গভীর রাজনৈতিক অসন্তোষের রূপ নেয়। তরুণ প্রজন্ম, যারা নিজেদেরকে ‘জেন জি’ বলে পরিচয় দেয়, তারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। তাদের অভিযোগ, এই প্রতিবাদকে ‘সুযোগসন্ধানীরা’ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে সহিংসতায় রূপ দিয়েছে। তারা বলছেন তাদের আন্দোলন ‌‘হাইজ্যাক’ হয়ে গেছে।

 

আন্দোলনকারীরা বিবিসিকে জানান, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। কিন্তু গত কয়েক দিনে সরকারি ভবন, রাজনীতিবিদদের বাড়ি এবং এমনকি সংসদ ভবনেও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল এবং এখনও শান্তিপূর্ণ আছে। আমরা সহিংসতা বা ভাঙচুর সমর্থন করি না।

 

সেনাবাহিনী ও সরকারের পদক্ষেপ

 

সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু দেশটিতে এখন পর্যন্ত কোনো নতুন নেতৃত্ব নেই। এই শূন্যতার মাঝে পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমেছে। তারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে।

 

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজেন্দ্র বসনেট জানান, তারা মূলত সেইসব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন, যারা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করছে। তিনি বলেন, আমরা জেন জি’র শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত।

 

সেনাবাহিনী তরুণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা এখন নতুন দাবি-দাওয়ার তালিকা তৈরি করছেন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান দাবি হলো, নেপালের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত এবং যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে নির্বাচন করা।

 

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নেপালিরা

 

এই অস্থিরতার মধ্যেও কাঠমান্ডুর রাস্তায় কিছু তরুণকে দেখা গেছে, যারা বিক্ষোভের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি পরিষ্কার করছেন। তাদেরই একজন ১৪ বছর বয়সী কাসান লামা। তিনি বলেন, এই দুর্নীতি অনেক দিন ধরেই নেপালে আছে। এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে।

 

অন্যদিকে ২৪ বছর বয়সী পরাশ প্রতাপ হামাল বলছেন, তারা প্রচুর ‘দূষণ’ তৈরি করেছেন, তাই তা পরিষ্কার করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, নেপালের স্বাধীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়োজন।

 

অনেকে অবশ্য সহিংসতায় বিস্মিত হয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সী রাকেশ নিরাউলা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি যে এমনটা হওয়া উচিত ছিল না।

 

অন্ধকারের মধ্যেও আশা দেখছেন সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছেন, এই বিপ্লব হয়তো নেতাদের জন্য একটি শিক্ষা, যা নেপালের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে আসবে।

 

সূত্র: বিবিসি