বুধবার   ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ২৫ ১৪৩২   ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

নেপালে বিক্ষোভকারীদের হাতে ভারী অস্ত্র, দিনভর যা হলো

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:২৮ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার

 

নেপালে আগের দিনের বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার দিনটি ছিল বেশ ঘটনাবহুল। দিনের শুরুতেই রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন জেলার সড়কে নামেন বিক্ষোভকারীরা। জেন-জি ছাড়াও তাদের মধ্যে ছিলেন নানা পেশার মানুষ। কারও কারও হাতে ছিল গাছের ডাল ও লাঠি। তবে কেউ কেউ বহন করেন ভারী অস্ত্র।

 

মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর সিংহ দরবার প্রাসাদ কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে কয়েকজনকে মারণাস্ত্র বহন করতে দেখা যায়। তাদের ছবি প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এ সময় এসব অস্ত্রধারীদের ভঙ্গি ছিল গুলি ছোড়ার মতো। বিক্ষোভকারীরা এদিন সুপ্রিম কোর্ট ভবনেও আগুন দেন। সেখানেও কয়েকজনকে মারণাস্ত্র অস্ত্র বহন করতে দেখা গেছে।

 

আগের দিন সোমবার বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ও জলকামান নিক্ষেপ করে দেশটির পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুতে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওই সময় আন্দোলনকারীদের দমন করতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে একদিনেই নিহত হন ১৯ জন। মঙ্গলবার আরও দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

 

সোমবার পুলিশ বাধা দিলেও মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে হাজারো জনতা। এ সময় পার্লামেন্টের মূল ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক বিক্ষোভকারী ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে সরঞ্জাম ভাঙচুর করে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবন ছাড়াও বিভিন্ন সরঞ্জামে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে জড়ো হয়ে নানা স্লোগান দেন। প্রধান প্রশাসনিক ভবনের ভেতরের লেকের পানিতে সাঁতার কাটতেও দেখা যায় বেশ কয়েকজনকে।

 

পার্লামেন্ট ভবন ছাড়াও এদিন আগুন দেওয়া হয় পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবনে। এএফপি টিভির প্রকাশ করা ভিডিওতে ওই ভবনে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। দিনের শুরুতে কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, রাজধানীর ভৈসেপাটি এলাকায় মন্ত্রী ও সরকারি আমলাদের ভবনেও আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে হেলিকপ্টারে করে মন্ত্রীদের সরিয়ে নেয় সেনাবাহিনী।

 

মঙ্গলবার বিকেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করে ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু। এতে দেখা যায়, কাঠমান্ডুতে দেশটির সবচেয়ে বড় মিডিয়া কমপ্লেক্সে আগুন জ্বলছে। হিন্দু জানায়, এটি কান্তিপুর পাবলিকেশনসের মিডিয়া কমপ্লেক্স। এখানে আছে কান্তিপুর টিভি ও দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের অফিস।

 

পরে এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া পোস্টে কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, তাদের ভবনে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়েছে। সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

 

সড়কে হাজারো মানুষ

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবরে কাঠমান্ডুসহ নেপালের বিভিন্ন জেলার সড়কে নামেন নানা পেশার মানুষ। দেশটির টেলিভিশন স্পেস-এর সরাসরি সংবাদে দেখা যায়, কাঠমান্ডুতে মোটর শোভাযাত্রা করে উদযাপন করছেন বাসিন্দারা। কেউ কেউ একে অপরকে আবির মাখিয়ে দিচ্ছেন।

 

কয়েকটি স্থানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমনে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। স্পেস টিভিতে প্রচার হওয়া ভিডিওতে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে।

 

কাঠমান্ডুর বাসিন্দা রাচনা সাপোতা (৩৫) বলেন, ‘নিজে থেকেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। আগের দিন (সোমবার) যা ঘটেছে তা আমাকে ঘরে থাকতে দেয়নি। দেশে এখন দুর্নীতির অবসান ও স্বচ্ছতা প্রয়োজন।’ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে আরেক বিক্ষোভকারী মুনা শ্রেষ্ঠা (২০) বলেন, নেপালে এখন পরিবর্তনের সময়। এই পরিবর্তন অনেকদিন আগে থেকেই তরুণরা চেয়েছে।

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মারধর, পদত্যাগের হিড়িক

নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পর একে একে কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন দেশটির পানিমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী। এনডিটিভির খবর, প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌদেলও পদত্যাগ করেছেন।

 

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুরের কাঠমান্ডুর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় শের ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

বিমানবন্দর বন্ধ ও সতর্কতা

দেশজুড়ে চলমান পরিস্থিতির কারণে নেপালের ত্রিভূবন বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ওঠানামা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশটিতে অবস্থানরত বা আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিজ নিজ হোটেলে অবস্থানের জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হলো। যারা ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক তাদের আপাতত নেপালে না আসার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

 

সেনাবাহিনীর আহ্বান

চলমান পরিস্থিতিতে সমাধানের পথ খুঁজতে বিক্ষোভকারীদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন নেপালের সেনাপ্রধান অশোক রাজ। বিবিসি জানিয়েছে, ভিডিও বার্তায় সেনাপ্রধান বলেছেন, সেনাবাহিনী দেশে নিরাপত্তা ও ঐক্য নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

সেনাপ্রধান বলেন, আর যাতে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেটি নিশ্চিত করতে এখন কাজ করতে হবে।