মঙ্গলবার   ২৬ আগস্ট ২০২৫   ভাদ্র ১০ ১৪৩২   ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের দুই বাড়ি ও ছয় কোম্পানির সন্ধান

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:০২ এএম, ২৬ আগস্ট ২০২৫ মঙ্গলবার

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ কোম্পানিসহ বিপুল সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। মার্কিন মুলুকে থাকা ছয়টি কোম্পানি, দুটি বাড়ি, আটটি বিলাসবহুল গাড়িসহ ১০টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচার মামলার তদন্তে এসব সম্পদের তথ্য পাওয়া যায় বলে দুদকের দাবি। তবে তার ব্যাংক হিসাব ও কোম্পনিগুলোর মধ্যে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে তার হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি।

 

দুদক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা থাকাকালে জয় তার পদবি ব্যবহার করে হুন্ডি ও অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করেছেন। এসব অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকার মূল্যের দুটি বাড়ি কিনেছেন, যা অবৈধ সম্পদ বলে অভিযোগ দুদকের।

 

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের নামে আটটি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য পাওয়ার কথা দাবি করেছে দুদক। এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস-ক্লাস, মার্সিডিজ-বেঞ্জ এসএল-ক্লাস, লেক্সাস জিএক্স ৪৬০, ল্যান্ড রোভার, ম্যাকলারেন ৭২০এস, মার্সিডিজ-বেঞ্জ এমজি জিটি, দুটি জিপ গ্র্যান্ড চেরোকি। এসব গাড়ির আনুমানিক মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ গাড়িটি জয়ের সাবেক স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওভারমায়ারের নামে নিবন্ধিত।

 

তদন্তসংশ্লিষ্ট দুদকের কর্মকর্তারা জানান, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে গোল্ডেন বেঙ্গল প্রোডাকশন্স এলএলসি, প্রাইম হোল্ডিং এলএলসি, ওয়াজেদ ইন, অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার এলএলসি, ব্লু হেভেন ভেনচারস এলএলসি, ট্রুপে টেকনোলজিস এলএলসি নামে ছয়টি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতিটি কোম্পানির নামে রয়েছে ব্যাংক হিসাব। এ ছাড়া জয়ের আরও চারটি ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব রয়েছে, যার একটি তার সাবেক স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওয়াজেদের সঙ্গে যৌথ হিসাব। অন্যদিকে প্রাইম হোল্ডিং এলএলসির মালিকানায় জয়ের সঙ্গে মুহাম্মদ ফরিদ খান নামে আরেক ব্যক্তির অংশীদারত্ব রয়েছে বলে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করা হয়।

 

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে, তদন্ত শেষে ব্যাংক হিসাবগুলোতে এবং কোম্পানিতে কি পরিমাণ অর্থ রয়েছে তা জানা যাবে।

 

এ তদন্তের বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, জয়ের নামে একটি মামলা হয়েছে, এটির তদন্ত চলছে। তার যেসব সম্পদ শনাক্ত করা যাবে, সেগুলো জব্দ করে প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে।

 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। জয় দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

 

গত ১৪ আগস্ট জয়ের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। সেখানে প্রায় ৬০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় তার বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেন, দুর্নীতি ও ঘুষগ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের দাবি, ২০০০ থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে জয় এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং পাচার করেছেন। দুদক বলছে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আয়ের উৎসের সব তথ্য আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক হলেও জয় তা করেননি এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন।

 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দুদক তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির মামলা করেছে। এর মধ্যে আছে তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং তার বোন শেখ রেহানা ও রেহানার সন্তান ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি মামলা হয়েছে, যেখানে হাসিনাসহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ১১ আগস্ট থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট হাসিনা ও তার স্বজনদের ১২৪টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ছয় হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ফ্রিজ করেছে।