রোববার   ২৪ আগস্ট ২০২৫   ভাদ্র ৯ ১৪৩২   ২৯ সফর ১৪৪৭

ডাকসু নির্বাচন: লড়াইয়ে ছাত্রদল-শিবির এগিয়ে

আজকাল ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৬:৫৫ এএম, ২৩ আগস্ট ২০২৫ শনিবার



সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যয় নিয়ে ছুটছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ট্রেন। রাজনৈতিক পরীক্ষাগারখ্যাত ডাকসু নির্বাচনকে বরাবরই গুরুত্ব  দিয়েছে দলগুলো। বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের প্যানেল মনোনয়ন দিয়েছেন খোদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যাতে শীর্ষ স্থানে জায়গা পেয়েছেন পরিচিত নাম। ছাত্রশিবির এগুচ্ছে সংগঠিতভাবে। উচ্চপদগুলোর পাশাপাশি নজর হলপাড়াতেও। এছাড়াও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কিছু স্বতন্ত্র নাম আছে আলোচনায়। 
১৯ আগষ্ট ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ভোটার প্রায় ৪০ হাজার। ধারণা করা যায় এবারের ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রম। প্রতিটি ডাকসু নির্বাচনই কোনো না কোনো কারণে অল্প-বিস্তর বিতর্কিত ছিল। এবারে সুষ্ঠু নির্বাচন ও সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সব থেকে বেশি নারীদের অংশগ্রহণ। ইতিহাসে প্রথমবার শিবির সর্বোচ্চ শক্তিমত্তা নিয়ে নির্বাচন করতে পারছে। বিরাজ করছে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আটটি প্যানেল।

নির্বাচনে সব থেকে সম্মানজনক পদ ভিপি (সহ-সভাপতি)। এই পদে শক্তিশালী নাম ছাত্রদলের মো. আবিদুল ইসলাম খান, শিবিরের সাদিক কায়েম, স্বতন্ত্র প্যানেলের উমামা ফাতেমা। এছাড়াও উচ্চারিত হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদের আবদুল কাদের ও ছাত্রঅধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লার নামও। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবিদুল ইসলাম খান। তিনি লড়াই করবেন ভিপি পদে। ক্যাম্পাসে পরিচিত আবিদুল অধিক আলোচিত হন ’২৪ আন্দোলনে। তার একটি কথা বেশ ভাইরাল হয়েছিল। সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন ‘প্লিজ! কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না।’ যা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক আবেগতাড়িত বাণী। ক্যাম্পাসে দীর্ঘ এক বছর ধরেই সংগঠিত করার কাজ করছে ছাত্রশিবির। ভিপি পদে লড়বেন ঢাবি শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমাও ছিলেন ’২৪ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। উমামা রাজনৈতিক প্যানেলের বাইরে হতে পারেন বড় চমক।
জিএস পদে আলোচনায় আছেন কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিম। এই পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে ঢাবি শিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদের মাঝে। দু’জনই ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ। এছাড়াও আলোচনায় আছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের মো. আবু বাকের মজুমদার। ’২৪ এর আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তিনি। ’২৪-এর  আন্দোলনে বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের আঘাতে জর্জরিত হয়েছিলেন সানজিদা আহমেদ তন্বী। তার প্রতি সম্মান রেখে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে প্রার্থী দেয়নি ছাত্রদল, বাগছাসসহ প্রায় ছয়টি প্যানেল। স্বতন্ত্র পদে লড়বেন তন্বী।

ঢাবি শাখার শিবির সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান স্নাতকোত্তরে প্রথম হয়েছেন। তার সিজিপিএ ৩.৯৭। তিনি লড়ছেন এজিএস পদে। এই পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে ছাত্রদলের তানভীর হাদী মায়েদের সঙ্গে। মায়েদ দক্ষ সংগঠক হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। বাগছাস থেকে এজিএম হতে চান সাবেক সমন্বয়ক আশরেফা খাতুন। আলোচনায় থাকা নামের মধ্যে রয়েছেন মেঘ মল্লার বসু। তিনি বাম গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন। 

ছাত্রদল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত ফুটবলার ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক চিম চিম্যা চাকমা, ছাত্র পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক মো. সাইফ উল্লাহ্ (সাইফ), সদস্য পদে মেহেরুন্নেসা কেয়া পরিচিত মুখ। শিবির থেকে লড়বেন জুলাই আন্দোলনে এক চোখ হারানো খান জসিম (আন্তর্জাতিক সম্পাদক) ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাইসুল ইসলাম (সদস্য)। বাগছাসের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক: মো. হাসিবুল ইসলাম, ‘ডিইউ র্ফাস্ট’ প্যানেল থেকে লড়বেন সাবেক সমন্বয়ক ও বহিষ্কৃত এনসিপি নেতা মাহিন সরকার আছেন আলোচনায়। 

ডাকসু শুধু ছাত্রদের সংগঠন নয়, বরং বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির জন্যও একধরনের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র। এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে চোখ রাখছেন রাজনীতি সচেতন মহল। গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। ডাকসু’র ২৮ পদে মোট ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এবার বিভিন্ন পদে শিক্ষার্থীরা ৬৫৮টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। সেই হিসাবে ১৪৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। 

ছাত্রদলের প্যানেল, ভিপি-জিএস পদে লড়বেন আবিদুল- হামিম: গতকাল প্যানেল ঘোষণা করে ছাত্রদল। সংগঠনটির মনোনীত ভিপি প্রার্থী হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবিদুল ইসলাম খান। আর জিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর বারী হামিম। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন তানভীর হাদি আল মায়েদ।

বুধবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্যানেল ঘোষণা করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এছাড়া অন্যান্য পদে যাদের নাম ঘোষণা করা হয় তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল ইসলাম; কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা; আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান; সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আবু হায়াত মো. জুলফিকার জিসান।  গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ১৫ই জুলাইয়ে আহত সানজিদা আহমেদ তন্বীর সম্মানে খালি থাকবে।

ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক চিম চিম্যা চাকমা; ছাত্র পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক মো সাইফ উল্লাহ্ (সাইফ); সমাজসেবা সম্পাদক সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক; ক্যারিয়ার উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. আরকানুল ইসলাম রূপক; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসাইন; মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক মো মেহেদী হাসান মুন্না।

সদস্য পদে রয়েছেন, মো. জারিফ রহমান, মাহমুদুল হাসান, নাহিদ হাসান, মো. হাসিবুর রহমান সাকিব, মো. শামীম রানা, ইয়াসিন আরাফাত আলিফ, মুনইম হাসান অরূপ, রঞ্জন রায়, সোয়াইব ইসলাম ওমি, মেহেরুন্নেসা কেয়া, ইবনু আহমেদ, সামসুল হক আনান ও নিত্যানন্দ পাল।

বাগছাস: আব্দুল কাদের ও আবু বাকেরকে সামনে রেখে প্যানেল ঘোষণা
বুধবার ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ তাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে। প্যানেলের সভাপতি (ভিপি) পদে আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হিসেবে মো. আবু বাকের মজুমদার এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আশরেফা খাতুন মনোনীত হয়েছেন।

এছাড়াও, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক নাহিয়ান ফারুক, সমাজসেবা সম্পাদক মহির আলম, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক মো. হাসিবুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাকিব, ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সরকার, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক আনিকা তাহসিনা, কমনরুম ও ক্যাফেটরিয়া সম্পাদক মিতু আক্তার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আহাদ বিন ইসলাম শোয়েব, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ, ক্যারিয়ার ও উন্নয়ন সম্পাদক রেজওয়ান আহমেদ রিফাত এবং ছাত্র পরিবহন সম্পাদক মো. ঈসমাইল হোসেন রুদ্র মনোনীত হয়েছেন। গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ই জুলাই আহত সানজিদা আহমেদ তন্বীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

সদস্য হিসেবে প্যানেলে রয়েছেন মো. মাসউদুজ্জামান, ফেরদৌস আইয়াম, ইসমাঈল, তাপসী রাবেয়া, মো. আরমানুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, রিফতি আল জাবেদ, আশরাফ অনিক, রওনক জাহান, মাহফুজা নওয়ার নওরীন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আরিফুর রহমান এবং ফেরদৌস আলম।

প্যানেল ঘোষণার মাধ্যমে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যমুক্ত পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক নীতির প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।