‘গ্রেটার ইসরাইল’ আধ্যাত্মিক মিশনে নেতানিয়াহু
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:০৮ এএম, ১৪ আগস্ট ২০২৫ বৃহস্পতিবার

‘গ্রেটার ইসরাইল’ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক আধ্যাত্মিক মিশনে নেমেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজার পর এবার অন্য আরব দেশ যেমন সিরিয়া, জর্ডান ও মিসরের সীমান্ত অঞ্চলগুলো ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করতে চাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ইসরাইলি গণমাধ্যম আই২৪ নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান নেতানিয়াহু। বলেন, তিনি ‘ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশনে’ আছেন। খবর মিডল ইস্ট আই।
নেতানিয়াহুর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটের ডানপন্থি সদস্য শ্যারন গাল। সাক্ষাৎকারের সময় নেতানিয়াহুকে তিনি একটি তাবিজ উপহার দেন। তাবিজটিতে ‘প্রতিশ্রুত ভূমির মানচিত্র’ তথা বৃহত্তর ইসরাইলের মানচিত্র ছিল বলেও উলেখ করেন গাল। বৃহত্তর ইসরাইল ‘দর্শনের’ প্রতি তিনি কোনো সংযোগ অনুভব করেন কি-না জানতে চাওয়া হলে নেতানিয়াহু উত্তর দেন, ‘অনেক বেশি।’
বৃহত্তর ইসরাইল বলতে, ১৯৬৭ সালের জুনের ৬ দিনের যুদ্ধের পর ইসরাইল ও দেশটির সদ্য দখল করা এলাকাপূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, সিনাই উপদ্বীপ এবং গোলান মালভূমিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির অগ্রদূত জে’ইভ জাবোতিনস্কিসহ শুরুর দিকের নেতৃস্থানীয় জায়নবাদীদের কেউ কেউ বর্তমান ইসরাইল, গাজা, পশ্চিম তীর এবং বর্তমান জর্ডানকে বোঝাতেও এই শব্দটি ব্যবহার করতেন। গাল নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করেন যে, তিনি ইহুদি জনগণের পক্ষ থেকে কোনো মিশনে আছেন বলে মনে করেন কি-না?
এরপরই তিনি বৃহত্তর ইসরাইল নিয়ে প্রশ্নটি করেন। নেতানিয়াহু উত্তরে বলেন, তিনি ‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এক মিশনে আছেন, বহু প্রজন্ম ধরে ইহুদিরা এখানে আসার স্বপ্ন দেখেছে এবং আমাদের পরেও অনেক প্রজন্ম আসবে একই স্বপ্ন নিয়ে।’ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের পর নেতানিয়াহুর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠন মুজাহিদীন আন্দোলন।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছেন ‘মিসর, সিরিয়া, জর্ডান এবং লেবাননকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যা জাতিগুলোর প্রতি পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণাÍক অভিপ্রায়ের স্পষ্ট ইঙ্গিত। এই বিবৃতিগুলো আরব রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব এবং আরব জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট আগ্রাসন। অতএব, আমরা এই অপরাধমূলক ইহুদিবাদী উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনার বিরুদ্ধে স্পষ্ট আরব অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানাই’।
নেতানিয়াহুর এমন বক্তব্যের মাঝেই ইসরাইলি সেনাবাহিনীপ্রধান ইয়াল জামির গাজায় ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অপারেশনাল পরিকল্পনার মূল কাঠামো’-তে স্বাক্ষর করেছেন। এক সপ্তাহ আগে এ বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও অবশেষে এ বিষয়ে রাজি হয়েছেন তিনি।
সামরিক বিবৃতিতে তিনি ‘আসন্ন মিশনের আগে দক্ষতা প্রশিক্ষণ পরিচালনা, রিজার্ভ নিয়োগের জন্য সৈন্য প্রস্তুতি এবং সামগ্রিক প্রস্তুতি বৃদ্ধির গুরত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।’ এদিকে গাজা শহর দখলের ইসরাইলের পরিকল্পনা নিয়ে জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স এবং কানাডার মতো পশ্চিমা দেশগুলোসহ ব্যাপক আন্তর্জাতিক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর সাবেক উপদেষ্টা জাভিয়ের আবু ঈদ পশ্চিমা দেশগুলোকে নেতানিয়াহুকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত। নেতানিয়াহুর সামগ্রিক কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিউজিল্যান্ডও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন বলেছেন, ‘আমি মনে করি, গাজায় যা ঘটছে তা সম্পূর্ণরূপে ভয়াবহ। আমার মনে হয় নেতানিয়াহু চরমভাবে ভুল পথে চলে গিয়েছেন।’
বিশ্বজুড়ে নিন্দার মাঝেই অবরুদ্ধ গাজায় বর্বরচিত হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলি হামলায় ২১ জন ত্রাণপ্রার্থীসহ কমপক্ষে ১২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৩৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও তিন শিশুসহ কমপক্ষে আটজন অনাহারে মারা গেছেন। ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৬১,৭২২ জন নিহত এবং ১,৫৪,৫২৫ জন আহত হয়েছেন।