মঙ্গলবার   ১২ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ২৮ ১৪৩২   ১৭ সফর ১৪৪৭

সিন্ডিকেট ভেঙে কমল ২০ ওষুধের দাম

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৩১ এএম, ১২ আগস্ট ২০২৫ মঙ্গলবার

অ্যান্টিবায়োটিক, নিউমোনিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, সর্দি-জ্বর, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ভিটামিন, ব্যথানাশকের মতো অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় থাকা ২০টি ওষুধের দাম কমেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) উৎপাদিত ১৫৯টি ওষুধের মধ্যে ২০টির দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কমেছে। কাঁচামাল কেনাকাটায় সিন্ডিকেট ভাঙায় ওষুধের দাম কমানো সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওষুধের কাঁচামাল কেনায় দীর্ঘদিনের সক্রিয় সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। কম দামে কাঁচামাল কিনতে পারায় আগের তুলনায় দাম কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ইডিসিএল উৎপাদিত ১৫৯টি ওষুধের মধ্যে ২০টির দাম কমানো হয়েছে, বাকিগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কাজে ফাঁকি কমিয়ে কর্মীদের নির্ধারিত আট ঘণ্টা কাজ, সিস্টেম লস কমানোসহ ১০ ধরনের সাশ্রয়ে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বেড়েছে। প্রতি মাসে সাশ্রয় হচ্ছে ১৮ কোটি টাকা। কাজ না করায় ৭০০ কর্মীকে ছাঁটাই করার পরও ওষুধ উৎপাদন বেড়েছে। আগে সরকারি চাহিদার ৭০ শতাংশ ওষুধ সরবরাহ করতে পারত ইডিসিএল, এখন এটা ৯০ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে সরকার প্রতি বছর একই বাজেটে অতিরিক্ত প্রায় ১১৬ কোটি টাকার ওষুধ কিনে রোগীর সেবার পরিধি বাড়াতে পারবে।

 

ইডিসিএল সূত্রে জানা যায়, মন্টিলুকাস্ট ১০ এমজি ওষুধের দাম ১০ টাকা ৬৭ পয়সা থেকে কমিয়ে ৫ টাকা ২৫ পয়সা করা হয়েছে। ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল ২০ এমজি ওষুধের দাম ২ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়েছে। কিটোরোলাক ট্রোমেথামিন ইনজেকশন ৩০ এমজির দাম ৩০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমিয়ে ২৩ টাকা ৮২ পয়সা করা হয়েছে। অনড্যানসেটরন ইনজেকশন ৮ এমজির দাম ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৭ টাকা ৫৯ পয়সা করা হয়েছে। সেফট্রায়াক্সন ইনজেকশন ১ জিএমর দাম ১১৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৯০ টাকা করা হয়েছে। সেফটাজিম ইনজেকশন ১ জিএমের দাম ১৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। সেফট্রায়াক্সন ইনজেকশন ২ জিএমের দাম ১৭৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬০ টাকা করা হয়েছে। সেফুরক্সিম ইনজেকশন ৭৫০ এমজির দাম ১০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৯০ টাকা ৭৬ পয়সা করা হয়েছে। ইসোমিপ্রাজল ইনজেকশন ৪০ এমজির দাম ৬০ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমিয়ে ৫০ টাকা ১৩ পয়সা করা হয়েছে। মেরোপেন ইনজেকশন ১ জিএমের দাম ৭৯৩ টাকা ২৮ পয়সা থেকে কমিয়ে ৩৪৩ টাকা করা হয়েছে। ওমিপ্রাজল ইনজেকশন ৪০ এমজির দাম ৬৪ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে কমিয়ে ৫২ টাকা করা হয়েছে। অ্যামলোডিপিন ট্যাবলেট ৫ এমজির দাম ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমিয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। অ্যাটোরভাস্টাটিন ক্যাল

 

সরকারি প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত ওষুধের দাম কমালেও ওষুধের বাজারে তার প্রভাব নিয়ে চলছে আলোচনা। এ ব্যাপারে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত কর্মী কমিয়ে অর্থ সাশ্রয় করে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমানো খুবই ভালো উদ্যোগ। এসব জরুরি ওষুধ জনগণকে বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও এমনটাই বলা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক কোম্পানির সঙ্গে এই ওষুধের দাম নিয়ে সামঞ্জস্য করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডিসিএলের কাজ হলো সরকারি হাসপাতালে ওষুধ দেওয়া। তাদের ক্রেতা নির্ধারিত করা আছে। তারা হাসপাতালে ওষুধ দেবে সরকারের কাছে থেকে এর অর্থ বুঝে নেবে। তাদের ব্যবসার মডেল আর আমাদের মডেল পুরোপুরি আলাদা। ইডিসিএলের প্রচার, বিপনন, কেমিস্টের ডিসকাউন্ট, ঝুঁকি কোনোটাই নেই। তাই তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম কমানোর সঙ্গে বেসরকারি ওষুধশিল্প প্রতিষ্ঠানের দাম তুলনা করার সুযোগ নেই।’