শনিবার   ০৯ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ২৫ ১৪৩২   ১৪ সফর ১৪৪৭

এনসিপি’র ভবিষ্যৎ চোরাবালিতে!

আজকাল, ঢাকা অফিস

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২১ এএম, ৯ আগস্ট ২০২৫ শনিবার


  
 

বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যাত্রা শুরুর চার মাসেই দলের নেতাদের বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে এখন সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকে মনে করছেন, এই দলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কারণ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র চক্র ভাঙার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠন হয়েছে। কিন্তু কোনও দলই দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে না পেরে হারিয়ে গেছে। এনসিপি’র ভবিষ্যৎ নিয়েও এক ধরনের আশঙ্কার জায়গা সৃষ্টি হয়েছে। অর্ন্তবর্তি সরকারের ছত্রছায়ায় দলটি গড়ে উঠলেও তারা সামনে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে স্থিরতা দেখায়নি।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে এক অভাবনীয় গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ওই আন্দোলনে মূলত ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে অতীতেও ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে তদানীন্তন সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের পতন ঘটে। ওই সময়ে ছাত্ররা কোনও রাজনৈতিক দল গঠন করেনি। কিন্তু এবার ব্যতিক্রমী ঘটনা হলো, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্ররা এনসিপি নামের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে।
এনসিপি নেতারা বলেছেন, পুরনো রাজনৈতিকব দলগুলো বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খা মেটাতে সক্ষম হয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধরনের বন্দোবস্ত নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা যাত্রা শুরু করেন। এক্ষেত্রে, তারা বলছেন, গত বছরের জুলাইয়ের গণঅভ্যূত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে তারা অগ্রসর হবেন। এই লক্ষ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ গ্রহণের দাবি জানান। জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদ সম্পূর্ণ পৃথক ডকুমেন্ট। জুলাই ঘোষণা হলো, জুলাইয়ের আন্দোলনকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া। এই ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক মতৈক্য হয়েছে। গত ৫ই জুলাই প্রধান উপদেষ্টা এই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে তুলে ধরেন। জুলাই সনদ হলো, বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব সন্নিবেশিত একটি দলিল। এই দলিলের ব্যাপারে অনেক বিষয়ে অনেক পক্ষ একমত হয়নি। এনসিপি নেতারা বলছেন, জুলাই সনদ গৃহীত হওয়া শুধু নয়; বরং তা বাস্তবায়নের উপায়ও জানতে চায় এনসিপি। এনসিপির গঠনতন্ত্রে সুন্দর সুন্দর কথা লেখা থাকলেও তার বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ। এনসিপি নেতারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দুই পরিবারের রাজনৈতিক দল হিসাবে অভিহিত করে তারা নিজেদেরকে পরিবারতন্ত্রের বাইরে বলে ঘোষণা করেছেন। তারা বলছেন, দলের অভ্যন্তরে স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রের চর্চা তাদের দল করবে। এই ক্ষেত্রে তিন বছর মেয়াদি দুই মেয়াদের বেশি কেউ দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না। এই নির্বাচন তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ভোটের মাধ্যমে হবে। দলের তহবিল সম্পর্কে স্বচ্ছতার লক্ষ্যে তারা একটি ওয়েবসাইট চালু করবেন। সেখানে আয়-ব্যয় লেখা থাকবে। ফলে যে কেউ তা দেখতে পারবেন।
যদিও এসব কাগুজে উদ্যোগ বাস্তবে দেখা যায় না। নির্বাচন কমিশন এখনও দলটির রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন দেয়নি। ফলে নিবন্ধন পাওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তবে তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভাবমূর্তির সংকট। এনসিপি নেতারা অনেকে মব সৃষ্টিতে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ভেঙেঙ্গ ফেলার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। এনসিপি নেতারা সম্প্রতি সারাদেশ সফরের উদ্যোগ নিলে গোপালগঞ্জ সফরে গিয়ে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। সেনাবাহিনী ও পুলিশের চেষ্টায় গোপালগঞ্জ থেকে সেনাবাহিনীর আর্মাড ভেহিকেল (এপিসি)’র মধ্যে দিয়ে তারা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও সেখানে কমপক্ষে চার জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সময়ে গোপালঞ্জ যাওয়া এনসিপি নেতাদের অপরিপক্কতার পরিচয় বলে অনেকে কনে করেন। সম্প্রতি গুলশানে কয়েকজন এনসিপি নেতা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন।
এনসিপির সবচেয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে গণঅভ্যূত্থানের দিবসে দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা কক্সবাজার প্রমোদ ভ্রমনে যাওয়া নিয়ে। এই বিষয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় এখনও চলছে। এই সব নেতারা এখন বলছেন, তারা অভিমান করে কক্সবাজার গেছেন। গোয়েন্দারা তাদের ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ফলে অভিমানে কক্সবাজার যাওয়া মানে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার শামিল। চার মাস বয়েসী একটি দলের পিছনে এত এতে বিতর্ক দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি করে বটে।