শনিবার   ০৯ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ২৫ ১৪৩২   ১৪ সফর ১৪৪৭

পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির অন্দরে যা ঘটেছিল

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:০৪ এএম, ৯ আগস্ট ২০২৫ শনিবার


 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন গত কয়েক মাসে ৬ দেশের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ আগস্ট, কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়েছে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে। গত ১ আগস্ট, ২০২৫ রক্তক্ষয়ি রোয়ান্ডা-কঙ্গো যুদ্ধ থামিয়ে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এর আগে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মিরের পহেলগামে ২৬ জন পর্যটক নিহত হবার ঘটনায় ভারত গত ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানে আকস্মিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী ত্বরিতগতিতে পাল্টা হামলা চালালে ভারত আধুনিক যুদ্ধ বিমান রাফালসহ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। সূত্রে জানা গেছে, এ সময়  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রোবিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার অসিম মালিককে জরুরী ফোন করেন এবং যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হতে বলেন। অন্যদিকে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে  জরুরী বার্তা দিতে কল করে তাদেরকে যুদ্ধ বিরতিতে অংশ নিতে বলেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রোবিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশনা ও তাঁর সিদ্ধান্ত দু’দেশকে পরিস্কার জানিয়ে কঠোর বার্তা দেন। এর ফলে গত ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার এক ঘন্টা পর বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা দেন যে, ‘কিছুক্ষণের মধ্যে পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হতে যাচ্ছে’। এর পরপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক ‘পিভুটাল এন্ড প্যারামাউন্ট রোল’ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ভূমিকার জন্য এই যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়। তবে এখানে পর্দার আড়ালে সৌদি আরবের সরব ভূমিকাও ছিল। অন্যদিকে ওইদিনই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রী ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ইশহাক ডার দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির কথা সরকারীভাবে ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করেন, পাক-ভারত যুদ্ধ থামিয়ে দিতে তিনি অগ্রণি ভূমিকা পালন করেছেন। তবে ভারত সরকার বরাবরই তাঁর এই মন্তব্যের বিরোধিতা করতে থাকে। যুদ্ধবিরতির পর পাকিস্তানের সেনা প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি  হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন। দুই মাস পার না হতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান আসিম মুনির আগামী সপ্তাহে আবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসছেন বলে এনডিটিভি সূত্রে জানা গেছে। তবে পাক সেনা প্রধানের এসব সফরকে ভারত সরকার অণুবিক্ষণ যন্ত্রের নিচে ফেলে বিশ্লেষণ করছে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের যুদ্ধ বিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গতকাল বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুরে সাধারণ সীমান্ত কমিটির বৈঠককে যুদ্ধবিরতি ব্যবস্থা দৃঢ় করতে এবং আসিয়ান পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে স্বাগত জানিয়েছে। মার্কো রোবিও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমি আশা করি কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সরকার এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে তাদের অঙ্গীকারকে পুরোপুরি সম্মান জানাবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বের জন্য এবং যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া আয়োজনের জন্য আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ রয়েছি। যা সংঘাত মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গত ২৮ জুলাই বিশেষ বৈঠকের এটি প্রত্যক্ষ ফলাফল’।
এদিকে ডেমক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো (ডিআরসি) এবং রুয়ান্ডা প্রজাতন্ত্রের মধ্যে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে গত ২৭ জুন, ২০২৫ তারিখে ওয়াশিংটন ডিসিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ৩০ জুলাই থেকে গত ১ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত দুটি বৈঠকের আয়োজন করে সফলভাবে। যা ওই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা এবং টেকসই শান্তি অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
গত ১ আগস্ট, কঙ্গো এবং রুয়ান্ডার প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতকরণ কাঠামোর নীতিমালার বিষয়টি শুরু করেন। যা শান্তি চুক্তিতে বর্ণিত একটি প্রয়োজনীয় অংশ। এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে চাপ দিচ্ছেন ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জন্য। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অবসানে ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে।