রোববার   ০৩ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ১৯ ১৪৩২   ০৮ সফর ১৪৪৭

৫ আগস্ট উদ্বোধন হচ্ছে না গণভবনে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৩১ এএম, ৩ আগস্ট ২০২৫ রোববার

রাজধানীতে অবস্থিত গণভবনের ১৭.৬৮ একর জমিতে গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্মৃতি সস্বলিত চিত্র তুলেধরে তৈরি করা হচ্ছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’। আগামী ৫ আগস্ট জাদুঘর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার ঘোষণা দিলেও তা হচ্ছেনা। এমনটাই জানিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

 

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ কর্তৃপক্ষের কিউরেটর তানজিব ওয়াহাব কালবেলাকে বলেন, ‘গণভবনে জাদুঘর আগামী ৫ আগস্ট উদ্বোধন করার কথা ছিল কিন্তু তা হচ্ছেনা। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার উদ্বোধন করা যাচ্ছে না। নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’

 

জানা গেছে, নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারায় ৫ আগস্ট উদ্বোধন করার ঘোষণা দিলেও তা হচ্ছেনা। এই বিষয় নিয়ে শনিবার একটি মিটিং করেন স্মৃতি জাদুঘরে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। কাজ শেষ করে দ্রুত উদ্বোধন করা হবে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নির্বাহী প্রকৌশলী কালবেলাকে বলেন, কাজ দ্রুত করার নির্দেশনা দিলেও ইএম এর কাজ শেষ করতে পারেনি। ঠিকমতো অর্থও ছাড়া দেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু সিভিল ও ইএম কোন পার্ট নিদিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ৫ আগস্ট জাদুঘর উদ্বোধন করা হচ্ছে না। এখনো কাজ চলছে আছে। বলা হচ্ছে কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশর মতো।

 

জানা গেছে, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত গণভবনের ১৭.৬৮ একর জমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত সপ্তাহে তেজগাঁও সাবরেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে জমির লিজ দলিল সম্পন্ন হয়। জমির মালিকানা হস্তান্তর সম্পর্কিত দলিলে দাতা হিসেবে স্বাক্ষর করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং গ্রহীতা হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। জমির তফসিলে বলা হয়েছে, গণভবন বি সেক্টরে, তেজগাঁও মৌজায় অবস্থিত প্লট নং-০৫; যার আয়তন ১৭.৪৬৭৯ একর। জমিটি বিনামূল্যে বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রতিবছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে তিন হাজার টাকা খাজনা দিতে হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া জমি হস্তান্তর বা স্থাপনায় পরিবর্তন আনা যাবে না।

 

আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জাদুঘরের রূপান্তরের কার্যক্রম সমাপ্ত করতে যে ধরনের নির্মাণ বা সংস্কারকাজ করতে হবে, সেই কাজ হবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে, অর্থাৎ দরপত্র ডাকা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গত ১৫ জুলাই সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

কর্মকর্তারা কালবেলাকে জানান, দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জাদুঘরের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সরকার সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে জাদুঘর নির্মাণ ও উন্নয়নে ১১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইএম এর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪০ কোটি ৮৩ টাকা। ইএম এর কাজ করছে শুভ্রা ট্রেডার্স। এছাড়া পূর্ত অংশের কাজ করবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। সে জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

 

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচিহ্ন, শহীদদের স্মারক ও আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়নের ঘটনা তুলে ধরার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন অর্থাৎ গণভবনকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর করা হচ্ছে।

 

সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকারিভাবে জাদুঘর গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন পেতে বিলম্ব হয়। অবশেষে ৮ জুলাই নকশা অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়। তারপর কাজ দ্রুত করতে বলা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।

 

যেমনভাবে সাজানো হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর, যাতে দর্শনার্থীরা বুঝতে পারেন কেন জুলাই বিপ্লব ঘটেছিল, কীভাবে দীর্ঘ ১৬ বছর দুঃশাসন চলেছে এবং ছাত্র-জনতা কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। জাদুঘরে থাকবে শহীদদের ব্যবহৃত পোশাক, চিঠি, সংবাদপত্রের কাটিং, অডিও-ভিডিও দলিল এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ভিডিওচিত্রও। প্রতীকী গণকবর তৈরি করা হচ্ছে। জাদুঘরে ‘আয়নাঘর’ এর একটি রেপ্লিকাও তৈরি করা হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ইএম ড. মো. আশরাফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘সিভিলের সঙ্গে সমান তালে ইএম কাজ চলছে। সিভিল যে পরিমাণ কাজ হয়েছে ইএমও সেই পরিমাণে কাজ হয়েছে। কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক।’