এবার হাতকড়া ও শেকল পরিয়ে পাঠানো হল ৩৯ জনকে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:১৮ এএম, ৩ আগস্ট ২০২৫ রোববার

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শনিবার তাদের বহনকারী ভাড়া করা বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ফিরে আসাদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।
এই দফায় যারা এসেছেন, তাদের হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরানো হয়। একই ফ্লাইটে পাকিস্তানের নাগরিকও ছিলেন। পাকিস্তান হয়ে এই ফ্লাইট ঢাকায় আসে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি অনুযায়ী এর আগে বিভিন্ন সময় ১১৮ জনকে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের হাতকড়া ও শিকল পরানো হয়নি। শনিবার যারা এসেছেন, তাদের অনেকের চোখেমুখে ছিল প্রচণ্ড ক্লান্তির ছাপ। অনেকেই ছিলেন বিমর্ষ, বাক্রুদ্ধ।
ফেরত আসাদের মধ্যে আছেন ঢাকার জিনজিরার বাসিন্দা মো. ফাহিম ও তাঁর বাবা জুলহাস উদ্দিন। শনিবার রাতে ফাহিম সমকালকে বলেন, ‘হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আমাদের আনা হয়েছে। সিটে খুব কষ্ট করে বসেছিলাম। পাউরুটি, পানি ছাড়া কোনো খাবার দেয়নি। পানি ও পাউরুটি চাইলে নিয়ে আসত। কষ্ট করে খেয়েছি। টয়লেটে যাওয়ার কথা বললে অফিসার নিয়ে যেতেন। এর পর আবার হাতকড়া ও শিকল পরানো হতো। ফ্লাইটে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর প্রেশার বেড়ে যায়। কান্নাকাটি শুরু করে দেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য হাতকড়া ও শিকল খুলে দেওয়া হয়েছিল। ফ্লাইটি ঢাকায় অবতরণের পর হাতকড়া ও শিকল খুলে যাত্রীদের নামানো হয়। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ফ্লাইটে ছিলাম। পাকিস্তানিদের নামানোর পর ফ্লাইট কাতার যায়। সেখান থেকে ঢাকায় আসে।’
ফাহিম আরও বলেন, কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পর সেখানে তারা আটক হন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রথমে তারা কানাডায় গিয়েছিলেন।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান সমকালকে বলেন, ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘন ও অবৈধভাবে বসবাস করলে তাদের যে কোনো দেশ ফেরত পাঠাতে পারে। তবে হাতকড়া ও শিকল পরানো মানবাধিকার লঙ্ঘন। ৩৯ জনকে হাতকড়া ও শিকল পরানো হয়েছে। যারা অবর্ণনীয় কষ্টের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। অনেকে বিমর্ষ ছিলেন।
শরিফুল হাসান আরও বলেন, আমরা যতটা জেনেছি, কেউ কেউ ঘরবাড়ি বিক্রি করেছেন, ধারদেনা করেন। কেউ ৩০ লাখ, কেউ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে মেক্সিকো বা দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে অনিয়মিত পন্থায় পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন।
ফেরত আসা একজন বলেন, ‘আমরা অপরাধী নই, আমরা তো আশ্রয় চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে ভয়ংকর বন্দিদের মতো।’
ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করেছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। তাদের কাউকে হাতকড়া পরানো হয়নি। ফেরত পাঠানোর আগের বিভিন্ন স্তরের আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মানবিক আচরণের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়াও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ভারত, ব্রাজিলসহ অনেক দেশের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান।