শনিবার   ০২ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ১৮ ১৪৩২   ০৭ সফর ১৪৪৭

কবির জন্য একটি সন্ধ্যা

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৮ এএম, ২ আগস্ট ২০২৫ শনিবার

  
 

 
আড্ডা মানেই প্রাণের উচ্ছ্বাস। এমন একটা সময়, যেটা আমরা মনেপ্রাণেই চাই। কখন হবে, কোথায় হবে, কারা আসবেন-এসব প্রশ্ন ঘুরতে থাকে মাথার ভেতরে।
আর যদি শুনি অতিথি একজন খ্যাতিমান কবি ও কথাসাহিত্যিক, তাহলে তো প্রাণের ছন্দ আরও গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে। এবারের সাহিত্য আড্ডার বিষয় ছিল-"কবির সাথে কবিদের আলাপন" , যেখানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন কবি মাহবুব আজীজ।

মাহবুব আজীজ-একটি পরিচিত নাম, এক সমৃদ্ধ সত্তা। নব্বই দশকে কবিতা দিয়ে সাহিত্যজগতে আত্মপ্রকাশ করা এই মানুষটি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও নাটক রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক সমকালের উপসম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

এই গুণী মানুষ যখন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার অফিসে অতিথি হয়ে আসেন, তখন আমরা সবাই যারপরনায় আনন্দিত হই। ২৮ জুলাই সোমবার। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হলেও প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে সকলে ছুটে এসেছিলাম কবির সাথে একটু সময় কাটানোর আশায়।

 

 

প্রথম আলোর কক্ষটি কানায় কানায় পূর্ণ। কবি এসেছিলেন তাঁর কিশোরী কন্যা রূপকথাকে সঙ্গে করে। কবির ঝাঁকড়া চুল দেখে অনেকের মনে পড়ে গিয়েছিল নজরুলকে। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী স্বভাবসুলভ হাস্যরস ও উষ্ণতা নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রথম সারির যে কয়টি দৈনিক পত্রিকা আছে, সমকাল তার মধ্যে অন্যতম। কবি আজিজ দীর্ঘদিন ধরে এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। একটি পত্রিকা তাঁর কাছে পরিবারের মতো।” কবিও বলেন, “আমার কন্যা রূপকথা যেভাবে আমাকে ভালোবেসে আগলে রেখেছে, সমকাল পত্রিকাও আমার কাছে তেমনি এক অনুভূতি। আমার জীবনেরই আরেক রূপ।”

কবি মাহবুব আজীজ বলেন, “আমার দুই কন্যা আমার জীবনকে স্থিতি দিয়েছে, জীবনবোধকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে। আমরা যে বোধ নিয়ে বড় হয়েছি, যে চিন্তা লালন করেছি, তার সামান্য অংশও যদি পরবর্তী প্রজন্ম গ্রহণ করে-তাহলেই আমরা সার্থক।”

প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা দেখে তিনি আশাবাদী। বলেন, “এই প্রবাসেই একদিন জন্ম নেবে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি ও লেখকেরা।”

এরপর কবি তাঁর নিজের কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেন। কবির আবৃত্তির গভীরতা ছিল যেন এই গরম বিকেলে এক পশলা শান্তির বৃষ্টি। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনি তাঁর আবৃত্তি-নিরবতা ছাপিয়ে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া শব্দের ঢেউ।

কথা বলেছেন কবিকন্যা রূপকথা। রূপকথা লেখাপড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। বাবাকে নিয়ে কবি সাহিত্যিকদের আড্ডা কেমন হয়, তা দেখার জন্য তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে বলে জানান।

 

 

এর আগে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় " কবিতার এক পাতা"র সম্পাদক কবি ফারুক ফয়সল মাহবুব আজীজকে নিয়ে কথা বলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের এ কবি ও পত্রিকার উপসম্পাদককে সকলের কাছে পরিচয় করিয়ে দেন।
এরপর শুরু হয় আমাদের চিরচেনা চা-পর্ব। চা-নাশতা শেষে জাকির হোসেন গেয়ে শোনান “প্রথমত আমি তোমাকে চাই, শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে চাই”-তার কণ্ঠে ভেসে আসে প্রেমের গভীর সুর।

সুরের আবেশ মুছে না যেতেই শুরু হয় ফটোসেশন। কবিকে বিদায় জানিয়ে সবার ঘরে ফেরা। তবে মনে রয়ে যায় একটি প্রশ্ন-আবার কবে দেখা হবে, অন্য কোনো খানে, অন্য কোনো আয়োজনে।

এ দিনের আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, সাহিত্য সম্পাদক এইচবি রিতা, মাহবুব রহমান, ফারুক ফয়সাল, জাকির হোসেন, শামস চৌধুরী রুশো, মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, দীপক কুমার আচার‌্য, হুমায়ুন কবির লিটন, মিয়া এম আছকির, ভায়লা সালিনা, সোহানা নাজনীন, বদরুন নাহার, রাশিদা আক্তার, ইসরাত জাহান ইভা, রওশন জাহান, রূপকথা, উৎবা চৌধুরী, জেবুন্নেসা জোৎস্না এবং ফরিদা ইয়াসমীন প্রমুখ।
আড্ডা শেষ হলেও মনের ভেতর তার রেশ রয়ে গেছে। শব্দ, সুর আর স্মৃতির এক অপূর্ব সন্ধ্যা, কবির জন্য। (লেখক-ফরিদা ইয়াসমিন)