চাঁদাবাজ, সেলফিবাজ, তেলবাজদের অভয়াশ্রম এনসিপিতে হবে না: হাসনাত
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:০২ এএম, ২৯ জুলাই ২০২৫ মঙ্গলবার

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা সবসময় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, একটি গোষ্ঠী আমাদের নাম পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মী যারা আছেন তারা মুখে মুখে বলেন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত; কিন্তু আপনারাই করেন চাঁদাবাজি। এগুলো আমরা বরদাশ্ত করবো না।
সোমবার বিকেল ৫টায় ময়মনসিংহের টাউন হল মোড়ে শহীদ মিনার চত্বরে এনসিপির কেন্দ্রীয় পদযাত্রা শেষে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের লক্ষ লক্ষ কর্মী দরকার নাই। চাঁদাবাজের অভয়াশ্রম এনসিপিতে হবে না। যারা সবসময় এসেছেন তারা সাবধান হয়ে যান। আরেক ধরনের নেতাকর্মী রয়েছে, এরা হচ্ছে তেলবাজ, এরা হচ্ছে সেলফিবাজ। এদের আপনারা প্রশ্রয় দেবেন না। এরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নেতা এবং প্রশাসনের সঙ্গে সেলফি তুলে ব্যবসা করে। এদের প্রতিহত করবেন। আগে নিজের ঘরে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন এবং থানা লেভেলে প্রতিটি ঘরে ঘরে আপনারা যাবেন। সবাইকে গিয়ে বুঝাবেন, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাবেন। আপনারা নিজের টাকায় প্রোগ্রাম করেছেন। আমাদের দল থেকে কোনোরূপ সহযোগিতা করা হয়নি। সামনে রাজনীতি করতে হলে নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে জনগণকে বুঝাতে হবে। এই দেশ শতগুণে আপনাদের অবদানকে ফিরিয়ে দেবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে সবাইকে এনসিপির প্রয়োজনীয়তা বোঝাবেন।
এসময় তিনি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের দিকনির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে যাবেন বলে জানান। রাজনীতির জন্য প্রয়োজনে নিজের জীবন বিলিয়ে দেবেন বলেও মঞ্চে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তার ভাষণে বলেন, ময়মনসিংহ জেলা প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে জমিদারি প্রথা ও ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৃষক আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বা 'সূতিকাগার' হিসেবে পরিচিত। আমরা সেই কৃষকের সন্তান। আমাদের বাবারা পরিশ্রমের টাকায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কী দেখলাম? পড়া শেষ করে আমাদের কোনো চাকরি নেই। আমাদের সঙ্গে চরম বৈষম্য হচ্ছে। চাকরিতে কোটা প্রথা চালু ছিল। এই কোটার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে আমাদের শত শত ছাত্র শহীদ হলেন।
তিনি বলেন, পড়ালেখা শেষ করে ময়মনসিংহের ছাত্ররা কোনও কাজকর্ম করতে পারে না এখানে। চাকরি এবং কাজের সন্ধানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বাসিন্দাদের গাজীপুর টঙ্গী উত্তরায় কাজ করতে যেতে হয়। রিক্সাওয়ালা, দিনমজুর, ছাত্র ও গার্মেন্টস কর্মী উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে শহীদ হন। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার ৪১ জন শহীদ হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকার শুধু গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেনি। তারা পরিবেশের প্রাণ নদীগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা সেই নদীগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। আমরা পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের পাশাপাশি সুষম বণ্টন করতে চাই। ময়মনসিংহ সংস্কৃতির জেলা। ছোটবেলা থেকেই ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন লোকজ গান শুনে বড় হয়েছি। এ সময় তিনি ময়মনসিংহের কৃতি সন্তান আবুল মনসুর আহমেদের কথা স্মরণ করেন।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, আপনারা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটি আমরা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এটাকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রথম ১৫ দিন কোনও বাধা ছাড়াই সারাদেশে পদযাত্রা করেছে। এটি আওয়ামী লীগের সহ্য হয় নাই। আপনারা দেখেছেন, গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার নির্দেশে তার দোসররা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
দেশ গড়তে জুলাই পথযাত্রা স্লোগানে অনুষ্ঠিত এ মঞ্চে কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক ও ময়মনসিংহ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী জাভেদ রাসিনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।
এছাড়াও স্থানীয় নেতাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংগঠক আবুল বাশার, ইকরাম এলাহী খান, এটিএম মাহবুবুল আলম, আশিকুর রহমান, মোজাম্মেল হক প্রমুখ।