আমরা নতুন সরকার পেয়েছি, নতুন দেশ এখনও পাইনি: নাহিদ ইসলাম
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৩৫ এএম, ২৭ জুলাই ২০২৫ রোববার

কিশোরগঞ্জের পদযাত্রা কর্মসূচিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকার পেলেও নতুন দেশ এখনও পাইনি। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান আদায় করে জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদের মাধ্যমে আমরা ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ঐক্যবদ্ধ হবো। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি ওয়াদাবদ্ধ, নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির সমালোচনা করে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের মানুষ রাষ্ট্রপতি পেয়েছে। কিন্তু তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার পাচ্ছে না। কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। হাওরের শিশুরা শিক্ষার অধিকার পাচ্ছে না। কিশোরগঞ্জে সুপেয় পানির সঙ্কট আছে। আপনাদের এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তারা বাংলদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল।’
শনিবার কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা এলাকায় তিন রাস্তার মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা বক্তৃতা করেন। নেতারা মৌলভীবাজার থেকে এসে রাত ৮টায় সভা মঞ্চে উপস্থিত হন। রাত ৯টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বক্তৃতা চলে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেত্রী নাদিয়া শারমিন, যুগ্ম-সদস্য সচিব আহনাফ সাঈদ খান, কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) খায়রুল কবির, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন প্রমুখ।
কর্মসূচিতে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসররা এখনও বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আছে। কিশোরগঞ্জে এখনও অনেক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তরুণরা রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি। গণঅভ্যুত্থানের পরও এই তরুণদের যদি কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে বাংলাদেশকে আর কখনই গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে তরুণদের নেতৃত্বে।’ এ সময় তরুণদের ওপর আস্থা রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদানের জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
নাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫৪ বছরে যে দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা, যে মাফিয়াতান্ত্রিক লুটেরা রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেই রাষ্ট্রের পরিবর্তন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি। জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবে।’ শহীদ পরিবারগুলোকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এখনও হুমকি দিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
পথসভায় আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকেই বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ বলতে চায়। এখানে সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করছে। বাংলাদেশে নারীরা নিরাপদ নয়। কোনো যুবকের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হলে ছাত্রীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।’ আজকে ফিলিস্তিনীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়নের দাবি জানান। আখতার বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেছে। আর কত অপেক্ষা করবেন। অতি দ্রুত আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বুকের রক্ত দিয়ে ফ্যাসিক্ট সরকারকে পরাজিত করেছি। কিন্তু নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দেবো না। অনেকেই নতুন করে চাঁদাবাজি করছে। সবাইকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতের হবে। নিজের বাবাও যদি দুর্নীতি করে, এর প্রতিবাদ করতে হবে। বাবাকে প্রশ্ন করতে হবে, তুমি ২৪ হাজার টাকা বেতন পাও, ৪০ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দাও কী করে।’ ফিলিস্তিনে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘অনেকে না খেয়ে মারা যাচ্ছে।’ জাতিসংঘ কোওন দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
পথসভায় এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য আহ্বায়ক সামান্তা শামিন, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, সিনিয়র মুখ্য সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কিশোরগঞ্জে পথসভা শেষ করে নেতৃবৃন্দ রাতেই নেত্রকোণায় চলে যান।
সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। নেতাদের আগমন উপলক্ষে শহরে বেশ কিছু তোরণ নির্মাণ করা হয়। বহু প্লাকার্ডও ঝোলানো হয়। সমাবেশ চলাকালে শহরের প্রধান সড়ক স্টেশন রোডে অন্তত ৫ ঘণ্টার জন্য সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এর প্রভাবে তীব্র যানজট তৈরি হয় শহরের অন্যান্য সড়কেও।
এই সমাবশেকে কেন্দ্র করে জনমনে এক ধরনের চাপা উত্তেজনাও ছিল। বিভিন্ন আইডি থেকে এনসিপিকে প্রতিরোধের হুমকি দেওয়া হয়। এসব আইডিকে ফেক আখ্যা দিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে এসব প্রচারণায় মানুষকে বিভ্রন্ত না হওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পথসভা সমাপ্ত হয়।