রোববার   ২৭ জুলাই ২০২৫   শ্রাবণ ১১ ১৪৩২   ০১ সফর ১৪৪৭

যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের বিক্ষোভ

সেনাবাহিনীকে নিষিদ্ধের দাবী

আজকাল রিপোর্ট

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:১৫ এএম, ২৬ জুলাই ২০২৫ শনিবার


       



যুুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক কর্মী সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার ও এনসিপির কার্যক্রমকে দুঃশাসন আখ্যা দিয়ে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে এমন দাবি জানান।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণমাধ্যমে প্রদত্ত বক্তব্যে সেনা প্রধান ওয়াকারউজ্জামান অঙ্গীকার করেছিলেন যে তিনি জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে 'ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা' দিয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু বাস্তবে জানমালের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।

বক্তারা বলেন, ৫ আগস্ট থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শতশত নেতা-কর্মী-সমর্থককে প্রকাশ্যে হত্যা, তাদের বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটতরাজ শেষে জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনটি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর সামনে। কখনো সেন-াবাহিনীকে তৎপর হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
তারা বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে সেনাবাহিনী। এ কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের ন্যূনতম যোগ্যতাও থাকতে পারে না সেই বাহিনীর কোন সদস্যের-এমন গুরুতর অভিযোগে বক্তব্য প্রদানের পর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের প্রতিবাদী জনসাধারণের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। ইউনূস সরকারের মদদে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্তত: ৯ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফনে বাধ্য করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৬ জুলাই যুক্ত হয়েছে আরেকটি কালো অধ্যায়। এ দিনটি যেন একাত্তরের ২৫ মার্চের বিভীষিকাকেও নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে। এদিন গোপালগঞ্জে যা ঘটেছে, তা কোনো রাজনৈতিক উত্তেজনা নয়। এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত, নির্মম, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নগ্ন উদাহরণ। সেদিন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার রক্তাক্ত পরিণতি ঘটেছে। এই ঘটনা ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত দাগ হয়ে থাকবে। এটি আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত। এই ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি। এর দায় রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরের। এই ঘটনা বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃত চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গোপালগঞ্জে গণতন্ত্রের কবর রচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এন-সিপি) দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই 'মার্চ টু গোপালগঞ্জ' ও সমাবেশের ডাক দেয়। কিন্তু এই তথাকথিত কর্মসূচির আড়ালে ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তাদের লক্ষ্য ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি গোপালগঞ্জকে কলঙ্কিত করা। । তাঁর স্মৃতি ও আদর্শকে অপমান করা। সর্বোপরি জাতির পিতার মাজারে আঘাত হানার মতো জঘন্য সন্ত্রাস সৃষ্টি করা। গোপালগঞ্জবাসী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং জাতির মর্যাদা রক্ষায় রাজপথে নেমেছিল এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে। নারী, তরুণ এমনকি বৃদ্ধরাও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দেশদ্রোহী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে। জনসাধারণের এই প্রতিরোধ আন্দোলনের জবাবে যা ঘটল তা কল্পনাকেও হার মানায়। অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রছায়ায় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার-সহ সকল রাষ্ট্রীয় বাহিনী গোপালগঞ্জে আসে এক ভয়ঙ্কর অভিযান চালাতে। জনতার ওপর গুলি চালায়। লাঠিচার্জ করে। বুটের তলায় মানবতা। রাস্তায় পড়ে থাকা নিরীহ মানুষকে বুট দিয়ে পিষে মারার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে দেশের গণমাধ্যম। সেদিন ৯ জন নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন শতাধিক। রাজপথে আহত মৃত্যুপথযাত্রী তরুণ সোহেল রানাকে টেনে-হিঁচড়ে রাজপথে বুটের তলায় গলা চেপে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এ দৃশ্য দেখে কাঁদেনি এমন মানুষ নেই। সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায় রমজান কাজী নামের আরেক তরুণকে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতিত হতে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার রক্তাক্ত, গুলিবিদ্ধ লাশ। রমজানের অপরাধ, সে বঙ্গবন্ধুর সমাধি রক্ষা করতে চেয়েছিলেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রশংসিত সেনাবাহিনী কীভাবে নিজ দেশে এত নিষ্ঠুর হতে পারে? এ প্রশ্ন উঠেছে আজ বিশ্বজুড়ে। গোপালগঞ্জে যা ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের প্রতি স্পষ্ট অবমাননা। নিরস্ত্র জনতার উপর সরাসরি গুলিবর্ষণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে গোপালগঞ্জে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে।

নিহতদের পরিবার জানিয়েছে, তাদের সন্তানদের মরদেহ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো সরকারি সহায়তা আসেনি, বরং লাশ নিয়ে 'ঝামেলা না করতে' হুমকি এসেছে প্রশাসনের তরফ থেকে। গণতন্ত্রে যেখানে প্রতিটি প্রাণের মূল্য থাকার কথা, সেখানে গোপালগঞ্জে জীবন মানে শুধু শংকা। রাষ্ট্র চায় এই রক্তের দাগ মুছে ফেলতে। সত্য গোপন করতে।

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরল আমিন বাবু। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওযামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. মাসুদুল হাসান, সহ-সভাপতি সামছুদ্দীন আজাদ, আশরাফ উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমদাদ রাজু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল হামিদ, কার্যকরী সমস্য শাহানারা রহমান, জহিরুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ শাহনাজ, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, যুবলীগের সাবেক
কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ নেতা শেখ জামাল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইকবাল হোসেন ,গোলাম কিবরিয়া ও ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান।

এ সময় জানানো হয়, আজ শুক্রবার ২৫ জুলাই বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে আবারো মানববন্ধন শেষে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে ট্রাম্প প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনায়।