বাংলাদেশে ন্যায় বিচার, সংস্কার ও ভূ-রাজনীতিই প্রাধান্য
হাসান মাহমুদ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩৬ এএম, ১৯ জুলাই ২০২৫ শনিবার

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ নিয়ে সেমিনার
বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র’ টানা ১৬ বছর নিষ্পেষিত হবার পর অপরাধি গোষ্ঠি দেশ ছেড়ে পালায়; অপরাধিদের অনেকে প্রভাবশালীদের আশ্রয় গ্রহণ করে। অসংখ্য ছেলে-মেয়ে ও জনতার জীবনের বিনিময়ে গত বছর ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যাত্রা এখন কোন পথে? তা নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে হয়ে গেলো ‘ন্যায় বিচার, সংস্কার ও গণতন্ত্রের পথে যাত্রা- আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক আলোচনা অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শাসকদের বিদায়ের এক বছর পূর্তিতে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। গত ১৫ জুলাই সকালে প্রথম আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান লয়েট ডগেট। ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএস ক্যাপিটল হিলের ভিজিটর সেন্টারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৮০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও পেশাজীবীরা অংশগ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারক, মার্কিন কংগ্রেসম্যান, থিংক ট্যাংকের প্রতিনিধি, প্রবাসী বাংলাদেশি, সাংবাদিক এবং গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা উত্থানোত্তর বাংলাদেশে বর্তমান গণতন্ত্র, শাসন ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আইনী সংস্কার এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা এবারের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।
‘ন্যায় বিচার, সংস্কার ও গণতন্ত্রের পথে যাত্রা- আজকের বাংলাদেশ’ একটি সময়োপযোগি বিষয় ছিল বলে অংশগ্রহণকারীরা অভিমত দিয়েছেন। আলোচনায় কোন কোন অংশগ্রহণকারীরা ২০২৪ এ দেশব্যাপি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত নতুন এক বাংলাদেশকে দেখতে চেয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন। অভ্যুত্থানের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও এর ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকার পরিবর্তন নিয়ে আলোচকগণ বক্তব্য রাখেন।
‘বাংলাদেশ আমেরিকা অ্যালায়েন্স’, ‘রাইট টু ফ্রিডম-আর টু এফ’ এবং ‘বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (বিআরএআইএন) যৌথভাবে এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।
নিউ ইয়র্কস্থ সংগঠন বাংলাদেশী আমেরিকান প্রবাসী এলায়েন্স-এর পক্ষ থেকে সংগঠনটির চিফ কোঅর্ডিনেটর আহমেদ সোহেল, মূলধারার রাজনীতিবিদ মিজান চৌধুরী, কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট আনিসুল ইসলাম জাসির অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। বাংলাদেশে ২.০ গঠনের পথে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচনায় উঠে আসে।
কংগ্রেসম্যান লয়েড ডগেট মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য সমর্থনের আহ্বান জানান। কংগ্রেসম্যান জিম ম্যাকগভার্ন মানবাধিকার এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ আমেরিকা অ্যালায়েন্স-এর সহ-সভাপতি ফারহানা সুলতানা এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন এবং অভ্যুত্থানের চলমান প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করেন।
এরপর দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যার শেষে বক্তারা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জোরদার করার আহ্বান জানান। বক্তারা জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের সময় প্রদর্শিত সাহসের প্রশংসা করেন এবং বলেন, এই সাহস এখনো আশার উৎস হিসেবে কাজ করছে।
প্যানেল ১ পরিচালনা করেন ফারহানা সুলতানা। এতে অংশ নেন ক্যাথরিন কুপার (আরএফকে হিউম্যান রাইটস), ঔরনি সেমন্তি খান (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং দিনা সিদ্দিকী (নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়)। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করেন।
প্যানেল ২ পরিচালনা করেন শামারুখ মোহিউদ্দিন (ক্যাডমাস গ্রুপ)। এতে অংশগ্রহণ করেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল মোজেনা, মাইকেল কুগেলম্যান (ফরেন পলিসি), মৌসুমি খান (এশিয়া গ্রুপ), এবং এহতেশামুল হক (আমেরিকান ইউনিভার্সিটি)। তারা বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক কৌশল এবং বৈশ্বিক অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
আয়োজকরা আশা করছেন, এবারের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন, কংগ্রেস এবং নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে গভীরতর উপলব্ধি অর্জনের একটি কার্যকর প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।