বুধবার   ০৯ জুলাই ২০২৫   আষাঢ় ২৫ ১৪৩২   ১৩ মুহররম ১৪৪৭

সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে ৫০ লাখ টাকা ঘুস দাবির অভিযোগ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫১ এএম, ৯ জুলাই ২০২৫ বুধবার

ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে ৫০ লাখ টাকার ঘুস দাবির অভিযোগ উঠেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বিরুদ্ধে। গত ৪ জুলাই ধানমন্ডি ৮/এ বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে ডেকে এই ঘুস দাবি করেন উপাচার্যের পিএস আমিনুল আক্তার।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন সিটি কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক কাজি নেয়ামুল হক। তবে এই অভিযোগকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

সংবাদ সম্মেলনে কাজি নেয়ামুল হক বলেন, গত ১৩ জুন ঢাকা সিটি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের পরীক্ষা হয়। এতে আমি প্রথম স্থান অধিকার অর্জন করি। পরের দিন ১৪ জুন গভর্নিং বডির সভায় আমাকে অধ্যক্ষ নিযুক্ত করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির পূর্বানুমতির জন্য প্রেরণ করা হয়।  কিন্তু অদ্যাবধি ভিসি অনুমোদন নিয়ে গড়িমসি করছে। অথচ যে নিয়োগ কমিটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি-২ নিজেই উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায়  ভিসির পিএস আমিনুল আক্তার আমাকে ধানমন্ডি ৮/এ বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে ডাকেন। এসময় আমার সঙ্গে তিনজন সহকর্মী ফকির মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, বাদশাহ আলমগীর ও জাহাঙ্গীর হোসেন যাদের  উপস্থিতিতে আমিনুল আক্তার ভিসির পক্ষে  ৫০ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। আমি সরাসরি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করি।

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাসিস্টের দোসর তৎকালীন অধ্যক্ষ বেদার উদ্দিন আহমেদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করায় ছাত্রদের দাবির মুখে নিজে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। কিন্তু এর পূর্বে ফ্যাসিস্টের প্রত্যক্ষ মদদদাতা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পদাধিকারির ছয়জন শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার করে। বহিষ্কৃত শিক্ষকরা হলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর উপ-সম্পাদক দেলোয়ার রহমান দীপু,মহিলা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদিকা চৈতালী হালদার, ঢাবি মৈত্রী হল ছাত্রলীগ সম্পাদক ফরিদা পারভীন, ঢাবি জসীম উদ্দিন হল ছাত্রলীগ সভাপতি আল ফয়সাল, তাপস মনোনীত ঢাকা মহানগর ট্যাক্স লইয়ারর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব রাজা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের চাচাতো ভাই কায়কোবাদ সরকার।

কাজি নেয়ামুল হক বলেন, এই সকল ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের জন্য ভিসি আমানুল্লাহ বারবার চাপ দেয়। এতে আমাদের গভর্নিং বডি ও কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী প্রতিবাদমুখর হয়। তাদের পুনর্বাসন করতে অস্বীকার করায় ভিসি বিরাগভাজন হয়ে অন্যায়ভাবে গভর্নিং বডি চেয়ারম্যান ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য নিয়োগ দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, অভিযোগ একেবারেই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমার কোনো স্টাফ কারও কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অভিযোগকারীকে ঘুস দাবির বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠানের কোনোটি গত ১১ মাসে আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনতে পারেনি।

উপাচার্য আরও বলেন, সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রফেসর নেয়ামুল একাই একজন প্রার্থী। তাই নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আপাতত নিয়োগটি স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়া কলেজটির সভাপতি পদে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের  নির্দেশ হচ্ছে কোনো কলেজের সভাপতি পদে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকতে পারবেন না। তাই সিটি কলেজের  সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ কারণে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার স্টাফদের বিরুদ্ধে ঘুস দাবির মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। এই অভিযোগ তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে। নতুবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিসিপ্লিনারি একশনে যাবে।