কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ শুল্ক চুক্তি, অপেক্ষা এনেক্সার
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:০৬ এএম, ৮ জুলাই ২০২৫ মঙ্গলবার

যুক্তরাষ্ট্র শিগগির কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। শিগগির এ নিয়ে আলোচনায় বসবে বাংলাদেশও। এর মধ্যে অন্যান্য দেশকে নতুন শুল্কহার জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এসব শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে কী ধরনের পারস্পরিক শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) সমঝোতা হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার হওয়া যায়নি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভকে (ইউএসটিআর) প্রস্তাবিত পারস্পরিক শুল্ক চুক্তির এনেক্সার (ব্যাখ্যা) হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে ডকুমেন্ট দেওয়ার কথা সেটা না পাওয়ায় বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া পিছিয়ে গেছে।
সোমবার (৭ জুলাই) বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমার আজ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল। তবে গত ৩ জুলাই মিটিংয়ে তাদের সিদ্ধান্তের এনেক্সার এখনো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ এখন তারা পাল্টা কী সুবিধা চায় তার কোনো ব্যাখ্যা নেই আমাদের কাছে।
তিনি বলেন, চুক্তির ওয়াকিং ডকুমেন্ট হলো এনেক্সার। এখন ওখানে যাওয়ার পর তারা যদি গাড়িতে শূন্য শুল্ক চায়, সেটা কি সম্ভব? আবার ধরেন সেটা দেবো, তাহলে আমাদের সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয় আছে। সেটা করা যাচ্ছে না।
সচিব বলেন, তারা এনেক্সার পাঠালে তখন আমরা একদিন-দুদিনের মধ্যে পজিশন ঠিক করে ওদের সঙ্গে আবারও বৈঠকের চেষ্টা করবো। তারা ওই সময় বলেছিল, ৮-৯ তারিখের আগে এনেক্সার পাঠাবে। যদিও তারা বলেছিল, আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) এলডিসি নিয়ে ভাবছি।
সম্ভাব্য এ বৈঠক প্রসঙ্গে সচিব বলেন, শিগগির বৈঠক হতে পারে। এতে উপদেষ্টা অংশ নেবেন। আমরা অনলাইনে যুক্ত থাকবো। তবে বৈঠকের তারিখ এখনো চূড়ান্ত করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শূন্য শুল্ক দিয়ে ভিয়েতনাম এক ধাক্কায় পারস্পরিক শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার পর বাংলাদেশ ওয়াশিংটনের চাহিদা অনুযায়ী তাদের পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে। ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা পূরণে মার্কিন পণ্যে শূন্য শুল্ক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি এখন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে ঢাকা।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত পারস্পরিক শুল্ক চুক্তির এনেক্সার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে ডকুমেন্ট বা ট্যারিফ শিডিউল পাঠাবে, তা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে ঢাকা।
তবে চুক্তির খসড়ায় উল্লেখিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আইন অনুসরণ করা সম্ভব নয় জানিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের আওতায় চুক্তি স্বাক্ষরের আগ্রহের কথা ইউএসটিআর’কে জানিয়েছে ঢাকা।
এর আগে বাণিজ্য সচিব জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ট্যারিফ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আমাদের তেমন কোনো আপত্তি নেই। সরকারিভাবে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, এলএনজি, গমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের এমন অবস্থান সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির এনেক্সার ডকুমেন্ট পাঠায়নি। দ্রুত ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে এ নথি পাওয়ার প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।
গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ পারস্পরিক শুল্কসহ বিভিন্ন দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যূনতম ৯ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বাস্তবায়ন করে অবশিষ্ট শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন, যার মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল। রোববার (৬ জুলাই) আবার মেয়াদ ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে নিজেদের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে এই চুক্তির বিষয়ে ইউএসটিআরসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের ওপর আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হবে বলে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক তুলে নেওয়ার পর ভিয়েতনামের শুল্ক কমাচ্ছে ওয়াশিংটন। যে কারণে পোশাক শিল্পের বাংলাদেশি এ প্রতিদ্বন্দ্বীর সুবিধা আরও চাপ তৈরি করেছে।
তবে গত ৩ জুলাই রাতে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আগামী ৯ জুলাই ওয়াশিংটনে পরবর্তী বৈঠক হবে। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চুক্তির এনেক্সার ডকুমেন্ট পাঠানোর কথা ছিল।
ইউএসটিআরের ওই বৈঠকে সশরীরে অংশ নিতে চেয়েছিলেন বাণিজ্য সচিবও। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে চুক্তির এনেক্সার ডকুমেন্ট না পাওয়ায় তিনি যাননি।
তিনি বলেন, এনেক্সার পাওয়ার পর টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে মিটিং করে বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত করার পর আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাবো।