ইউনূস-সিইসি’র একান্ত বৈঠক
পর্দার আড়ালে কী ঘটছে!
মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:২৪ এএম, ২৮ জুন ২০২৫ শনিবার

পর্দার আড়ালে আলোচনা লন্ডন থেকে শুরু হয়। মুহাম্মদ ইউনূস সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত আলাপে লিপ্ত হন। তার অনেক দিন পর বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করলেন। একান্ত আলোচনার বিষয় বস্তু প্রকাশ করা হয়নি। তবে নির্বাচনী আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে তা নিশ্চিত। এ বৈঠক নিয়ে গুঞ্জনের পাখা মেলছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে জামায়াত, এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদের রহস্যজনক আচরন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক তাৎপর্যপূর্ন। অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চার সমীকরণ মেলাচ্ছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আভাস দেয়া হয় যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে। সেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার লক্ষ্যে কোনও দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এটাই সরল অনুমান। বাস্তবে বিষয়টা অন্য কিছুও হতে পারে। নাও হতে পারে। কারণ ওয়ান ওয়ান বৈঠকের বৈশিষ্ট হলো, এতে দুই জনের কোনও একজন বিষয়বস্তু প্রকাশ না করলে কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে পারিপাশির্^ক কর্মকান্ডে কিছুটা অনুমান করা যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন তবে অনুমান সঠিক বলে ধরে নেওয়া যায়।
তারেক রহমানের নামে কোনও মামলা অবশিষ্ট নেই। তিনি কবে ফিরবেন তার কোনও দিনক্ষণ কেউ বলতে পারছে না। বিএনপি নেতারা বলছেন, উপযুক্ত সময়ে তিনি দেশে আসবেন। তিনি নিরাপত্তাজনিত হুমকির মধ্যে আছেন বলে বিএনপি’র কোনও কোনও নেতার দাবি। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। কোনও মানুষেরই নিরাপত্তা নেই। তার ওপর তারেক রহমান উচ্চঝুঁকির মানুষ হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক। জুলাইয়ে তিনি ফিরবেন বলে কেউ কেউ মনে করেন। তবে অনেকের ধারণা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর পরই তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরবেন। তারেক রহমান বাংলাদেশে আসার দিনে ঢাকায় বিমানবন্দরে ২০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে বলা হচ্ছে। এরিমধ্যে জিয়া পরিবারের অনেক সদস্যই ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান ভোটার হবার লক্ষ্যে নিবন্ধন করেছেন। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান ২০২২ সালেই ভোটার হয়েছেন। জিয়া পরিবারের রাজনীতির উত্তরাধিকার ব্যারিষ্টার জাইমা রহমানও রাজনীতিতে সক্রিয়।
জামায়াতে ইসলামী আবার নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে। তাদের দলীয় নির্বাচনী প্রতীক দাড়িপাল্লাও ফেরত পেয়েছে। জামায়াতে ইসলামের টার্গেট সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়া। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় ফাঁকা মাঠে গোল দেবার ব্যাপক প্রস্তুতি জামায়াতে ইসলামীর। আওয়ামী লীগ আমলে দলটি নিষিদ্ধ হয়েছিলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নিবন্ধনও বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। শেখ হাসিনার পতনের পর স্বাধীনতা বিরোধী খ্যাত জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন ঘটে। নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পর তাদের সামনে এখন ভোটের হিসান নিকাশ। জামায়াতে ইসলামী এরিমধ্যে প্রায় প্রতিটি আসনে তাদের একক প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে।
ভোটের রাজনীতিতে নতুন দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) কতটা কী করতে পারে সেটা সামনে বোঝা যাবে। শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে সম্মুখভাগে থাকা দলের তরুণ নেতারা ভোটে এককভাবে কিছু করতে পারাটা বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। অনেকে মনে করেন, দলটি শেষ পর্যন্ত বিএনপি কিংবা জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়তে পারে। কিংবা প্রথাগত রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে এককভাবে মাঠে নামতে পারে। এনসিপি এখনও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি। তবে দলটি নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েছে। নিবন্ধনের আবেদনের জন্যে সকল ক্রাইটেরিয়া পূরণ করেছে। অর্থাৎ ১০০ উপজেলায় দলের কমিটি ও কার্যালয়, ২২ জেলায় কমিটি ও কার্যালয়, ১০০ উপজেলার প্রতিটিতে ২০০ ভোটারের সাক্ষর এবং দলীয় গঠনতন্ত্রসহ নিবন্ধনের আবেদন করতে হয়। এবার দেড়শ’ মতো দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। প্রতিবারই ২/৩টার বেশি দল নিবন্ধন পায় না। এনসিপি নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে শাপলা দেবার জন্য আবেদন করেছে। শাপলা জাতীয় ফুল হওয়ায় তা নির্বাচনী প্রতীক হওয়া উচিত নয় বলে অনেকে মন্তব্য করেন। তবে নির্বাচন কমিশন যেসব প্রতীক থেকে কোনও দল নির্বাচনী প্রতিকের জন্য আবেদন করতে পারে; সেই প্রতীকের তালিকায় সম্প্রতি শাপলাকে অর্ন্তভুক্ত করায় অনেকে ধারণা করছেন এনসিপি শাপলা পেতে পারে। তবে কেউ আদালতে এটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে তা বাতিলও হতে পারে। এনসিপি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আর্শিবাদপুষ্ট রাজনৈতিক দল।
আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সেটাও বড় প্রশ্ন। সরকার বারবারই বলছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হয়নি। দলটির কর্মকান্ড স্থগিত করা হয়েছে। নিবন্ধনও স্থগিত আছে। অর্ন্তবর্তি সরকার এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলে আওয়ামী লীগ অনায়াসে ভোটে দাড়াঁতে পারবে। আওয়ামী লীগ সরাসরি ভোটে দাঁড়াতে না পারলে দলটির প্রার্থীদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র দাঁড়াতে পারেন।
সরকার সম্প্রতি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা এবং হাবিুল আওয়ালকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেছে। হঠাৎ তাদের বিচার করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কেন সেটাও স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিতে এখনও যথেষ্ঠ নাটকীয়তা রয়েছে। বিএনপি অনেকটা ধৈর্য ধারণ করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে এতে কোনও সন্দেহ নেই। ফলে পরিস্থিতি খারাপ করার উস্কানিতে বিএনপি সাড়া দিচ্ছে না। কিন্তু শেষ অবধি ধৈয্যের ফল বিএনপি পাবে কিনা তা একেবারে ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেবেন এমন শতভাগ গ্যারান্টি কেউ দিতে পারছে না বিধায় রাজনীতির অন্দর মহলে ফিসফাস আছে।