বৃহস্পতিবার   ২৬ জুন ২০২৫   আষাঢ় ১৩ ১৪৩২   ২৯ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

জুলাই হামলায় জড়িত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা হচ্ছেন এসআই

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২৯ এএম, ২৬ জুন ২০২৫ বৃহস্পতিবার

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা শেখ রেজাউল করিম। পুলিশের ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই, নিরস্ত্র) পদে উত্তীর্ণ হয়ে তিনিই এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে।

জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগ (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন রেজাউল। তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে।

গত ১৮ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে মোট ২৪৫ ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টরকে এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পাঠানো হয়। ওই তালিকার ১০৭ নম্বরে দেখা যায় শেখ রেজাউল করিমের নাম।

ওই আদেশে জানানো হয়, ২০২৪ সালের ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হিসেবে প্রাথমিকভাবে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে পাওয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল এবং রেঞ্জ থেকে পাওয়া পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই ২৪৫ জনকে মৌলিক প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়।

অফিস আদেশে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অন্য বিষয়ে প্রার্থীর তথ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান বা তদন্তে কিংবা পরবর্তীতে কোনো বিরূপ প্রতিবেদন পাওয়া গেলে অথবা প্রদত্ত কোনো তথ্য প্রশিক্ষণকালীন কিংবা পরবর্তীকালে মিথ্যা প্রমাণিত হলে ওই প্রার্থীকে প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি/চাকরিচ্যুতি/বরখাস্তসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও হলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় রেজাউল সামনের সারিতে ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। হলে সিট বাণিজ্যে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অনেক নেতার সঙ্গেই তার ছবি রয়েছে। গত বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে শিক্ষার্থীদের হামলায় নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় তাকে। এ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও রয়েছে।

‘বিভিন্ন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী, সিট বাণিজ্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হামলার সঙ্গে জড়িত ও ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ শিরোনামে একটি তালিকা টাঙানো হয় শাহ মখদুম হলের গেটে। ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের টাঙানো ওই তালিকায় ৪ নম্বরে দেখা যায় রেজাউলকে।

বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী চিহ্নিত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা কীভাবে এতগুলো ধাপ পেরিয়ে পুলিশের চাকরি পেল, তা খুবই উদ্বেগের। রেজাউলের চাকরি বাতিলের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট মাহবুবুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের আগে হলের বিষয়ে যেসব অভিযোগ শিক্ষার্থীরা তুলেছিলেন, সেগুলো তথ্য-প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে।

রেজাউলের বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাদঘাটায় তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার মা রিজিয়া খাতুন জানান, স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। তিনি এখন আলাদা বাড়িতে থাকেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে শেখ রেজাউল করিম ঈদুল আজহায় ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। ছুটি কাটিয়ে আবার রাজশাহী ফিরেছেন।

ছাত্রলীগের রাজনীতি ও জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর রেজাউলের হামলার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন তার মা। তিনি বলেন, রেজাউল করিম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ডিআইজি ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এটা ট্রেনিং সেন্টার। আমরা তো নিয়োগ করি না। নিয়োগ দেয় পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স। আমাদের কাজ হলো ট্রেনিং দেওয়ানো।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা দেখবে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স। সেখান থেকে যদি আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসে, তখন সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করি।’

এ বিষয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘পুলিশের যেকোনো পদবির এবং যেকোনো পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসে, তখন সেটি গুরুত্বসহকারে দেখা হয়ে থাকে এবং অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়ে থাকে।’