শনিবার   ২১ জুন ২০২৫   আষাঢ় ৭ ১৪৩২   ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ইরান প্রবাসিদের জন্য দেশে আহাজারি

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৪৮ এএম, ২১ জুন ২০২৫ শনিবার

১৫ হাজার বাংলাদেশির ফেরার আকুতি


ইরানের তেহরানসহ বিভিন্ন সিটিতে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন। ৭ দিন আগে শুরু হওয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি দিনদিন ভয়ানক হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে থাকা তাদের আত্মীয় পরিজন সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে ছুটাছুটি করছেন বিপদের কথা ভেবে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ইসরাইলের বর্বর হামলার ঘটনা দেখছেন আর কান্নাকাটি, আহাজারি করছেন। পরিবারের সদস্যদের জন্য এই কান্না দেখার মতো কেউ নেই। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা শহরে প্রবাসি কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেইটে প্রবাসির স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। অনেকে হাতে পরিজনের ছবি নিয়ে এসে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় কিনা তা নিয়ে আকুতি জানাচ্ছেন। ইরানে থাকা প্রবাসিরা কবে ফিরতে পারবেন সেই তথ্যই তারা জানতে চাচ্ছেন।
ইরানের তেহরানে বসবাসরত বাংলাদেশী সাংবাদিক শেখ আব্দুর রশিদকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাওয়া গেলে তিনি জানান, ‘সম্প্রচার ভবনে মাটির নীচে আছেন। হঠাৎ কওে ইসরাইলি ড্রোন এসে তাদের ভবনে আঘাত হানলে তারা মাটির নীচে আশ্রয় নিয়েছেন। তেহরান বেতারের বাংলা সার্ভিসে সাংবাদিক শেখ আব্দুর রশিদের মতো প্রায় ১০ জন বাংলাদেশী কর্মরত আছেন।
শেখ আব্দুর রশিদ জানান, ইরানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ হাজার। তবে রাজধানী তেহরানেই থাকেন তিন হাজারের মতো বাংলাদেশি। তারা বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। বাংলাদেশে তাদের পরিবারের মধ্যে অন্তহীন দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার বলছে, বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসও অন্যত্র সরিয়ে নেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের খারাপ। ফলে সরানো রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ। তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে কূটনীতিক ও কর্মচারিসহ মোট লোকবল আছে ৪২ জন। তাদেরকে ইরানের মধ্যে তেহরানের বাইরে তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে সেখানে অর্থ পাঠানো কঠিন। ফলে একদিকে অর্থের সংকট; অন্যদিকে, নিরাপত্তাজনিত কারণে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া রীতিমত কঠিন এক কাজ। সাধারণ বাংলাদেশীরাও যারা দেশে ফিরতে আগ্রহী তাদের দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 
তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য হটলাইন চালু হয়েছে। হটলাইনে ১০০ জন বাংলাদেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদেরকে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এরিমধ্যে পাকিস্তান সরকার এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।  
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান, ইরান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজধানী তেহরানের প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশির মধ্যে প্রায় ১০০ প্রবাসী বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন দেশে ফেরার জন্য। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে আছে। তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছেন। তাদের এবং আমাদের দূতাবাসে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য এখন কাজ করছি, যাতে তারা নিরাপদে থাকতে পারেন।
গত শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টার পর ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা এবং সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্য করে ইসরাইলের হামলা শুরু হয়। ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে ইরানে বসবাসরত সকল বাংলাদেশি নাগরিক এবং তাদের স্বজনদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন (+৯৮৯৯০৮৫৭৭৭৩৬৮, +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫) চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার।