শনিবার   ২১ জুন ২০২৫   আষাঢ় ৮ ১৪৩২   ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ইরান-ইসরাইল ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:১৯ এএম, ২১ জুন ২০২৫ শনিবার

ট্রাম্প হামলার জন্য দু’সপ্তাহের সময় বেধে দিয়েছেন

 
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ ভয়াবহ পরিণতির দিকেই যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতির মারাত্মক অবণতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাতের আকাশ আলোকিত করে ঝাকেঝাকে ক্ষেপণাস্ত্র ইরান নিক্ষেপ করেছে ইসরাইলে। এদিকে যুদ্ধের তথ্য প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসরাইল। আল জাজিরার সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি ইরানে হামলা চালাবেন কি-না আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ তিনি এখনও আলোচনার আশা করছেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই ইরানের কাছে রয়েছে’। এদিকে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, যিনি ইরানের সাথে আলোচনার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত নন বলে জানিয়েছেন। এদিকে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ ইরানের পক্ষে অবস্থান করছে বলে আভাস মিলেছে। ইরানের আশপাশের মুসলিম দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সেনাঘাটিতে ৪০ হাজারের বেশি সৈন্য রণসাজে সজ্জিত অবস্থায় আছে। যারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের টার্গেটের মধ্যে আছে বলে সংবাদমাধ্যগুলো জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ‘দ্য ডেইলি শো’-তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বর্তমান দ্বন্দ্ব ‘প্রশমিত’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি পদক্ষেপের বাইরে রয়েছে। তবে এটি ইসরায়েলকে তেহরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সহায়তা করেছে। তবে কিছু ইঙ্গিত রয়েছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন এই দ্বন্দ্বে আরও সরাসরি জড়িত হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিল ক্লিনটন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নিয়ে ট্রাম্পের অভিপ্রায় সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলেও তিনি বর্তমান কমান্ডার-ইন-চিফকে পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং ‘বেসামরিক নাগরিকদের সরাসরি হত্যা’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সাথে একমত যে তিনি বিশ্বাস করেন ফিলিস্তিনিদের ‘একটি রাষ্ট্র থাকা উচিত নয়’।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি এপ্রিল মাসে ইরানকে ৬০ দিনের সময় দিয়ে সেই চুক্তিটি ফিরিয়ে আনতে বলেছিলেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। যার ফলে ইসরায়েল মূল পারমাণবিক স্থানগুলিতে হামলা চালায় এবং ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরানের ইউরেনিয়ামের ভান্ডার নির্মূল করতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে জড়িত করতে বলেছেন। হিব্রু ভাষার পাবলিক ব্রডকাস্টার কান নিউজকে নেতানিয়াহু বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যোগ দিতে চান কি-না সেটা সম্পূর্ণ তাঁর সিদ্ধান্ত।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আরও প্রকাশ করেছেন যে, ‘প্রয়োজনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই দুটি অবশিষ্ট পারমাণবিক স্থাপনা দখল করার সক্ষমতা আইডিএফ-এর রয়েছে। আমরা আমাদের সব লক্ষ্য অর্জন করব এবং তাদের সব পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানব।’
এদিকে ইসলাইলের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ইরানের কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে বলে গতকাল বিকেলে তথ্য দিয়েছে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো। তাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর আগে ইসরাইল ইরানের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিল।
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি-না তা দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র। আল জাজিরার  সিনিয়র এনালিস্ট মারওয়ান বিশারা মনে করেন,   ট্রাম্প  দুই সপ্তাহের সময়সীমার মধ্যেও ইরানে হামলা চালাতে পারেন। তার মতে এটা ক্যামোফ্লেজ, এমনকি কালও ইরানে আক্রমণ হতে পারে। ইউরোপীয় নেতারা ইরানের সাথে যে আলোচনা করতে চাইছেন তাদের মুখরক্ষার জন্য অল্প কিছু সময় নিতে পারেন। মারওয়ান বিশারার এই বিশ্লেষণ সঠিক মনে হচ্ছে। কারণ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আবার বলেছেন, তাদের কাছে তথ্য আছে ইরান দু’সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক বোমা বানাতে পারে। এসব থেকে বোঝা যায় ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলা অনেকটা নিশ্চিত।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা হবে তা ধরে নিয়ে ইরান যুদ্ধ পরিকল্পনা সাজিয়েছে। ইরান ধীরে ধীরে শক্তিশালী মিসাইলগুলো সামনে আনছে। ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বাড়ছে। যদিও ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হামলার ধরণ দেখে এটা বোঝা যাচ্ছে ইরান সুনির্দষ্ট গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে হামলাগুলো করছে বলে মনে হচ্ছে। ইরানের একটি হাসপাতালে হামলার পর ইসরাইলের একটি হাসপাতালে হামলা হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলের অনেকগুলো সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। ইসরাইল যখন বলছে ইরানের আকাশ তাদের নিয়ন্ত্রণে, এরপর ইরান বলছে ইসরাইলের আকাশ তাদের নিয়ন্ত্রণে। সত্যিই তারা ইসরাইলের আকাশে একের পর এক মিসাইল ছুড়ে ক্ষয়ক্ষতি করেছে। ফলে ইসরাইলের প্রতিটি হামলার জবাব দেয়ার চেষ্টা করছে ইরান। 
যুদ্ধে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে ইরানের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? ১. মধ্যপ্রাচ্যর আটটি দেশ ইরাক, কুয়েত, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিরিয়ার সামরিক ঘাটিতে ৪০ হাজার আমেরিকান সেনা বর্তমানে অবস্থান করছে। এসব সামরিক ঘাটি ইরানের স্বল্পপাল্লার মিসাইলের আওতায় আছে। এছাড়া এসব ঘাটি ইসরাইলের মতো এতো সুদৃঢ় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও নেই। ইরানের প্রক্সি সংগঠনগুলোর নিশানা হতে পারে।
২. এছাড়া ইরান হরমুজ প্রণালী ও হুথিরা বাব আল মান্দেব প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে এই যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে না, এই যুদ্ধের প্রভাবে চীন ও ইউরোপের দেশগুলো ভয়াবহ জ্বালানি সংকটে পড়বে। 
এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে অন্য দেশগুলো কে কিভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে তা বলা মুস্কিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলছেন, পাকিস্তানের সেনা প্রধানকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়ে ট্রাম্প ব্যাপক আপ্যায়ন করিয়েছেন। সর্বশেষ এক খবরে দেখা যায়, চীনের একটি বিশেষ প্রযুক্তি সম্পন্ন জাহাজ পারস্য উপসাগরে পৌঁছেছে। পুতিন বলছেন, ইরানের পারমানবিক প্রকল্পে ৬০০ রুশ  বিজ্ঞানী ও কর্মী  কাজ করছে। এখনই তাদের সরিয়ে নেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। এসব বক্তব্য বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।