রোববার   ০৮ জুন ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ২৪ ১৪৩২   ১১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা কেন পরিবর্তন করল সরকার

আজকাল ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৪২ এএম, ৭ জুন ২০২৫ শনিবার


 

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর পর এবার তৃতীয় বারের মতো 'মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়' পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ নিয়ে নানা রকম খবরে নতুন বিতর্কের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাজউদ্দীন আহমদসহ মুজিবনগর সরকারের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থাকছে। তবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত এমএনএ বা জাতীয় পরিষদ সদস্যরা 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসেবে বিবেচিত হবেন।

নতুন সংজ্ঞায় মোটা দাগে জাতীয় পরিষদ সদস্য বা রাজনীতিকদের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থেকে বাদ পড়ছেন। কারা এই রাজনীতিক, অন্তর্বর্তী সরকার মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞায় কেন পরিবর্তন করল, এর উদ্দেশ্য কী-এসব প্রশ্ন উঠছে। এমএনএ বা জাতীয় পরিষদ এবং এমপিএ বা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে, তাদের যে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে রাখা হয়েছে, এই এমএনএ ও এমপিএদের বড় অংশই সে সময়ের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। সে কারণে রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি করা সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হলো কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে গঠিত মুজিব বাহিনী পরে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স নাম নিয়েছিল, এই বাহিনীর সদস্যরাও নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থেকে বাদ পড়ছেন। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ওই বাহিনী ও এর সদস্যদের স্বীকৃতি থাকবে 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসেবে। অবশ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী হিসেবে এদেশের যেসব গোষ্ঠীর নাম বহাল রাখা হয়েছে সর্বশেষ এই সংজ্ঞায়, তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নাম রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা নিয়ে অনেক প্রশ্ন বা নানা আলোচনার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় লক্ষাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। তাদের বাছাই করা এবং মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিতর্ক নিরসনের জন্য সংজ্ঞায় পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। আর সেই বিবেচনায় এখন পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা নিয়ে যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে অস্পষ্টতা রয়েছে। সেকারণে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এছাড়াও রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিষয়ে সংশোধনী আনার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, নির্বাচিত সরকার এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বিতর্ক বাড়তে পারে। যদিও ৫৪ বছরেও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিষয়গুলোয় বিতর্কের অবসান হয়নি। এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা।(সূত্র-বিবিসি বাংলা)