রোববার   ০৪ মে ২০২৫   বৈশাখ ২০ ১৪৩২   ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৬

পাক-ভারত সীমান্তে ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৫:১১ এএম, ৩ মে ২০২৫ শনিবার

যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবি

 

পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান ও ভারত সীমান্তে ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যানসহ দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের ব্যপক মহড়া চলছে গত কয়েকদিন ধরে। ভারত তাদের সীমান্তের অনেক এলাকা থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে নিয়েছে  ইতোমধ্যে। একই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পাকিস্তানও। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসি হামলায় ২৮ জন নিহতের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তড়িগড়ি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে গুজরাটে এসে জনসমাবেশ করে জ্বালাময়ি ভাষণ দিয়েছেন। তাতে দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে যায়। সীমান্তে আটকা পড়ে হাজার হাজার মানুষ। দু’দেশই আকাশসীমা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ভারতের একটি গোয়েন্দা ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে পাক সেনারা। উত্তেজনাকর অবস্থায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত দেশে ফিরে যান এবং নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পাক বিরোধি আওয়াজ আরও জোড়ালো করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বিদেশি কূটনৈতিকদের কাছে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে হামলা করা হয়েছে এমন বিষয়ে অব্যাহতভাবে অভিযোগ জানাতে থাকেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হোঙ্কার দিয়ে প্রতিশোধ নেবার ঘোষণার আগেই ভারত সিন্ধু বাঁধ খুলে দিয়ে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর  পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তির শিকার। এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ খানও ‘হামলা হলে’ কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন ভারতকে। এই সময়ে সীমান্তে দুই দেশের প্রহরিদের মধ্যে থেমে থেমে ব্যাপক গুলিবিনময়ের ঘটনা ঘটছে। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুইদেশ হুঙ্কার দিলেও কেউ এখন পর্যন্ত কারো ওপর হামলে পড়েনি। ভারত অংশের কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ সন্ত্রাসি হামলায় পর্যটকসহ  ২৮ জন নিহতের খবর দিয়েছে বিভিন্ন  সংবাদ মাধ্যম। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই হামলার ছক কেটেছিল মোদি সরকার নিজেই। ভারতের কাশ্মীর অংশে সেনারা সন্দেহভাজন মুসলমানদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে তা ভেঙ্গে দিচ্ছে। তাদের পরিবারের বৃদ্ধ সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এমন এক পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনা কমাতে দুপক্ষের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন। সংঘাত এড়াতে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আরও সক্রিয়তা চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি উত্তেজনা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পহেলগাঁও হত্যাকা-ের পরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনা প্রশমনে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি সংঘাতমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন।
ভারতের কাশ্মীরে সন্ত্রাসি হামলায় ২৭ পর্যটক ও এক সেনা সদস্যসহ ২৮ জন নিহত হবার পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  জে ট্রাম্পের সরকার নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদকে সংঘাতের পরিবর্তে সমস্যার ‘দায়িত্বশীল সমাধানের’ পথ খেুঁজতে বলেছিল। কিন্তু তার পরেই কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্তরে একাধিক পদক্ষেপ  নিয়েছে দু’দেশ। নিয়ন্ত্রণরেখায় টানা এক সপ্তাহ ধরে চলছে গুলি বিনিময়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় সেনাদের যে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণের ছাড়পত্র দিয়েছেন।
এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়ার কথা নিশ্চিত করেছে চীন সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ইসলামাবাদে প্রাইম মিনিস্টার হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এমন নিশ্চয়তা দিয়েছেন পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত জিয়াং জাইডং। এই সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি রক্ষায় পাকিস্তানকে সবসময় সমর্থন দেবে চীন’।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানিয়েছেন, এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে কথোপকথনের সময় রুবিয়ো পহেলগাঁওয়ে প্রাণহানির জন্য গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবং জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি, জয়শঙ্করকে সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা করার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘দু’দেশের মধ্যে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করুক এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক।’
পাকিস্তানের ‘দ্য ডন’ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে পহেলগাঁও হত্যাকা-ের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনও পক্ষের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হলে ইসলামাবাদ তাতে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে শাহবাজ ফোনে মার্কো রোবিও-কে জানিয়েছেন, পহেলগাঁও সন্ত্রাসের সঙ্গে পাক সরকারের কোনও সংযোগ নেই। পহেলগাঁও হত্যাকা-ের পরে ভারত কোনও প্রমাণ ছাড়াই একতরফাভাবে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতসহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। লন্ডনের পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করার সময় বেশ কয়েকজন ভারতীয়কে দাঙ্গাবাজ হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা যায়।