নিইউয়র্কে মতবিনিময় সভায় গভর্নর পাচারের টাকা ফেরাতে ল ফার্ম নিয়োগ
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:২১ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ শনিবার
বিতাড়িত স্বৈরশাসকের আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিদেশি ল-ফার্ম নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এজন্য প্রবাসীদের সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজরা প্রবাসে কোথায় কি সম্পত্তি ক্রয় করেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রয় করেছে তা প্রবাসীরা ভালো জানেন। তারা এসব দুর্নীতিবাজদের তথ্য স্ব-স্ব দেশে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে জানাতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। তথ্য যাচাই করে ওই অর্থ উদ্ধারে প্রবাসে ল’ ফার্ম নিয়োগ করা হবে। ফেরত পাওয়া অর্থ থেকেই ফার্মগুলোকে কমিশন দেওয়া হবে।
গত ১৯ এপ্রিল নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কথা বলেন। এ সময় ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা।
বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ, গিয়াস উদ্দীন, বাগ প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, অ্যাটর্নি মিজানুর রহমান, লেখক সাঈদ তারেক, জেবিবিএর সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ওয়াজেদ এ খান, টাইম টিভির প্রেসিডেন্ট আবু তাহের, আব্দুস সবুর, আহমেদ সোহেলসহ মতবিনিময় সভায় প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রেমিটার, বিজনেসম্যান ও বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, হচ্ছে। টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারসহ বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বৃটেনে তারা কাজ চলছে। টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত কয়েকশ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে ল ফার্মকে হায়ার করছি। ফার্মগুলোকে আমরা তথ্য দিব। তারা যদি অর্থ আদায় করতে পারে তার নির্দিষ্ট একটা অংশ তাদের দেয়া হবে। প্রবাসীরা সহায়তা করলে আমেরিকাতে আশ্রয় নেওয়া পাচারকারীদের অর্থ আদায়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় আর কোন নতুন ব্যাংক হবে না। অতীতে তা করতে গিয়ে ব্যাংক খাত ধ্বংস করা হয়েছে। ভাই, বোন, স্ত্রী ও নেতাদের ব্যাংকের চেয়ারম্যান হবার সংস্কৃতি আর নয়। ব্যাংক যাতে কোন পরিবারের দখলে থাকতে না পারে সে বিষয়ে আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। কোন রাজনীতিবিদ বা তাদের সন্তানরা শুধুমাত্র ও রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যাংকের মালিক হবেন তা আমি গভর্নর থাকা অবস্থায় তা হতে দেবো না।’
তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি তৈরি করছে। শুধু তাই নয় ইনডিপেনডেন্ট ডাইরেক্টর সংখ্যা ৫০/৫০ করা হবে এবং ওই ডাইরেক্টরদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্যানেল তৈরি করবে। আমরা দায়িত্ব নিয়েই ১৪ ব্যাংকের বোর্ড পরিবর্তন করি। বোর্ড ঠিক থাকলে ব্যাংক পরিবর্তন হতে বাধ্য। আর কোনো রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ নিতেও দেওয়া হবে না। যেভাবে অর্থ নিয়েছে বসুন্ধরা, বেক্সিকো ও এস আলম গ্রুপ।
রুগ্ন কয়েকটি ব্যাংক প্রসঙ্গে ড.আহসান মনসুর বলেন, ‘সেগুলোকে একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে আমরা মার্জ করে দেব। তারপর সেগুলোর মালিকানা আমরা প্রবাসী সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া হবে। তবে মালিকানা হস্তান্তর করার আগে ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করা হবে। কারণ সেগুলো বন্ধ করার দেয়ার চেয়ে মার্জ করে চালু রাখলে সরকারের লোকসান কম হবে। ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যাক এটা আমরা চাই না। তা চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। রুগ্ন ব্যাংক বন্ধ হবে না।
ব্যাংক পরিচালনায় এই সরকারের কোন চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনভাবেই না। ব্যাংকগুলো এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এই সেক্টরে হরিলুটের খেলা বন্ধ হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘আইএমএফ এর ঋণ ছাড়াও দেশ চলতে পারবে। আইএমএফ এর সঙ্গে আমাদের মতানৈক্য খুব কম বিষয়ে আছে। আইএমএফকে আমি আগে বলেছি ওয়াশিংটনে গিয়েও বলবো, আইএমএর টাকার আমাদের খুব একটা দরকার নেই। আমাদের এখন প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলারের মতো রিজার্ভ আছে। এর সঙ্গে হয়তো আর এক বিলিয়ন যোগ হবে। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা অন্য জায়গায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে, পরামর্শ দিচ্ছে, তাদের জ্ঞান শেয়ার করছে। ব্যাংকগুলো মার্জারের বিষয় তাদের পরামর্শ নিচ্ছি। কারণ এইভাবে একসঙ্গে ৭-৮ টা ব্যাংক মার্জ করার নজির পৃথিবীতে খুব একটা নেই। এক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ লাগবেই। ধারাবাহিকতা ও অংশদারিত্বের প্রয়োজনে তাদের অর্থ আমরা নিতে চাই।’
বাজারে প্রচলিত বর্তমান টাকার নোটে কোন পরিবর্তন বা ভারতের মতো ব্যাংক নোট বাতিল করার কোন চিন্তা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, এটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। নতুন নোট ছাপাতেও ১৮ মাস থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে। ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, ভারতের তৎকালীন গভর্নর এর বিরোধিতা করলেও রাজনৈতিক কারণে পুরোনো নোট বাতিল করা হয়েছিল, যেখানে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারও বিপদে পড়েছিল। দেশে এটার কোন প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন তিনি।
দায়িত্বে আসার পর থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এখনো পাননি উল্লেখ করে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, আগামী দিনে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পাবেন না এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।