শুক্রবার   ২০ জুন ২০২৫   আষাঢ় ৫ ১৪৩২   ২৩ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

অবৈধ বাংলাদেশিদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৪ এএম, ৮ মার্চ ২০২৫ শনিবার


 

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবার ব্যাপারে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে ফর্মালি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। জবাবে নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়ে অবৈধ অভিবাসিদের বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করতে সম্মত বলে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে সামরিক বিমানে হাতকড়া ও পায়ে শিকল পড়িয়ে না পাঠাবার অনুরোধ জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারত, গুয়াতেমালা, কলাম্বিয়া, এলসালভাদর, মেক্সিকোতে সামরিক বিমানে করে সে সব দেশের অপরাধে জড়িত শতশত অবৈধ অভিবাসিদের ফেরত পাঠিয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত অবৈধদের গ্রেপ্তার করে নিজনিজ দেশে ফেরত পাঠাবার উদ্যোগ আরও জোরদার করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেসের কাছে আর্থিক সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন। ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস গত মাসে বাংলাদেশ সরকারকে অবৈধ হয়ে পড়া অভিবাসিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অবগত করে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে একটি কূটনৈতিক পত্রও পাঠানো হয় বলে জানা যায়। কত সংখ্যক অভিবাসিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে এমন বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কর্মকর্তাগণ কোন আভাস দেননি। তবে কবে থেকে তা শুরু করা হচ্ছে তারও তারিখ নির্ধারণ হয়নি। যাদের অপরাধ রেকর্ড রয়েছে এমন অবৈধ নাগরিকদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, তা পাঁচ শতাধিক হতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নিতে ঢাকায় গত বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।  দেশে ফেরার পর প্রবাসি কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদেরকে পুনর্বাসন করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়। ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসিদের ফেরানোর ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া রয়েছে, সেটি অনুসরণের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের নাগরিক এটি নিশ্চিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশের অভিবাসিদের ফেরত নেওয়া হবে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশের অভিবাসিদেরকে যেভাবে সামরিক বিমানে করে হাতকড়া লাগিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে, সেটি যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আশা করছে এ বিষয়ে একটি ‘চার্টার্ড ফ্লাইট’ ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ফ্লোরিডা, টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি তদারক করে থাকে। এখন বিশেষভাবে কাজ করছে ‘আইস’। তাদেরকে ফেডারেলসহ বিভিন্ন এজেন্সি অভিযানে সহযোগিতা করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, গত মাসে মার্কিন দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, অন্যান্য দেশের মতো অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশের অভিবাসিদের ফেরত পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে ঢাকার সহযোগিতা চেয়েছে ওয়াশিংটন। সরকারও বৈঠক শেষে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসিদের সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে আনতে চায় উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ চায় না অন্যান্য দেশের মতো হাতকড়া পড়া অবস্থায় বাংলাদেশিরা দেশে ফিরে আসুক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে সাড়া দেবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে।