নৈরাজ্য ও বিশৃংখলায় বাংলাদেশ
মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৩২ এএম, ৮ মার্চ ২০২৫ শনিবার
-
*নির্বাচনে অনিশ্চয়তা
-
*বিদেশী বিনিয়োগ ৭০ ভাগ হ্রাস
বাংলাদেশ এখন এক চরম নৈরাজ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। একের পর এক মব ভায়োলেন্সে পরিস্থিতি নাজুক। পুলিশ কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা মিলছে না। নারী হেনস্থাকারী জামিনে মুক্তির পর ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হচ্ছে। থানা ঘেরাও করে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে আসামি। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড হুমকি দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর হিসাব অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বিগত সাত মাসে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ৭০ শতাংশ কমে গেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই নিয়ে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব বিষয়ে পুলিশ নির্বিকার।এমতাবস্থায় একটি জাতীয় নির্বাচন সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের আয়োজন বাধাগ্রস্থ করার জন্য কৃত্রিমভাবে দেশজুড়ে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। অনির্বাচিত সরকারের হতে ক্ষমতা দির্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র বলে অনেকে মন্তব্য করছেন।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দাবি করছে। তবে ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি এখনই নির্বাচনের বিপক্ষে। দলটির প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর নির্বাচন দিতে হবে। এক্ষেত্রে, এনসিপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচনও দাবি করছে। গণপরিষদের ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশে সেকেন্ড রিপাবলিক ঘোষণা এবং নতুন সংবিধান প্রবর্তনের দাবি করছে এনসিপি। জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইছে। ড. ইউনূসের সরকার ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে বিচার সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করছে। যদিও নির্বাচনের কোনও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ এখনও ঘোষণা করেনি অর্ন্তবর্তি সরকার।
আপাত দৃষ্টিতে এসব বিষয় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন বলে মনে হচ্ছে। রাজনৈতিক এই বিভক্ত পরিস্থিতির সুযোগে অপরাধীরা অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। মব নিয়ে আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি। একটি মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে, বিগত সাত মাসে মবের মাধ্যমে ১১৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের বিচারে দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের এই নির্বিকার অবস্থার কারণে পরিস্থিতি অবণতিশীল। সবার প্রশ্ন, পুলিশ কখন অপরাধ দমনে সক্রিয় হবে ? যদিও পুলিশ বাহিনীর তরফে বলা হয়েছে, তারা সাধ্যমত চেষ্টা করছেন অপরাধ দমনের জন্য। বাংলাদেশ একটা যুগ সন্ধিক্ষনে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সামনে অবস্থার উন্নতি কতটা কীভাবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ঢেকে গেছে।
নতুন দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ না আসার কারণে কর্মসংস্থার সৃষ্টি হচ্ছে না। বিদেশী বিনিয়োগ বলতে গেলে আসছেই না। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ বাস্তবে কাজ করছে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, পুরনো বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। বাংলাদেশ একটা কঠিন সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। এই সংকটের কারণে আপাত দৃষ্টিতে সামনে অন্ধকার সিঁড়ি। তবে টানেলের শেষ মাথায় আলো দেখা যেতে পারে যদি সবাই মিলের দেশটাকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করি।
সম্প্রতি গুলশানের একটি বাড়িতে একদল দুর্বৃত্ত্ মব সৃষ্টি করে ঢুকে পড়ে। মব সৃষ্টিকারীরা বলছে, বাড়ির ভেতরে আওয়ামী লীগ নেতারা লুকিয়ে আছেন। কিন্তু মবের লোকেরা বাড়ির বিভিন্ন জায়গা তল্লাশি চালিয়ে কিছুই পায়নি। বরং লুটপাট করে সবকিছু নিয়ে যায়।
এদিকে, নিলুফার পারভীন মিতু নামে একজন নারী চিকিৎসক ফেসবুকপোষ্টে দাবি করেন, উত্তরামুখী মেট্রোরেলে নারীদের জন্য সংরক্ষিত বগিতে ১০-১২ জন পুরুষ জোরপূর্বক প্রবেশ করে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, তারা বগিতে থাকা নারীদের এবং এক কন্যাশিশুকে যৌন হয়রানি করে। আরেকটি ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, হিজবুত তাহরির নামের একটি নিষিদ্ধ সংগঠন ‘মার্চ ফর খিলাফত’ ডাক দিয়ে পোষ্টারে ছেয়ে ফেলেছে ঢাকা শহর। পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ সংগঠনের পোষ্টার টানানোর সুযোগ নেই। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না পুলিশ।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন। তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্ন্তভুক্তিমূলক নির্বাচন করার কথা বলছেন। এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিও অংশগ্রহণও চাইছে বলে কোনও কোনও সূত্র দাবি করছে।
এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একদল প্রবাসী বাংলাদেশী জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বাংলাদেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। চিঠির একটি কপি আজকালের কাছে পৌঁছেছে। তারা জুলাই-আগস্টের অভ্যত্থানের বিষয়ে ইউনূসের সরকারের বর্ণনা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন।