বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫   বৈশাখ ১৭ ১৪৩২   ০৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

মানসিক চাপ থেকে হৃদরোগ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:১০ এএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

সাময়িক মানসিক উত্তেজনা শরীর সহজেই মেনে নেয়। একটানা মানসিক উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা হৃদরোগের বা হার্ট অ্যাটাকের একটি ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। অনেক সময় দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাকের আগে রোগী কোনো না কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা বা উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েন

রোগের আজ আর কোনো বয়স নেই। ছোটদের হাই ব্লাড সুগার কিংবা প্রেশার খুবই সাধারণ ব্যাপার। অল্পবয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতাও বাড়ছে ক্রমাগত। এর নির্দিষ্ট কিছু কারণের মধ্যে অনেকেই জীবনযাত্রাকে দায়ী করেন। বর্ধিত মনস্তাত্ত্বিক চাপ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন ধরনের সংবহনতন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা ডেকে আনতে পারে। কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত উদ্বেগ যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে দেখা দিতে পারে গুরুতর সমস্যা। সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের ফলে মানসিক অস্থিরতা, অবসাদ, আকস্মিক ক্রোধের মতো উপসর্গ দেখা যায়। শারীরিকভাবে দেখা যায় পেশির দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা যন্ত্রণা কিংবা অনিদ্রার মতো সমস্যা। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষত হৃদযন্ত্র ও সংবহনতন্ত্রের ওপর এর প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ। মানুষের হৃদযন্ত্র এবং হৃদযন্ত্রের রক্তপ্রবাহ কীভাবে শারীরিক ও মানসিক চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তা জানতে ২০২১ সালে ৯০০ মানুষের ওপর একটি পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ও কার্যকারিতার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে মানসিক চাপে ভোগা মানুষদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় দ্বিগুণ। মানসিক উৎকণ্ঠা বা উত্তেজনার সময় দ্রুত হৃৎস্পন্দন, বুক ধড়ফড় করা বা বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। অনুভূতির সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের নিবিড় সম্পর্কের কথা জানা যায়। জীবনের কোনো উত্তেজনাকর বা সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কোনো কোনো মানুষ হঠাৎ হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। এ অবস্থা বিজ্ঞানের পরিভাষায় সিম্পেথেটিক ওভার অ্যাকটিভিটি বা স্নায়ুর অতিরিক্ত তাড়নাকে বোঝায়। অনুভূতির সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের নিবিড় সম্পর্কের কথা জানা যায়। জীবনের কোনো উত্তেজনাকর বা সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কোনো কোনো মানুষ হঠাৎ হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা থেকে বাঁচতে হলে আগে এর ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সাময়িক মানসিক উত্তেজনা শরীর সহজেই মেনে নেয়। একটানা মানসিক উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের একটি ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। অনেক সময় দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাকের আগে রোগী কোনো না কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা বা উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েন। মানসিক উত্তেজনা বলতে আমরা বুঝি উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অসংলগ্ন কথা বলা বা অসুখকর পারিপার্শ্বিক অবস্থা। এই মানসিক উত্তেজক ব্যক্তি নানা রকম অভিযোগ নিয়ে আসতে পারেন। যেমন– মনের অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়, মাথা ব্যথা, নিদ্রাহীনতা ও হতাশা।রোগী যখন দীর্ঘদিন ওই উপসর্গ নিয়ে থাকেন, তখন হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়। এতে হৃৎস্পন্দন ও হৃদযন্ত্রের ভেতর রক্ত সঞ্চালনের হার বেড়ে যায় এবং হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। মানুষের চিন্তাভাবনা, উত্তেজনা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিস্টেম। টেনশন বা উত্তেজনার ফলে সিম্পেথেটিক নার্ভতন্ত্রের কাজ বহুগুণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত সিম্পেথেটিক ক্রিয়ার ফলে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ বাড়ে, হৃৎস্পন্দন বাড়ে, উচ্চ রক্তচাপ হয় ও ধমনিতে চর্বির আস্তরণ পড়ার গতি বেড়ে যায়। যারা সবসময় অর্থ-সম্পদের কথা ভাবেন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তারা সহজে স্থির থাকতে পারেন না। প্রায় সময় টেনশনে ভোগেন এবং সব কাজে তাড়াহুড়া করেন। এদের টাইপ ‘এ’ পারসোনালিটি বলা হয়। এই টাইপ ‘এ’ পারসোনালিটির মানুষের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেশি। কারণ মানসিক চাপের ফলে শুধুই যে রক্তে চর্বি জমাট বাঁধা বেড়ে যায় তা নয়, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনও বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বাড়তে থাকে। ধমনির সংকোচনের প্রবণতাও এদের বেশি। এ অবস্থা নিয়মিত চলতে থাকলে হৃৎপিণ্ডের রক্ত চলাচল বাধা পায়। ফলে প্রথম এনজাইনা ও পরে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।
মানসিক উত্তেজনার প্রতিকার
একজন ব্যক্তিকে মানসিক উত্তেজনা থেকে মুক্তি পেতে হলে তার পরিপূর্ণ মানসিক প্রস্তুতি দরকার। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, নিজেকে কোনো আনন্দমুখর হবিতে নিয়োজিত রাখা, আত্মসম্মোহন পদ্ধতির দ্বারা নিজেকে মানসিক টেনশন থেকে মুক্ত রাখা যায়। অনেকের মানসিক টেনশনের সঙ্গে ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি গ্রহণের পরিমাণও বেড়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাককে আরও ত্বরান্বিত করে। মানসিক চাপও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। মানসিক চাপ অত্যধিক বেড়ে গেলে অবশ্যই তার চিকিৎসা করানো দরকার। সেই সময় কাউন্সেলিং সাপোর্টের দরকার হয়। এতে মানসিক চাপের সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে হলে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে বা করতে পারে– এমন অবস্থা থেকে বিরত থাকতে হবে।
lনিয়মিত হাঁটা এবং ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
l টেনশন কমাতে সব সময় কাজের কথা না ভেবে ছুটি উপভোগ করুন।
l বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিন।
lশখের কাজ করুন, যেমন– বই পড়া ।
[বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক]