ভারতে দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ
হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনা বাড়ছে: সিএনএন
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৪৬ এএম, ৪ মে ২০২৪ শনিবার

টানা তৃতীয় বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে লড়ছেন নরেন্দ্র মোদি। তার রাজনৈতিক উত্থানে একটি বিষয় প্রতিফলিত হয় আর সেটি হলো ভারত ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে একটি আত্মবিশ্বাসী এবং পরাশক্তিধর দেশের মর্যাদা পাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছেছে। যদিও সেখানে গভীর বিচ্যুতি রয়েছে। তার সময়ে ধর্মীয় নিপীড়ন এবং ইসলামোফোবিয়া তীব্রভাবে বেড়েছে। চলমান নির্বাচনকে ঘিরে হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনা আরো বাড়ছে। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
ঐ খবরে বলা হয়েছে, অনেকের অভিযোগ বেকারত্বের মতো নীতিগত ইস্যু থেকে সরে প্রধানমন্ত্রী তার হিন্দু-জাতীয়তাবাদী পরিচয় আরো শক্তিশালী করার উপায় হিসেবে সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে আনছেন। যা নিয়ে ভারতের সংখ্যালঘুদের মধ্যে, বিশেষ করে ২৩ কোটি মুসলমানের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন না যে, মোদি তাদের দিকে নজর রাখছেন। বরং তারা বলছেন যে, তারা প্রান্তিক হয়ে পড়েছেন কারণ প্রধানমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী ভারতকে তার দলের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
‘দ্য স্যাফরন স্টর্ম: ফ্রম বাজপেয়ী টু মোদি’ বইয়ের লেখক সাবা নখভি সিএনএনকে বলেন, তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেকে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধানের পাশাপাশি একজন প্রধান পুরোহিত হিসেবে নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন। তিনি এমন কিছু করেছেন যা আমাদের সব প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আগে ঘটেনি। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের ব্যক্তিত্বের একটি ‘ধর্মীয় প্রার্থনার প্রথা’ তৈরি করেছেন।
বারানসীর এক দোকানদার আকাশ জসওয়াল সিএনএনকে বলেন, অনেকে মনে করেন মোদিই ঈশ্বর। মোদির মতো প্রধানমন্ত্রী আমাদের আর কখনো হয়নি। তিনি ভারতের জন্য, আমাদের জন্য একটি মহান ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমরা চাই, তিনি চিরদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন। বারানসীর বিজেপি নেতা দিলীপ প্যাটেলের মতে, মোদি ভারতের ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার নেতৃত্বে ভারত আজ শক্তিশালী, সক্ষম এবং আত্মনির্ভর।
২০০২ সালে গুজরাটে যখন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ঐ দাঙ্গায় ১ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছিল যাদের বেশির ভাগই মুসলিম ছিল। সমালোচকরা মোদিকে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেন। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সহিংসতার কয়েক মাস পরে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তিনি পুনর্র্নিবাচিত হন। কিন্তু সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ জাতিকে গভীরভাবে বিভক্ত করেছে, যা আজও টিকে আছে।
এদিকে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় শতাধিক আসনে ভোটগ্রহণ হলেও দ্বিতীয় দফায় হচ্ছে ১৩ রাজ্যের ৮৮টি আসনে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দ্বিতীয় দফার ভোটে একাধিক ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে প্রথম নাম রাহুল গান্ধীর। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও দলটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই নেতা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যের ওয়ানাড থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে তার বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে কে সুরেন্দ্রনকে। অন্যদিকে সিপিআইয়ের অ্যানি রাজাও রয়েছেন তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। জোরদার লড়াই হতে পারে এবার কেরালার এই আসনে।
এর আগে, লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় গত ১৯ এপ্রিল। সেই পর্বে মোট ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ১০২ টি কেন্দ্রে লড়াই হয়। প্রথম দফায় মোট ভোটার ছিল ১৬ কোটি ৬৩ লাখ।
এছাড়া প্রথম দফায় তামিলনাড়–র ৩৯টি, রাজস্থানের ১২টি, উত্তর প্রদেশের ৮টি, মধ্যপ্রদেশের ৬টি, উত্তরাখন্ডের ৫টি, মহারাষ্ট্রের ৫টি, আসামের ৫টি, বিহারের ৪টি, পশ্চিমবঙ্গের ৩টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়।
এর পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও মেঘালয়ে দুই করে আসনে, ছত্রিশগড়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, পদুচেরি ও জম্মু-কাশ্মিরের একটি করে আসনে প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হয়।