সোমবার   ২০ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১   ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মার্কিন ভিসা থাকলে সুযোগ বাংলাদেশিরা ট্রানজিটে ওমরাহ করতে পারবেন

মাসুদ করিম মক্কা (সৌদি আরব) থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:১২ এএম, ১৬ মার্চ ২০২৪ শনিবার



পবিত্র ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের সরকার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশি কোনও নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা সেনজেন ভিসা থাকলে তিনি ওইসব পশ্চিমা দেশে ভ্রমনকালে সৌদি আরবে ৯৬ ঘন্টা ট্রানজিট নিয়ে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারবেন। এ জন্যে সৌদি আরবের ভিসার কোনও প্রয়োজন নেই।
কোভিড মহামারির পর সৌদি আরব হজ ও ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ তুলে নিয়েছে। ট্রানজিটে ওমরাহ পালনের এই সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও ওমরাহ পালনে অনেক সুযোগ বৃদ্ধি করেছে। এতে করে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা ও ইউরোপে যাওয়া-আসার পথে অনেকে ওমরাহ পালন করছেন। আবার ওই সকল পশ্চিমা দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও পরিবার পরিজন নিয়ে ওমরাহ করছেন। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ পালনকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। এই সময়ে সৌদি আরবের দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদীনায় চমৎকার আবহাওয়া থাকার কারণেও ওমরাহ পালনে ভিড় বাড়ছে। নারী-পুরুষ তথা সর্বস্তরের মানুষ বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওমরাহ পালনে আসছেন।   
মদীনায় মসজিদে নববীর চত্ত্বরে কথা হচ্ছিল লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক সৈয়দ নাহাশ পাশার সঙ্গে। তিনি সপরিবারে ওমরাহ পালন শেষে মদীনায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা মুবারক জিয়ারত করতে এসেছেন। নাহাশ পাশা বলেন, ‘অনেক দিন পরে এসেছি। অনেক কিছু নতুন হয়েছে এখানে। সৌদি সরকার হজ ও ওমরাহ করা মানুষের জন্য আরও সহজ করেছে। বছর দুয়েক আগে অনেক সমালোচনা ছিল যে, হজে আসতে হলে অনেক ঝামেলা। আমি লন্ডন থেকে আসছি। মক্কায় ছিলাম, এখন মদীনায় আছি, আবার মক্কায় যাবো। একজন সাধারণ টুরিষ্ট যেমন অনলাইনে টিকিট কাটে; সৌদি সরকারও অনেক সহজতর করেছে যে কেউ যদি অনলাইনে সৌদি এয়ারলাইন্সে টিকিট কাটে একই সঙ্গে তাদেরকে অনলাইনে ভিসা দিয়ে দেয়। এমনকি বিশেষ করে যারা ইউরোপ থেকে আসে তাদেরকে ৯৬ ঘন্টার ফ্রি ভিসাতো দেয়ই, হোটেলও একদিনের জন্য ফ্রি দিয়ে এখানে নিয়ে আসে। আমি জানি, ব্রিটিশ বাংলাদেশি অনেক আছে বিলেতে বসবাস করে তারা কিন্তু এই সুযোগটা নিচ্ছে, ঢাকাও যাচ্ছে ওমরাহ করে অথবা আসার সময় ওমরাহ করে লন্ডনে ফিরে যাচ্ছে যেটা আমি করেছি’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ঢাকা গিয়েছিলাম। দুই সপ্তাহ ঢাকা থেকে এখন ওমরাহ করে পরিবারসহ ফিরে যাচ্ছি। আমি খুবই আনন্দিত। এখানে অনেক সুযোগ সুবিধা করেছে।
মুসলিম উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে লন্ডন প্রবাসী এই সাংবাদিক বলেন, ‘মুসলমানদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ববোধ সেটা জাগ্রত হয়েছে। আজকে মুসলিম বিশে^ যে পরিস্থিতি তখন এটা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা এখানে এসেছেন। তাদের মধ্যে যে বন্ধন সেটা মক্কা শরীফ এবং মদীনা আমাদের মধ্যে করে দিয়েছে। এই ভ্রাতৃত্ববোধ জোরদার করা না গেলে মুসলিম উম্মাহর জন্যে কোনও ভাল হবে না’।
মুসলিম উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতিতে মুসলমান সম্প্রদায়ের করণীয় কী জানতে চাইলে মসজিদে নববীর ইমান শায়েখ আহমদ বিন আলী আল-হুযাইফা আজকালকে বলেন, ‘মুসলমানদেরকে তার মুসলিম ভাইদের সহায়তা কিংবা সমর্থন করার ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সেটা করতে হবে সম্পূর্ণ ইসলামী নির্দেশিকা মেনে। একই সঙ্গে এটা হতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মুসলিম শাসকদের পরামর্শ মোতাবেক। কারণ এটা পররাষ্ট্রবিষয়ক ইস্যু’।
তিনি আরও বলেন, ‘মুসলমান হিসাবে দায়িত্ব হলো অন্য মুসলমানের জন্য দোয়ার মাধ্যমে তার কর্তব্য পালন করা। ভালো কাজের দরজা অবশ্যই খোলা। কিন্তু সেটা হতে হবে ইসলামী নির্দেশিকা মেনে। কারও যা ইচ্ছা কিংবা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে করা উচিত নয়’।
সৌদি রাজকীয় সরকারের আমন্ত্রণে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফর করছে। প্রতিনিধি দলে ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশে সেলিব্রেটি দম্পতি আয়মান সাদিক ও মুনজেরিন শহীদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ‘টেন মিনিট স্কুল’ নামের একটি অনলাইন ইংরেজি শিক্ষার প্লাটফর্মকে জনপ্রিয় করে তারা এখন সেলিব্রেটি। মুনজেরিন শহীদ আজকালকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবতী মনে করছি। এখানে যত ঐতিহাসিক জায়গাগুলো আছে সেগুলো দেখতে পাচ্ছি। সেগুলো সম্পর্কে আগে জানতাম এখন সামনাসামনি দেখছি জায়গাগুলো। এটা খুবই ভাল লাগছে। আবারও আসব, ইনশাল্লাহ’।
মুনজেরিন তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘এখানে ভাষাগত কোনও বাধা কিংবা সাংস্কৃতিক বিভক্তি নেই। আমি দেখছি, বিভিন্ন দেশের মানুষজন আসছেন। তাদের মধ্যে একটা ইউনিটি কাজ করছে। নববী মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। তখন জায়গা শেষ হয়ে গেছে। তখন একজন আরেকজনকে জায়নামাজ দিয়ে দিচ্ছে। ভাষা বুঝতে পারছে না কিন্তু তার যে জায়নামাজ নাই নামাজ পড়ার জন্য সেজন্য নিজেরটা দিয়ে দিচ্ছে। অন্যরকম একটা ঐক্য কাজ করছে’।
সৌদি সরকার হজ ও ওমরাহ পালনকে নিয়মের মধ্যে আনার জন্যে অনেক কিছু অনলাইনে করার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। বিশেষ করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা মুবারক জিয়ারতকালে রিয়াজুল জান্নাহ নামক স্থানে প্রবেশে আগেভাগে অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। দেরিতে আবেদন করলে অনেক সময় রিয়াজুল জান্নাহয় প্রবেশের অনুমতি নাও মিলতে পারে। মহানবী (সা.) এর ঘরই তাঁর কবর। সেখান থেকে মিম্বর পর্যন্ত যে জায়গাটুকু আছে তাকে রিয়াজুল জান্নাহ বলা হয়। এছাড়াও, মক্কা ও মদীনা সফরকালে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক স্থান এবং নবীজী ও সাহাবীদের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাতেও অনেকে সফর করেন।