রোববার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৬ ১৪৩২   ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

মনের অসুখে ভোগার লক্ষণ

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:১২ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

শরীরের ভিতরে-বাইরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতেঙ্গে যেমন অসুখ হয়। তেমনিভাবে মনেরও অসুখ হয়। আর এ অসুখ মানুষের জীবনকে সবচেয়ে বেশি অসুখী করে তুলতে পারে।

পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সারা বিশ্বে প্রতি ১০ জনে একজন নিউরোসিস বা হাল্কা মাত্রার মানসিক রোগ এবং প্রতি ১০০ জনে একজন সাইকোসিস বা বড় মাপের মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

 

আর মানসিক গুণ হিসেবে এ রোগের অস্তিত্ব যেকোনো সচেতন মানুষের মনে ধরা দেয়। তবে কোন অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে সে বিষয়গুলো জানা থাকা জরুরি।

সিজোফ্রেনিয়া: জটিল এবং ভীষন কষ্টদায়ক মানসিক রোগ। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় ২০-৪০ বছর বয়সের যে কোনো সময়ে।

রোগের লক্ষণ
রোগী অহেতুক সবকিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখে যা পরিবারের নজরে সবার আগে আসে। এমন রোগীর মনে ধারণ করে যে কেউ তাকে খেয়াল করছে, কেউ চুপি চুপি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বা কেউ তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে। রোগী একপর্যায়ে ঘর ছেড়ে বাইর বের হয় না। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই এ জাতীয় কোনো লক্ষণ মনে আসলে বা কোরো মাঝে দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

এসব রোগীর মাঝে নানা ধরনের অসংলগ্ন আচরণ দেখা যায়। যেমন, অপরিচ্ছন্ন ভাবে চলাফেরা করা। তাগাদা না দিলে গোসল না করা, একই জামা কাপড়ে সপ্তাহ পার করে দেয়া এমনকি তা ছিঁড়ে না যাওয়া পর্যন্ত পড়ে থাকা। রাস্তা থেকে কুঁড়িয়ে পাওয়া কাগজ যত্ন সহকারে জমা রাখা, কেউ কেউ আবার হস্ত রেখা বা তাবিজ কবজ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।

রোগী এক পর্যায়ে গায়েবি কথা শুনে ও আমল করে। তারা বা আশপাশের লোকজন মনে করে যে তার উপর জিন ভর করেছে। বস্তুত এটা মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রাগত বিপর্যয়ের কারণ। মাত্র ১-২ মাসের অসুধ নিয়মিত খেলেই এই নিউরোট্রান্সমিটারের অসঙ্গতি ঠিক হয়ে যায়। আর গায়েবি কথাও বন্ধ হয়ে যায়।

রোগীর মধ্যে কিছু অদ্ভুত চিন্তা ভর করে। যেমন- তার সঙ্গে এক বা একাধিক জিন আছে যারা তার সঙ্গে কথা বলে। তাকে মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রেরন করা হয়েছে। রোগী স্বপ্নের মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা পেয়েছেন। তাকে বাহিরে থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। তার মনের কথা সবাই জেনে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ মনে করে চিন্তাগুলো তার নিজের নয় কেউ তাকে দিয়ে চিন্তাগুলো করাচ্ছে। আমেরিকা বা মঙ্গলগ্রহে বসে কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনে কোনো পরিশ্রমী মানুষ হঠাৎই অলস হয়ে পড়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলাফেরা শুরু করে। আর এসব সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ। এসব লক্ষণ কারো মাঝে দেখা দিলে বুঝতে হবে তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

আরো কিছু মানসিক রোগ আমাদের আশপাশে খেয়াল করলেই দেখতে পাওয়া যায়। যেমন-
মরবিড জেলাসী বা অথেলো সিনড্রোম
এটা হচ্ছে সন্দেহ বা বদ্ধমূল বিশ্বাস। পর পুরুষে আসক্ত ভেবে তারা স্ত্রীদের কঠোর অনুশাসনে রাখেন, মারধর ও গালিগালাজ করেন। বাহিরে গেলে স্ত্রীকে চোখে চোখে রাখেন। স্ত্রী শিক্ষিত হলে তার কলেজে বা চাকরিতে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মনের মাঝে নানা কুচিন্তা ভর করে। এমন কাউকে নিয়ে অনৈতিক চিন্তা করা হচ্ছে যা অত্যন্ত গর্হিত। যা ওই ব্যক্তি বুঝতে পারেন তারপরও বারবার এমন চিন্তা তার মাথায় আসে। ব্রেনের কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের ত্রুটির কারণে মাথায় এমন উদ্ভট কাজ করে।

বার বার হাত ধোয়া। বার বার গোসল করা। খেতে বসে প্লেট বার বার ধোয়া। শুতে গিয়ে দরজার ছিটকিনি বার বার দেখতে উঠা সবই ওসিডি। চিকিৎসা ছাড়া সেরে উঠা অসম্ভব।

মনের মাঝে হতাশা-নিরাশা-আনন্দহীনতা কাজ করে। বন্ধুদের সহচার্য এড়িয়ে চলে একা থাকতে পছন্দ করে। আমাদের চারপাশে প্রতি ১০ জনে এমন একজন খুঁজে পাওয়া যাবে।

মন খারাপ আবার মুর্হূতেই মন ভালো। আবার মুহূর্তেই মন খারাপ। ভয়ঙ্কর মানসিক রোগ। লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।

শরীর জ্বালাপোড়া দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা থাকে যা চিকিৎসায় সারে না। আসলে এ লক্ষণ সোমাটাইজেশন বা মানসিক সমস্যার শারীরিক বহির্প্রকাশ।

 

হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত রোগী নিজের অজান্তে অসুস্থতার ভান করে। যেকোনো ধরনের পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান খুঁজতে তারা এমনটা করে। এটা মেয়েদের বেলাতেই বেশি দেখা যায়। সাইকোথেরাপির সাহায্যে সম্পূর্ণ মুক্তি সম্ভব।