মঙ্গলবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৭ ১৪৩২   ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

চায়ের দোকানদার বিজয়দের দখলে বরগুনা পাসপোর্ট অফিস

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৬:৫৯ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বুধবার

বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। অফিসের সামনেই বিভিন্ন চায়ের দোকানে বিকল্প ‘অফিস’ খুলে বসেছেন দালালরা। পাসপোর্ট করতে এসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কেউ অফিস থেকে বের হলেই ‘সকল সমস্যার সমাধান’ করছেন এসব দালাল। অনেকে আবার অফিসে যাওয়ার আগেই পড়ছেন দালালদের হাতে।

সরেজমিনে পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় শতাধিক মানুষ আবেদন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কাজে বরগুনা পাসপোর্ট অফিসে আসেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনেকে সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করলেও পাসপোর্ট হাতে পেতে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।

এদিকে দালালদের মাধ্যমে কাজ না করলে দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট মিলবে না এমন তথ্য পেয়ে অনেক সেবাগ্রহীতা বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল মানুষ শুরুতেই জিম্মি হন দালালচক্রের হাতে। নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করলে দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়াসহ সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের থেকে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ঢাকা পোস্টের বরগুনা প্রতিনিধি পরিচয় গোপন করে পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে অবস্থান নেন পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে। এ সময় চায়ের দোকানে বসে থাকা পাসপোর্ট করতে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে পাসপোর্ট আবেদনের প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলতেই চায়ের দোকানের মালিক বিজয় নামের এক দালালচক্রের সদস্য বলেন, মাধ্যম ছাড়া দ্রুত পাসপোর্ট করতে পারবেন না। আমার লোক আছে, অফিস খরচ দিলে আমি আপনার কাজ করে দিতে পারব। এমনকি আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশনও আমরা করে দেব। আপনি শুধু ব্যাংকের নির্ধারিত টাকা এবং কাগজপত্র জমা দেবেন। এরপর একদিন অফিসে এসে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ দিলেই হবে। বাকি সব কাজ আমাদের। আপনি শুধু এসে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন।

ভোগান্তি ছাড়া দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট করতে কেমন খরচ হবে জানতে চাইলে দালালচক্রের সদস্য বিজয় বলেন, আবেদন করতে নির্ধারিত যেখানে যে খরচ তা আপনার হাতেই পরিশোধ করবেন। শুধু অফিস খরচের জন্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আমার কাছে জমা দেবেন। আপনার কাজ হয়ে যাবে।

নিয়ম মেনে পাসপোর্ট করতে আবেদন করেছেন বরগুনার পাথরঘাটা থেকে আসা তানিমুল ইসলাম। তবে তার বাবার নামে ভুল হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি। অফিস থেকে বের হয়েই দালালচক্রের সদস্য বিজয়কে বলেন এসব কথা। হাতে থাকা সকল কাগজপত্র দেখে সময় একটু বেশি প্রয়োজন হলেও সমাধান করে দিতে পারবেন বলে জানান বিজয়। তবে এর জন্য তাকে দিতে হবে ১১ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে তানিমুল ইসলাম বলেন, আমি নিয়ম মেনেই কাজ করতে চাই। দালালের মাধ্যমে কাজ করলে দ্রুত সমাধান হলেও আমি দালাল বিশ্বাস করি না।

বরগুনা সদর উপজেলার সাত নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়ন থেকে পাসপোর্ট করতে আসা আব্দুস সালাম বলেন, কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করেছি। তারাই সব কাজ করে দিয়েছে। পাসপোর্ট পেতে আমার কোনো ভোগান্তি হয়নি। সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। একদিন মাত্র এসে ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছি।

তবে কোন দোকান থেকে তার পাসপোর্টের কাজ করেছেন তা বলতে রাজি হননি আব্দুস সালাম।

বরগুনা পৌরসভার কালিবাড়ি এলাকার মোর্শেদ সুজন বলেন, পাসপোর্ট করতে মাধ্যম ধরে আবেদন করলে কোনো ভোগান্তি হয় না। আর নিয়ম অনুযায়ী করতে গেলে পাসপোর্ট পাওয়া গেলেও নানা অজুহাতে হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। ফলে বাধ্য হয়েই দালাল ধরতে হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মুনতাকীম মো. ইব্রাহিম বলেন, বরগুনায় আমি নতুন যোগদান করেছি। ইতোমধ্যে জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিশেষ করে অফিসে কর্মরতদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অফিসের বাইরে কেউ যদি কোনো অনিয়ম করে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে কথা হয় বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসের দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এরপরও যারা এ কাজে যুক্ত রয়েছে, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।