বুধবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৮ ১৪৩২   ০১ রবিউস সানি ১৪৪৭

কাজ শেষেও মজুরি পাননি ২০ হাজার শ্রমিক, মানবেতর জীবন

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৬:৩৯ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার

গাইবান্ধায় কাজ শেষেও মজুরি পাচ্ছেন না দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকরা। বিধি অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে তাদের মজুরি পাওয়ার কথা। কিন্তু ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ শেষ হলেও এখনো টাকা পাননি তারা। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা। জেলার সাত উপজেলায় এ কর্মসূচির আওতায় ২০ হাজার ৩৮৫ জন শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হতদরিদ্রদের জন্য সরকার কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় ৪০ দিনের মাটি কাটার প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্প শুরু হয় গতবছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। শেষ হয় চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। এ প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধা সদরে হতদরিদ্র তিন হাজার ৫৩১, সুন্দরগঞ্জে চার হাজার ৩৪২, সাদুল্লাপুরে দুই হাজার ৫০৫, পলাশবাড়ীতে এক হাজার ৮৬৩, গোবিন্দগঞ্জে চার হাজার ৫৩, সাঘাটায় দুই হাজার ৪৬৬ ও ফুলছড়িতে এক হাজার ৬২৫ জন শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করেন। বিধি অনুযায়ী দৈনিক কাজের বিনিময়ে সাধারণ শ্রমিক ৪০০ টাকা ও দলনেতারা পাবেন ৪৫০ টাকা।

জেলার সাত উপজেলার অন্তত ৪০ জন কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জাগো নিউজ। তারা জানান, কর্মসৃজন প্রকল্পে যারা কাজ করেছেন, প্রত্যেকেই দিন এনে দিন খান। তাদের কোনো সঞ্চয় নেই। দীর্ঘদিন ধরে টাকা না পাওয়ায় ধার-দেনা ও দোকানে বাকিতে সংসার চালাচ্ছেন তারা। ৪০ দিনের কাজ শেষে টাকা না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা বলছেন, আগে তাদের মাধ্যমে ব্যাংকে সাতদিন পরপর টাকা দেওয়া হতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ইএফটির মাধ্যমে শ্রমিকের মোবাইলে টাকা দেয় মন্ত্রণালয়। এতে তাদের করার কিছু নেই। শ্রমিকরা কবে টাকা পাবেন তা ঠিক বলতে পারছেন না তারা। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিক তালুক বেলকা গ্রামের বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, ‘হামার কাম নাই। এজন্যই তো সরকার মাটি কাটার কাজ দিছে। এবারকার সেই কাজ শেষও হইছে। কিন্তু এলাও (এখনো) ট্যাকা পাইনো না। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কেউ কবারে পায় না হামরা কোনদিন ট্যাকা (টাকা) পামো। ধার-দেনা করি আর কদ্দিন চলি। খুব কষ্টত আছি।’

রামডাকুয়া গ্রামের মশিউর রহমান বলেন, ‘মাটি কাটার টাকা আগো (আগে) সাতদিন পরপর দিছিল। তখনে (তখনই) হামার ভালো আছিল। তুলি নিয়ে খরচ কচ্ছিনো। যকনে থাকি (যেখানেই থাকি) মোবাইলোত টাকা দিবার ধরছে। তকনে থাকি (তখন থেকে) কাম শ্যাষ (শেষ) হওয়ার মেলা দিন (অনেকদিন) পর ট্যাকা দেয়। এবার ৪০ দিন মাটি কাটছি। এলাও ট্যাকা দেওয়ার কোনো খবর নাই।’

ফুলছড়ি উপজেলার কর্মসৃজনের শ্রমিক আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘অভাবি দিন কত কষ্ট করিয়া মাটি কাটনো টাকার আশাত (আশায়)। হামরা দিন আনি দিন খাওয়া মানুষ। ৪০ দিন কাম করিয়াও এলাও টাকা পাইনো না। সংসারটা চলাই কেমন করি?’

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের রিফাইতপুর গ্রামের রফিকা বেগম বলেন, ‘এবার একনাগাড়ে ৪০ দিন কাম করনো, হামাল (আমার) এলাও টাকা দিলনে (দিলো না)। এই টাকার আশায় মানুষের কাছে মেলা টাকা হাওলাত নিছি। টাকা পাইলে মানুষের হাওলাতও শোধ করনো হয়। আর বেটি জামাইক জিয়েপত দিয়ে পিঠে খাওয়াইনো হয়।’

বেলকা ইউনিয়নের মেম্বার রেজাউল আলম বলেন, ‘যারা কাজ করেছেন তারা সবাই হতদরিদ্র। দিনমজুরি করেই তাদের সংসার চলে। আগে তারা সাতদিন পরপর টাকা পেতেন। এবার ৪০ দিনের কাজ শেষ হলেও টাকা পাননি।’

দহবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মাসুদ রানা বলেন, ‘প্রতিদিন শ্রমিকরা আমাদের বাড়িতে আসে তাদের মজুরির টাকার খবর জানতে। আমরাতো ঠিকভাবে জানি না তারা কবে টাকা পাবেন। শ্রমিকদের অনেকেই এই টাকার আশায় ধার-দেনা করে সংসার খরচ চালিয়েছেন।’

জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা বিল করে অধিদপ্তরে পাঠাই। সেখান থেকে মন্ত্রণালয় হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ইএফটিয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো হয়। তবে শুধু আমার উপজেলা নয়, গাইবান্ধার কোনো উপজেলার শ্রমিকরাই টাকা পাননি।’

ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ‘কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের বিল অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগির শ্রমিকরা টাকা পাবেন।’