মন্ত্রীত্ব চায় নারায়ণগঞ্জবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:২৯ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০১৯ বুধবার
আবারো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতা আসলো। নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৩টিতে নৌকা ও ২টিতে লাঙ্গল প্রতীকে বিপুল ভোটে জিতলো মহাজোটের প্রার্থীরা।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই গঠন করা হবে মন্ত্রী সভা। আর সে কারণেই এবার আলোচনায় চলে এসেছে নারায়ণগঞ্জ। এবারও কী মন্ত্রীসভায় থাকবে নারায়ণগঞ্জ নাকি বাদ পড়বে সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
রাজধানী লগোয়া হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনীতির সূতিগার হিসেবে পরিচিত নারায়ণঞ্জ। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী (আওয়ামীলীগ) দলটির জন্মও এই নারায়ণগঞ্জে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষোট্টির ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সব খানেই ছিল এখানকার মানুষের জড়ালো অংশগ্রহণ। মোট কথা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার অবদান খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ফলে সব সরকারই রাজনৈতিক বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জকে গুরুত্বের সহিত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন। ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (আওয়ামীলীগ) সরকারের সময় (১৯৭৩ এর নির্বাচনে) এমপি হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের ভাষা সৈনিক একেএম সামসুজ্জোহা। সত্তর দশকের শেষের দিকে জিয়াউর রহমানের (বিএনপি) শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ থেকে এম এ সাত্তারকে পাটমন্ত্রী করা হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের এমপি ছিলেন। এম এ সাত্তারকে মন্ত্রী করার মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসী প্রথম মন্ত্রীত্বের স্বাদ পায়।
আশির দশকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের (জাতীয় পাটি) শাসনামলে সোনারগাঁয়ের আ ন ম বাহাউল হককে উপ-মন্ত্রীর পদমর্যায় জেলা পরিষদের চেয়াম্যান করা হয়। প্রথম উপমন্ত্রীও পেল নারায়ণগঞ্জবাসী। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর নারায়ণগঞ্জ থেকে আব্দুল মতিন চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। মতিন চৌধুরী রূপগঞ্জ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) করার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর মুখ উজ্জল হয়ে উঠে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসীর কপালে মন্ত্রী জোটেনি। ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তখন আব্দুল মতিন চৌধুরীকে পুনরায় বস্ত্রমন্ত্রী করা হয়। একই সাথে সোনারগাঁও আসন থেকে নির্বাচিত এমপি অধ্যাপক রেজাউল করিমকেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী করা হয়। একই জেলায় দুইজনকে মন্ত্রী করার কারণে আরেক ধাপ নারায়ণগঞ্জবাসীর মুখ উজ্জল হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে।
এবারও জেলার পাঁচটি আসনের চারটিতে আওয়ামীলীগ ও একটিতে তাদের শরিক জাতীয় পাটির এমপি নির্বাচিত হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসী মন্ত্রী পায়নি। মেয়াদ শেষে ২০১৪ সালের নির্বাচনে (যদিও এই নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে বির্তক রয়েছে) আবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ তিনটি ও তাদের শরিক জাতীয় পাটি দুটি আসনে এমপি নির্বাচিত হয়। কিন্তু এবারের মন্ত্রী সভায়ও নারায়ণগঞ্জ স্থান পায়নি।
মোটকথা রাজনৈতিক বিশ্লেষনে দেখা যায়, আওয়ামীলীগের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জবাসী বার বার বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামীলীগের কাছে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা বিএনপি-জাতীয় পাটির চেয়ে অনেক বেশি। কারণ আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে এ নারায়ণগঞ্জে। তাই তাদের কাছে এ জেলার মানুষ প্রত্যাশা করতেই পারে।
বিএনপির শাসনামলে নারায়ণগঞ্জকে রাজনৈতিকভাবে যতটা মূল্যায়ন করা হয়েছে আওয়ামীলীগ তার কিছু করেনি। এটা নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য দুঃখজনক। বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় এসে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন বাদ দিলে) তিনবারই নারায়ণগঞ্জ থেকে মন্ত্রী বানিয়েছে। আর আওয়ামীলীগ চারবার ক্ষমতায়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসীর ভাগ্যে মন্ত্রী জোটেনি।
আওয়ামীলীগের সবশেষ চলমান শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে ২০১৬ সালের ২১জুন এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। একই প্রজ্ঞাপনে ঢাকার দক্ষিন ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে।
