বুধবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৯ ১৪৩২   ০১ রবিউস সানি ১৪৪৭

রাজনীতিতে ‘আমেরিকা ফ্যাক্টর’

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:০৩ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার


সর্বত্র তুমুল আলোচনা : ভোটের পরের পরিস্থিতির প্রতি সবার দৃষ্টি


মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে -
হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ ইস্যুতে চুপসে গেছে। কয়দিন আগেও বাইডেন প্রশাসনের একের পর এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন যে ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা সে কথা ব্যক্ত করে গেছেন। এমন কি বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপের জন্যে ডোনাল্ড লু এবং পিটার হাস যৌথভাবে সাক্ষর করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। এত কিছুর পর এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় নীরব ভূমিকা নিয়ে রীতিমত প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এই নীরবতার বার্তা কী তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও তার সমর্থকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আদতে কিছুই করবে না। তবে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি নেতারা বলছেন, এই নীরবতার অর্থ হলো সামনে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। ঝড়ের পূর্বে যেমন গুমোট অবস্থা থাকে সেই রকম একটা পরিস্থিতি। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন ‘আমেরিকা ফ্যাক্টর’ বেশ জোরালো।
মার্কিন কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ আঁটলেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য বন্ধ নেই। বরং বাংলাদেশের নেতা-নেত্রীদের বক্তব্য অনেক সময় স্ববিরোধী মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মার্চে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হতে পারে। দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্য দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে তার দাবি। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে তিনি কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেননি। তবে এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি ইঙ্গিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রতিযোগিতা করে ঘোষণা দিচ্ছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না। এটার পক্ষে তারা নানা যুক্তি দেখাচ্ছেন।  
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দৃশ্যত আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে এখন তেমন কোনও সংশয় দেখা যাচ্ছে না। ভোট নির্ধারিত সময়েই হবে। তবে ভোটের পরে কী পরিস্থিতি হয় সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত থেকে বাইডেন প্রশাসনের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেন-দরবারের আলোচনায় যুক্ত একজন বাংলাদেশী কূটনীতিক আজকালকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যত কম কথা বলা যায় ততই মঙ্গল। তবে এই সময়ে সহিংস পরিস্থিতির উদ্ভব হয় কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। কেননা এখনই বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংস ঘটনা ঘটছে। বাসে আগুন কিংবা ট্রেনে নাশকতার ঘটনাকে মামুলি কাজ বলে অভিহিত করা যায় না। ফলে নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ রাখাটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, ভোটার উপস্থিতি বেশি হওয়াও জরুরী। ওই কূটনীতিক আরও বলেন, নির্বাচনটা গুনগত মানে ভাল হলে স্বস্তিদায়ক হবে।  
বিএনপি আশায় আশায় প্রহর গুনছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেবে যাতে সরকার বিএনপি’র দাবি মানতে বাধ্য হয়। এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কি এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্র আসলে কী করতে চাইছে? যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শ্রমমান ও শ্রম অধিকার, দুর্নীতি, মানব পাচার প্রভৃতি বিষয়ে তাদের দৃষ্টিতে অধিকার হরণ হলে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ১৬ নভেম্বর শ্রম বিষয়ক একটা মেমোরেন্ডাম ঘোষণা করেছেন। এর আওতায় বাণিজ্য কিংবা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া সম্ভব। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা দেবে কিনা, দিলে সেটা কবে দেবে সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানী বাংলাদেশের বিমান এয়ারলাইন্সের কাছে এয়ারক্রাফ্ট বিক্রি করতে চাইছে। বাংলাদেশ শর্ত দিয়েছে যে, ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করলে বিমান বোয়িং করপোরেশনের কাছ থেকে এয়ারক্রাফ্ট বিক্রির প্রস্তাব বিবেচনা করতে পারে। যদিও এটার সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রশ্ন জড়িত নয়। এটা একটা রুটিন কাজ। ইউরোপীয় এয়ারবাস কোম্পানী বাংলাদেশে এয়ারক্রাফট বিক্রি করতে চাইছে বিধায় বোয়িং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে এসেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চান। এমন অনেক দিক থেকে ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটন যুক্ত আছে। এই সময়ে কোনও কঠিন পদক্ষেপ নিলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরও অবণতি হবে। তবে ভোটের পরে আরও কিছু মানুষের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।        
এদিকে, নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের পরামর্শে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে নির্বাচন বিরোধী সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। জাতীয় পার্টি আসন বন্টনের জন্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। যদিও জাতীয় পার্টি তা অস্বীকার করেছে।